কুমিল্লার লালমাইয়ে জুতা পায়ে ৭১’র শহীদদের গণকবরে ইউএনও! সর্বত্র ক্ষোভ

ইউএনওকে প্রত্যাহার দাবি মুক্তিযোদ্ধাদের
স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশ: ১ বছর আগে

কুমিল্লার লালমাই উপজেলার মুক্তিযোদ্ধা শহীদদের গণকবরে শ্রদ্ধা জানাতে গিয়ে জুতা পায়ে প্রবেশ করেছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার। ইউএনও জুতা পায়ে শহিদদের গণকবরে উঠেছেন এমন বেশ কয়েকটি ছবি মুহুর্তের মধ্যেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়ে যায়। এরপরই শুরু হয় সর্বত্র সমালোচনা। ক্ষোভে বিক্ষুদ্ধ হয়ে উঠছেন বীর মুক্তিযোদ্ধারাও। স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা মুক্তিযোদ্ধাদের অবমাননাকারি এই এই নির্বাহী অফিসারকে দ্রুত লালমাই থেকে প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছেন।

তবে লালমাই উপজেলার ইউএনও মো. ফোরকান এলাহি অনুপম জানান, তিনি জুতা পায়ে স্মৃতিফলকের পাশে ছিলেন। যদিও ছবিতে চারদিকে বেষ্টনী দেওয়া গণকবরের ভেতরে ইউএনওকে জুতা পায়ে দেখা গেছে এবং তিনি পুস্তস্তবক দিয়ে শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন।

জানা যায়, ২৫ মার্চ শনিবার বিকেলে শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের সমাধিস্থল লালমাই উপজেলার ‘হাড়াতলি স্মৃতিফলকে’ মোমবাতি প্রজ্বালন করতে যান ইউএনও মো. ফোরকান এলাহি অনুপম, উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) নাছরীন আক্তারসহ উপজেলার কয়েকজন কর্মকর্তা, পুলিশের একটি দল ও স্থানীয় বেলঘর উত্তর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল মালেক। এরপর উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে স্মৃতিফলকে শহীদদের ফুলেল শ্রদ্ধা জানায় উপজেলা প্রশাসন। শ্রদ্ধা জানানোর সময় ইউএনও এবং ইউপি চেয়ারম্যানসহ অন্যদের পায়ে জুতা ছিল। বিষয়টি জানাজানি হলে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সাধারণ মানুষের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়।

এদিকে ২৫ মার্চ রাত ৮টা ৫৪ মিনিটে ‘ইউএনও লালমাই কুমিল্লা’ নামীয় ফেসবুক আইডিতে ইউএনও নিজেই কয়েকটি ছবি পোস্ট করেন। একটি ছবিতে দেখা যায়, গণকবরের বেষ্টনীতে প্রবেশ করে জুতা পায়ে ইউএনওসহ অন্যরা পুষ্পস্তবক অর্পণ করছেন। আরেকটি ছবিতে দেখা যায়, মোমবাতি প্রজ্বালনের সময় তারা জুতা পায়ে দাঁড়িয়ে আছেন। পরে ছবিগুলো রাতেই ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে।

এ ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে লালমাই উপজেলার আলীশ্বর গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা দ্বীন মোহাম্মদ বলেন, এখন বীর মুক্তিযোদ্ধাদের অপমান করলে কোনো বিচার হয় না। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ডেকে নিয়ে স্কুলের বাচ্চাদের মতো বেঞ্চে বসিয়ে রাখে আর রাজাকারের ছেলেরা মঞ্চে বসে কথা বলে। বঙ্গবন্ধুর কন্যা ছাড়া আর কেউ মুক্তিযোদ্ধাদের হৃদয় থেকে বোঝে না। জুতা নিয়ে গণকবরে প্রবেশের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।

কুমিল্লা জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা সফিউল আহমেদ বাবুল বলেন, যারা হাড়াতলি গণকবরে জুতা নিয়ে প্রবেশ করেছেন তারা স্বাধীনতাযুদ্ধের বীর শহীদদের অপমান করেছেন। তদন্ত করে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে কুমিল্লা জেলা প্রশাসকের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

লালমাই উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল মালেক এ বিষয়ে বলেন, গণকবরে জুতা নিয়ে প্রবেশ করে ইউএনও বীর শহীদদের অপমান করেছেন। এটা মেনে নেওয়া যায় না। সেখানে আমারও যাওয়ার কথা ছিল। শরীর অসুস্থ থাকায় শ্রদ্ধা জানাতে যেতে পারিনি। বিষয়টি দুঃখজনক।

রবিবার বিকেলে এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. ফোরকান এলাহি অনুপম বলেন, আমি ভুল করিনি। জুতা পরে স্মৃতিস্তম্ভের পাশে দাঁড়িয়েছি, এতে কোনো সমস্যা নেই। আর আমি মুক্তিযোদ্ধাদের সব সময় সম্মান করি। এখনো মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে আছি। এগুলো অপপ্রচার করা

হচ্ছে আমার বিরুদ্ধে।
বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে কুমিল্লা জেলা প্রশ্সাক মোহাম্মদ শামীম আলম বলেন,লালমাই উপজেলার ইউএনও জুতা পায়ে শহিদদের গণকবরে গিয়েছেন কিনা বিষয়টি আমি এখনো জানি না। এই মাত্র শুনলাম। খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করব।