‘ জাহিদ হাসান নাইম।।
”সংস্কার, সেনা অভিযান ও চলমান রাজনীতি’ রাজনীবিষয়ক টক শো অনুষ্ঠিত হয়েছে। সোমবার (২৩ সেপ্টেম্বর) রাতে) কুমিল্লা আল নূর হসপিটালের সৌজন্যে দৈনিক আমাদের কুমিল্লা ও জনপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল কুমিল্লার জমিনের যৌথ উদ্যোগে এ টক শো অনুষ্ঠিত হয়। সাংবাদিক, সংগঠক ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক লেখক শাহাজাদা এমরানের সঞ্চালনায় টকশো তে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, সাবেক ছাত্র নেতা ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সহিদ উল্লাহ মিয়াজী ও কুমিল্লা মহানগর ছাত্রদলের সভাপতি ফখরুল ইসলাম মিঠু।
এ সময় টকশোতে দেশের এই সংকটকালীন সময়ে সংস্কার, সেনা অভিযান ও চলমান রাজনীতি নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা উঠে এসেছে।
আলোচনার এক পর্যায়ে, মোহাম্মদ সহিদউল্লাহ মিয়াজী বলেন, আন্দোলনে যারা শহীদ হয়েছেন তাদের রূহের মাগফিরাত কামনা করি, সহমর্মিতা জানাচ্ছি। হাজার হাজার শহীদের রক্তের বিনিময়ে বাংলাদেশ দ্বিতীয়বার স্বাধীন হয়েছে। গত ১৬ বছর ধরে শেখ হাসিনা অনবরত ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করে রেখেছিলো। তার দূর্নীতি, পরিবারতান্ত্রিকসহ দেশটাকে যেভাবে জিম্মী করে রেখেছিলো সবাই এই স্বৈরাচার সরকার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলো। ১৯৭১ আর চেতনা এই দুই দিয়েই দেশটাকে তারা জিম্মি করে রেখেছিলো। গত নির্বাচনের পর থেকেই আমার ধারণা হয়েছিলো শেখ হাসিনার পতনের সময় ঘনিয়ে এসেছিলো। বর্তমানে দেশে একটা অস্থিতিশীল অবস্থা বিরাজ করছে। শেখ হাসিনা যাওয়ার আগে দেশের রিজার্ভ শেষ করে দিয়েছিলো। এই অগোছালো অবস্থায় রাষ্ট্রকে পেয়েও ড. মুহাম্মদ ইউনূসের অন্তর্র্বতীকালীন সরকার তা কাটিয়ে উঠার চেষ্টা করছে। ইতিমধ্যেই রিজার্ভ সংকট কেটে উঠেছে। ইতিমধ্যেই বিএনপির পরিচয়ে কয়েকজন বিভিন্ন জায়গায় হামলা চালাচ্ছে, যদিও বিএনপির হাইকমান্ড থেকে সেটা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে। আর, দূর্বিত্তদের কোনো রাজনৈতিক পরিচয় থাকতে পারে না বলে আমি মনে করি। আর, বর্তমানে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কের যারা ছাত্র শিবির পরিচয় দিচ্ছে, তারা যদি কোনোভাবে বিগতদিনে ছাত্রলীগের সাথে সম্পৃক্ত থাকে, তাহলে আশা করি সে বিষয়ে তদারকি করতে হবে। আর, ছাত্রলীগের কেউ যদি ছাত্রশিবিরে প্রবেশ করে, তারাও ছাত্রশিবিরের নিয়ম কানুনগুলো মানতে গিয়ে নিজেদের সেই অসৎ উদ্দেশ্যকে ভুলে ছাত্র শিবিরকেই মনে প্রাণে ধারণ করে ফেলে। সাবেক স্বৈরাচারী সরকার পুরো দেশটাকেই তো শেষ করে ফেলেছে। সংস্কার করবে কি। বিচার কার্যালয়ের কথা বলতে গেলে সেটা ছিলো আওয়ামী বিচারবিভাগ। প্রথমত, এই বিচার বিভাগকে সংস্কার করতে হবে। আর, দ্বিতীয়ত শিক্ষা ব্যবস্থাকে সংস্কার করতে হবে। আওয়ামীলীগ সরকার শিক্ষা ব্যবস্থাকে একেবারে ধ্বংস করে দিয়ে গিয়েছে। আমাদের আস্থার জায়গা যখন সব শেষ হয়ে গিয়েছিলো, তখন সেবাবাহিনীর উপরই আমরা আস্থা রেখেছিলাম। এই দেশের সেনাবাহিনী জনগণের আস্থার জায়গাটা আরো শক্ত করেছে। দেশের সংকটাপন্ন সময়ে সেনাবাহিনীকে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেয়া ছাড়া আর কোনো উপায় ছিলো না। তবে, আশা করি তারা জনগণের আস্থার সেই জায়গটা রাখবে। আর অন্তর্র্বতীকালীন সরকারের উচিৎ রোহিঙ্গাদের নিয়ে কাজ করা। আর, অন্তর্র্বতীকালীন সরকারকে নির্বাচনের সে পরিস্থিতি সেটা তৈরী করতে