# জোট ভিত্তিক নির্বাচন হলে ৪টি আসনে ভাগ্য বিপর্যয় ঘটবে বিএনপির প্রার্থীদের#
# ২টি আসনে চলছে হিসাব নিকাশ
ক্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ডিসেম্বর ২০২৫ হবে, না জুন ২০২৬ এর মধ্যে হবে বা আদৌ এই সময়ে নির্বাচন হবে কি না এই নিয়ে দেশজুড়ে আলোচনা তুঙ্গে থাকলেও প্রার্থী বাছাইয়ে বসে নেই দেশের অন্যতম প্রধান জনপ্রিয় রাজনৈতিক দল বিএনপি।
ইতিমধ্যে পরীক্ষার প্রশ্নপত্রের সেটের মতো ক.খ ও গ এমন তিনটি সেটের খসড়া সম্পন্ন করে ফেলেছে আগামীতে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় যাওয়ার অন্যতম দাবিদার এই দলটি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের একাধিক নেতা ও সম্ভাব্য প্রার্থীদের খসড়া তালিকা প্রস্তুতকারীদের সাথে কথা বলে এ তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে।
আবার সূত্রটি এটিও জানিয়েছেন, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর দলীয় মনোনয়নবোর্ড শেষ মুহুর্তেও প্রার্থী তালিকা রদ বদলের ক্ষমতা সংরক্ষণ করেন।
দেশের বৃহত্তম ও প্রাচীন জেলাগুলোর মধ্যে অন্যতম কুমিল্লার ১১টি সংসদীয় আসনে দলটি সম্ভাব্য প্রার্থীদের ৩টি তালিকা সম্পন্ন করেছে। এর মধ্যে বিএনপি ৫টি সংসদীয় আসনের প্রার্থী খসড়া তালিকায় চুড়ান্ত করে চুড়ান্ত প্রার্থীদের অনানুষ্ঠানিক ভাবে সবুজ সংকেত দিয়ে দিয়েছে। যাতে উপজেলা বিএনপির কমিটি গুলো যেন দলীয় প্রার্থীদের সাথে আলোচনা করে দিতে পারে জেলা কমিটি।
সূত্র জানায়, খসড়া তালিকার ক সেটের চুড়ান্ত করা প্রার্থীরা হলো, কুমিল্লা-১(দাউদকান্দি-তিতাস) সংসদীয় আসনে ড.খন্দকার মোশারফ হোসেন, কুমিল্লা-৩(মুরাদনগর) আলহাজ¦ শাহ মোফাজ্জল হোসাইন কায়কোবাদ,কুমিল্লা-৬( সিটি কর্পোরেশন-আদর্শ সদর) হাজী আমিন উর রশীদ ইয়াছিন,কুমিল্লা-৮(বরুড়া) জাকারিয়া তাহের সুমন ও কুমিল্লা -১০(নাঙ্গলকোট-সদর দক্ষিণ-লালমাই) মনিরুল হক চৌধুরী।
তবে এর মধ্যে কুমিল্লা ৩ মুরাদনগরে এনসিপির সাথে জোট হলে সেই ক্ষেত্রে কপাল পুড়তে পারে সাবেক মন্ত্রী,এমপি ,দলের কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান ও জনপ্রিয় নেতা আলহাজ¦
শাহ মোফাজ্জল হোসাইন কায়কোবাদের। এ ক্ষেত্রে মনোনয়ন পেতে পারেন উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ ভুইয়া সজিব।তিনি এনসিপি থেকে নির্বাচন করতে পারেন বলে জানা গেছে।
খসড়া তালিকায় চুড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রস্তুত না করা অপর ৬টি সংসদীয় আসনের মধ্যে কুমিল্লা-২(হোমনা-মেঘনা) আসনে এখানে বিএনপির কুমিল্লা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ সেলিম ভূইয়া ও কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মারুফ হোসেনের মধ্যে যে কেউ একজন মনোনয়ন পেতে পারেন বলে ধারণা পাওয়া গেছে।
কুমিল্লা-৪ (দেবিদ্বার) এ বিএনপির সাথে এনসিপির জোট হলে এখানেও বিএনপির প্রার্থীর ভাগ্য বিপর্যয় ঘটতে পারে। এ ক্ষেত্রে এনসিপির হাসনাত আবদুল্লাহ তাদের দলীয় প্রার্থী হবেন। তিনি ৫ আগস্টের পর থেকেই এলাকায় নিয়মিত গণসংযোগ করে যাচ্ছেন।
কুমিল্লা-৫( বুড়িচং-ব্রাহ্মনপাড়া) এ এখন পর্যন্ত এই আসনে এনসিপি কিংবা জামায়াত ইসলামীর শক্তিশালী প্রার্থী না থাকলেও নিয়মিত গণসংযোগ করে যাচ্ছেন জামায়াতের ড. মোবারক হোসেন। এই আসনে বিএনপির খসড়া তালিকায় ব্রাহ্মনপাড়া উপজেলা বিএনপির আহবায়ক হাজী জসিম উদ্দিন ও বুড়িচং উপজেলা বিএনপির আহবায়ক এটিএম মিজান চেয়ারম্যানের নাম রয়েছে।
