কুমিল্লার সদর দক্ষিণে জিয়া মঞ্চ নেতার পরিচয় দিয়ে প্রবাসীর কাছে চাঁদা দাবি ও জমি দখলের অভিযোগ

স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশ: ২ মাস আগে
চাঁদা দাবি করে দখলকৃত জমি ও ইনসেটে অভিযুক্ত জিয়া মঞ্চ নেতা সৈয়দ ফজলে রাজিব।

কুমিল্লার সদর দক্ষিণে জিয়া মঞ্চ নেতার পরিচয় দিয়ে এক প্রবাসীর কাছে চাঁদা দাবি ও চাঁদা না দিলে জমি দখল করবে এমন অভিযোগ উঠেছে। উপজেলার লালবাগ এলাকায় এই ঘটনা ঘটে। ঐ এলাকার বাসিন্দা ও ভুক্তভোগী সৈয়দ আবদুল আলিম গণমাধ্যমের কাছে এই অভিযোগ করেছেন। অভিযুক্তরা হলেন, একই এলাকার বাসিন্দা সৈয়দ ফেরদৌসের ছেলে সৈয়দ ফজলে রাব্বি রাজিব ও সৈয়দ ফজলে জাকির৷

ভুক্তভোগী সৈয়দ আবদুল আলিম জানান, সৈয়দ ফজলে রাব্বি রাজিব ও সৈয়দ ফজলে জাকির ও তাদের পরিবার দীর্ঘদিন ধরে ভুক্তভোগীদের ক্রয়কৃত জায়গা দখল করে রেখেছিলো। অভিযুক্তদের বাবা সৈয়দ ফেরদৌস আওয়ামী রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত থাকায় অভিযুক্তরা এই প্রভাব খাটান বলে দাবি ভুক্তভোগী আব্দুল আলিমের। তিনি বলেন, আগে বাবা আওয়ামী রাজনীতি করতো বিধায় সেই ক্ষমতায় জায়গা দখল করে রেখেছিলো। এখন তারা দুই ভাই জিয়া মঞ্চের পরিচয় দিয়ে আমাদের কাছে চাঁদা দাবি করেন। নতুবা তারা আমাদেরকে ক্রয়-কৃত জায়গা দখল করে রাখবেন বলে জানান। এছাড়াও তারা আমাদের নামে আদালতে মিথ্যা মামলা ও করে রেখেছে। আমরা আমাদের জায়গায় আমাদের গাছ কেটেছি কিন্তু তারা এটা তাদের গাছ এবং তাদের জায়গা বলে দাবি করে৷ আমরা আমাদের জায়গায় দেওয়াল দিয়েছি কিন্তু তারা সেই দেওয়ালও ভেঙে দিয়েছে রাতে। আমরা যতবার নির্মাণ করেছি ততোবারই তারা সেটা ভেঙে দিয়েছে।

ভুক্তভোগী আব্দুল আলিম আরো বলেন, রাজিব ও জাকির এই জায়গা যে তাদের সেটা তারা কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেনি এখন পর্যন্ত৷ কিন্তু আমাদের কাছে জায়গার সুনির্দিষ্ট দলিল রয়েছে। আমরা প্রবাসে থাকি। এই সুযোগে তারা আমাদের জায়গা দখল করে রেখেছে। আগে আওয়ামী লীগের প্রভাব খাটিয়ে করেছে এখন বিএনপি’র প্রভাব দেখাচ্ছে। আমরা কোথায় যাব। আমরা এর সুষ্ঠু বিচার চাই।

এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অভিযুক্ত সৈয়দ ফজলে রাজিব জিয়া মঞ্চ কুমিল্লা মহানগর আহবায়ক কমিটির সদস্য সচিব পদে রয়েছে।