কিছুটা সময় দিতে হবে। কারণ, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপার্সন তারেক রহমান কিংবা চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মামলাগুলোর কোনো প্রক্রিয়া এখনো হয় নি। তাই সব ঠিক করে নির্বাচনী পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে কিছুটা সময় লাগবে, সেই সময়টুকু অন্তর্র্বতীকালীন সরকারকে দিতে হবে। জামাত এবং বিএনপি এই দুইটি দল একসাথে আন্দোলন সংগ্রাম করেছে, তাই তারা যেন নিজেদের মধ্যে কাঁদাছোড়াছুড়ি না করে আগামীদিনগুলোতে একসাথে চলার আহবান জানাই।
ফখরুল ইসলাম মিঠু বলেন, যে ছাত্র আন্দোলনের মাধ্যমে আজকের স্বৈরাচার হাসিনার পতন হয়েছিলো, সেখানে যেসকল ছাত্র-জনতা নিহত হয়েছে তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাই। সকলের প্রতি আমাদের কৃতজ্ঞতা। আমরা প্রথমে ছাত্রদের আন্দোলনে ছাত্রদের সাথে ছাত্রদলদের সদস্যদের পাঠিয়ে দিই। পরে, আন্দোলনে আমরা সবাই একত্রে নেমে যাই। এর কারণে, মামলাসহ অনেক হয়রানীর শিকার হয়েছি। এক পর্যায়ে সেটা ছাত্রদের আন্দোলন ছিলো না, সেটা ছাত্র জনতার আন্দোলনে রূপ নিয়েছিলো। আমার বিরুদ্ধে হত্যা মামলাসহ ৩২ টি মামলা হয়েছে। হাসিনার স্বৈরতন্ত্র কায়েম করা দেশে সে যেকোনো মূহুর্তে পা পিছলিয়ে পড়ে যাবে, সেই অনুমান আমরা করে রেখেছিলাম। আমাদের মহাসচিব অন্তর্র্বতীকালীন সরকারের উপদেষ্টা ড. ইউনূস স্যারকে বলেছেন দেশের অস্থিতিশীল অবস্থাকে ঠিক করতে জাতীয়তাবাদী দল সবসময় পাশে আছে। এই দেশে কোনো আন্দোলন অহিংসভাবে কোনো আন্দোলন সফল হয় নি। আমাদের বোনেরা মাঠে গিয়েছিলো সহিংস হতে নয়, তাদের মুখের ভাষা দিয়ে প্রতিবাদ জানাতে গিয়েছিলো। কিন্তু, তাদেরকে বেধড়ক মেরেছিলো। তাই আমরা আর থেমে থাকতে পারি নি। আমাদেরকে কেন্দ্র থেকে সিদ্ধান্ত দিয়েছিলো ‘ডু অর ডাই’। ৪ আগষ্ট আমরা মাঠে নেমে যাই পুরোদমে। আমরা গিয়েছিলাম এই ধারণা নিয়ে, হয় আন্দোলনে সফল হয়ে ফিরবো, নয়তো দেশ ত্যাগ করে চলে যাবো। আর তখন আন্দোলনে শিবির, গণঅধিকার পরিষদের নেতাদের সঙ্গে সমন্বয় করেই আমরা আন্দোলন চালিয়ে গিয়েছিলাম। পরে সেনাবাহিনীকে আমরা অনুরোধ করেছিলাম আমাদের ছাত্রভাইদের বাঁচাতে। পরে সেনাবাহিনী ছাত্রদের বাঁচায় সেদিন। সেনাবাহিনী না আসলে আমাদের সেদিন কি অবস্থা হতো সবাই জানে। ছাত্রলীগের এত অস্ত্রের কাছে আমাদের ইট, লাঠি টিকতে পারতোনা সেদিন। আর, ছাত্রদলের নাম ভাঙ্গিয়ে কেউ যদি চাঁদাবাজি করে তাদের নামে কোনো প্রমাণ পেলে আমরা সাথে সাথে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবো। কোনো ব্যক্তির জন্য সংগঠনের নাম খারাপ হতে দেওয়া যাবে না। বিগত ১৫ বছরে স্বৈরাচারীদের এমন প্রভাব দেশে পড়েছিলো যেখানে এমন কোনো সেক্টর নেই সেখানে স্বৈরতন্ত্রের প্রভাব পড়েনি। তাই, সব সেক্টরকেই সংস্কার করতে হবে, তবে সেটা ১/২ দিনে হবে না, কিছুটা সময় দিতে হবে। সংস্কার অবশ্যই হবে, তবে সেটা সময় নিয়ে দ্রুত গতিতেই হবে অন্তর্র্বতীকালীন সরকারের নেতৃত্বে। আর, সেনাবাহিনীর প্রতি আমরা আস্থা রেখেছিলাম। তারা সেই আস্থা রেখেছিলো। সেনাবাহিনীকে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেয়াকে আমি সুনজরেই দেখছি। পুলিশ বাহিনীর অনুপস্থিতিতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিকে ঠিক রাখতে সেনাবাহিনীকে মাঠে থাকাকে আমি সাধুবাদ জানাই। দেশের রাজনৈতিকদলগুলোর নেতৃবৃন্দের সাথে আলোচনা করে দেশের মানুষের জন্য একটি সুন্দর নির্বাচনী পরিবেশ তৈরি করার পর যেন নির্বাচনের আয়োজন করেন অন্তর্র্বতীকালীন সরকার।