সূত্র জানিয়েছেন, এই দুই জনের যে কোন একজন দলীয় মনোনয়ন পেতে পারেন। আবার আরেকটি সূত্র ইঙ্গিত দিয়েছেন, প্রধান উপদেষ্টা ড. মোহাম্মদ ইউনুসের আইনজীবী ব্যারিস্টার আবদুল্লাহ আল মামুন শেষ মুহুর্তে এনসিপির টিকেট নিয়ে আসারও সম্ভাবনা রয়েছে। সেই ক্ষেত্রে এই আসনেও এনসিপি বিএনপির হাই কমান্ডের সাথে একটি দরকশাকশির সুযোগ করে নিতে পারেন। একেবারে শেষ মুহুর্ত ছাড়া এই আসন সম্পর্কে শেষ কথা বলা যাবে না বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট সূত্র।
কুমিল্লা-৭( চান্দিনা) এই আসনে বিএনপির সাথে এলডিপির জোট হলে জোটের প্রার্থী হবেন সাবেক বিএনপি নেতা, সাবেক এমপি-মন্ত্রী ও এলডিপির কেন্দ্রীয় মহাসচিব ড. এড. রেদোয়ান আহমেদ।এখানে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে জোটের প্রার্থী হিসেবে রেদোয়ান আহমেদকে দেখলে অবাক হওয়ার কিছুই নেই বলে জানিয়েছেন সূত্র।
কুমিল্লা-৯( লাকসাম-মনোহরগঞ্জ) এই আসনে হাই কমান্ডের নির্দেশে কেন্দ্রীয় বিএনপির শিল্প বিষয়ক সম্পাদক ও লাকসাম উপজেলা বিএনপির আহবায়ক আবুল কালামের নেতৃত্বে দলের সকল পর্যায়ের কমিটি দিলেও ক্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রর্থী হিসেবে খসড়া তালিকায় এখনো চুড়ান্ত করেনি আবুল কালাম ওরফে চৈতী কালামের নাম। এখানে প্রতিটি জড়িপেই এক নম্বরে উঠে এসেছে সাবেক এমপি ও কেন্দ্রীয় বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক কর্নেল(অব.) এম আনোয়ারুল আজিমের নাম।
সুতরাং এখানে আবুল কালাম নাকি কর্নেল আজিম কে মনোনয়ন পাবেন এজন্য আরো কিছু দিন নির্বাচনী এলাকায় কাজ করতে হবে জরিপকারীদের, জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট বিস্বস্ত সূত্র। তবে আবুল কালাম দিন দিন উন্নয়ন করছেন এ তথ্যও উঠে এসেছে জরিপে।
কুমিল্লা-১১(চৌদ্দগ্রাম) : এই সংসদীয় আসনে বাংলাদেশ জামায়াত ইসলামীর সাথে বিএনপির জোট হলে জোটের মনোনয়ন পাবেন বাংলাদেশ জামায়াত ইসলামীর কেন্দ্রীয় নায়েবে আমীর ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের। আর জোট না হলে চৌদ্দগ্রাম উপজেলা বিএনপির আহবায়ক কামরুল হুদা পেতে পারেন দলীয় মনোনয়ন। তবে এখানে বিএনপি বিকল্প প্রার্থীর অনুসন্ধ্যানও করতেছে বলে জানা গেছে। তবে জোট না হলে বিএনপি থেকে যাকেই মনোনয়ন দেওয়া হোক না কেন, তাকে মোকাবেলা করতে হবে জামায়াতের শক্তিশালী প্রার্থী ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহেরকে।
এদিকে এ বিষয়ে জানতে চাইলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক প্রভাবশালী সদস্য এই প্রতিবেদককে বলেন, আপনি শুনছেন শুধু কুমিল্লারটা।
আমিতো শুনতেছি সারা বাংলাদেশের তিনশ আসনের কথা। বিএনপি একটি নির্বাচনমুখি গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল। বড় দল হিসেবে আমাদের তিন সেট না নির্বাচন করার মতো দশ সেট প্রার্থী রয়েছে। দলের নির্বাচন পরিচালনা বোর্ড যে দিন যাকে প্রার্থী করবে ঠিক সেই দিনই জানা যাবে সত্যিকার অর্থে কারা বিএনপির চূড়ান্ত দলীয় প্রার্থী। এর বেশি তিনি আর কিছু বলতে রাজি হননি।