তবে, অভিযোগের বিষয়ে অস্বীকার করে অভিযুক্ত সৈয়দ ফজলে রাব্বি রাজিব এই প্রতিবেদককে মুঠোফোনে বলেন, আমার বিরুদ্ধে করা অভিযোগগুলো সম্পূর্ণ মিথ্যা৷ আমি জিয়া মঞ্চ সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত সেটা সত্য, কিন্তু যুবদল করি না। আমার বিরুদ্ধে যে চাঁদাবাজির অভিযোগ করা হয়েছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা। তারা নিজেরাই আমাদের জায়গা দখল করতে চায়। এ জায়গা নিয়ে আদালতের মামলা চলমান রয়েছে। আদালতের রায় ও আমরা পেয়েছি। কিন্তু তারা রাতের আঁধারে এসে আমাদের গাছ কেটে নিয়ে গেছে এবং দেওয়াল করেছে। আমি এর তীব্র নিন্দা জানাই।

এছাড়াও, অভিযোগের বিষয়ে অভিযুক্ত সৈয়দ রাজিব’কে মুঠোফোনে এই প্রতিবেদক জানতে চাইলে তিনি প্রতিবেদককে হুমকি দিয়ে বলেন, আপনি যদি আমার নামে মিথ্যা নিউজ করেন, তাহলে আপনার বিরুদ্ধে সাংবাদিক সম্মেলন করবো আমি।

আরেক অভিযুক্ত সৈয়দ ফজলে জাকির বলেন, আমি প্রবাসে থাকি আমি চাঁদাবাজি করবো কেন। আমি ছুটিতে বাড়িতে এসেছি। অভিযোগগুলোর সম্পূর্ণ মিথ্যা। আমি যুবদল কিংবা জিয়া মঞ্চ এমন কোন রাজনীতির সঙ্গেও জড়িত নয়।

এদিকে, সম্পত্তি নিয়ে বিরোধের জেরে দখল চেষ্টার অভিযোগে সৈয়দ আব্দুল আলীমের ভাই সৈয়দ বেল্লাল হোসেন সদর দক্ষিণ থানায় করা এক অভিযোগে উল্লেখ করেন, গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর সকালের দিকে তাদের ক্রয়কৃত সম্পত্তিতে জোরপূর্বক দখল ও রাস্তা বন্ধ করার চেষ্টা চালায় সৈয়দ ফেরদৌস (৬০) ও তার ছেলে সৈয়দ ফজলে রাব্বি রাজিব (৪০)। অভিযোগ পত্রে তারা উল্লেখ করেন, অভিযুক্তরা আগে থেকেই তাদের ক্রয়কৃত সম্পত্তি নিজেদের বলে দাবি করে আসছে এবং চলাচলের রাস্তায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে অভিযোগে আরও বলা হয়, অভিযুক্তরা দেশীয় অস্ত্র নিয়ে ভয়ভীতি প্রদর্শন করেন এবং সম্পত্তি থেকে উচ্ছেদের হুমকি দেন।

ভুক্তভোগী বেলাল হোসেন বলেন, “আমরা চার ভাইয়ের মধ্যে তিনজন প্রবাসে আছেন। এই সুযোগে অভিযুক্ত সৈয়দ ফেরদৌস ও সৈয়দ রাজিব আমাদের জায়গা দখলের চেষ্টা করছেন। স্থানীয়দের দিয়ে বিষয়টি সমাধান করতে চাইলেও বিবাদীরা তা মানেননি। তারা আমাদের চলাচলের রাস্তায় টিনের বেড়া দিয়ে বাধা দিয়েছে এবং গালমন্দ করে মারধরের হুমকি দিয়েছে৷”

এ বিষয়ে স্থানীয় বেশ কয়েকজন বলেন, এই জায়গা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছে। সামাজিকভাবে মীমাংসার চেষ্টা করা হলেও অভিযুক্তরা কোন নিয়ম-নীতি মানছেন না। আমরা চাই এ জায়গার দ্রুত মীমাংসা হোক এবং জায়গার মালিকরা জায়গা বুঝে পাক।

এই বিষয়ে জানতে চাইলে সদর দক্ষিণ মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ রফিকুল ইসলাম বলেন, “আমরা উভয় পক্ষের লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”