সর্বশেষ গত ২৩ আগস্ট রাতে গোমতীর বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয় বুড়িচং উপজেলাসহ আরও কিছু এলাকা। এ বন্যায় শুধু প্রাণহানি নয়, ক্ষতি হয়ছে হাজার হাজার কোটি টাকার অবকাঠামো ও ফসল। নদী নিয়ে গবেষণা করা বেসরকারি প্রতিষ্ঠান রিভার অ্যান্ড ডেলটা রিসার্চ সেন্টার (আরডিআরসি) বলছে, বাঁধ নির্মাণে নানা ত্রুটি, কর্মকর্তাদের দুর্নীতি ও মাঠ পর্যায়ে যথাযথ তদারকি না থাকায় বারবার বাঁধ ভেঙে যাচ্ছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) বলছে, বাঁধে অবৈধ দখল, বনায়নের অভাব, অবাধে মাটিবাহী ট্রাক্টর চলাচল ও ভারত থেকে আসা পানির অধিক চাপের কারণে বাঁধ ভেঙে যায়।
তবে আরডিআরসি চেয়ারম্যান মোহাম্মদ এজাজ বলেন, আমরা গবেষণায় দেখেছি, নির্মাণ নকশায় ত্রুটি, মাঠ পর্যায়ে তদারকি না থাকা এবং দুর্নীতির কারণে টেকসই বাঁধ নির্মাণ করায় বর্ষায় বাঁধ ভেঙে হাজার হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হচ্ছে। মাটি ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের একটি চক্র আছে, যাদের সঙ্গে পাউবো কর্মকর্তাদের গোপন আঁতাত আছে। আমাদের কাছে তথ্য আছে, বাঁধ ভাঙার পর পাউবোর দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে যাচ্ছেন না। কারণ বাঁধ ভাঙলে টেন্ডার করে আবার পয়সা কামানো যায়।
২০২১ সালে ২৮৮ কোটি ৭০ লাখ টাকা ব্যয়ে গোমতী খনন প্রকল্পটি জানুয়ারি ২০২২ থেকে জুন ২০২৫ মেয়াদে বাস্তবায়নের জন্য পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়। পরে প্রকল্প ব্যয় ৬৪ কোটি ৩০ লাখ টাকা বাড়িয়ে মোট ব্যয় ধরা হয় ৩৫৩ কোটি টাকা। প্রকল্পটি জুলাই ২০২৩ থেকে জুন ২০২৬ মেয়াদে বাস্তবায়নের প্রস্তাব ছিল।
একাধিক সূত্র জানায়, প্রকল্প চূড়ান্ত অনুমোদনের আগেই ফের ৬৪ কোটি টাকা বেশি ব্যয় ধরা নিয়ে সে সময় সমালোচনার মুখে পড়ে সরকার। পরে আর প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়নি। এখন আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বর্তমানে প্রকল্পটি আদৌ আলোর মুখ দেখবে কিনা, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। সঙ্গে রয়েছে বাঁধ রক্ষণাবেক্ষণে অর্থ বরাদ্দে স্বল্পতা।
বনায়ন নিয়ে পাউবো ও বন বিভাগের ভিন্নমত
গোমতীর ৮০ কিলোমিটারের বাঁধে মাত্র ১২ কিলোমিটারে পরিকল্পিত বনায়ন রয়েছে। বাকি অংশে স্থানীয়রা যে যার ইচ্ছামতো গাছ লাগিয়েছেন।
পাউবো কর্মকর্তারা বলেন, সম্প্রতি অবসরে যাওয়া এক সচিবের অতি উৎসাহে বাঁধে বনায়নের অনুমতি দেওয়া হয়। পুরো বাঁধ এলাকায় স্থানীয়রা অনুমতি ছাড়াই লাখ লাখ গাছ রোপণ করে রেখেছে। তবে বিভাগীয় বন কর্মকর্তা জি এম মোহাম্মদ কবির বলেন, সরকারের অনুমতি সাপেক্ষে এবং পাউবোর সঙ্গে চুক্তি করেই বিভিন্ন শর্তে বাঁধে বনায়ন করা হয়েছে। এর মধ্যে ২০২১-২২ অর্থবছরে ৪ কিলোমিটার এবং ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৮ কিলোমিটার বনায়ন করা হয়। বন বিভাগের লাগানো গাছ এখনও ছোট। বনায়নে বাঁধ ভেঙে যাওয়ার ঝুঁকি আছে– এ তথ্যের বৈজ্ঞানিক কোনো ব্যাখ্যা আমার জানা নেই।
পাউবো কুমিল্লার নির্বাহী প্রকৌশলী খান মোহাম্মদ অলিউজ্জামান জানান, বাঁধে বনায়ন, অবৈধ দখল এবং মাটিবাহী ভারী যানবাহন চলাচল ঠেকানো যাচ্ছে না। বাঁধে হাজার হাজার অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে পর্যাপ্ত জনবল নেই, সময় মতো পুলিশ চেয়েও পাওয়া যায় না।
বিআইডব্লিউটিএ’র জনসংযোগ কর্মকর্তা আবু ছালেহ মোহাম্মদ এহতেশামুল পারভেজ সমকালকে বলেন, ‘গোমতী খনন প্রকল্প একাধিকবার পরিকল্পনা কমিশনে উপস্থাপন করা হলেও অনুমোদন মিলেনি। এটির অনুমোদন কখন মিলবে কিংবা আদৌ মিলবে কিনা এ তথ্য আমাদের জানা নেই।’ সমকাল