কুমিল্লায় গৃহকর্মী নির্যাতনের মামলার দাম উঠেছে ৫ লাখ

স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশ: ১ বছর আগে

গৃহকর্মীকে নির্যাতন করে গরম পানি ঢেলে শরীর ঝলসে দেয়ার মামলায় কারাগারে আছেন গৃহকত্রী তাহমিনা তুহিন। এ ঘটনায় দেশজুড়ে চলে আলোচনা সমালোচনা। কিন্তু এর ফাঁকেই মামলা তুলে নিতে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত দাম হাঁকাচ্ছেন ওই নারীর স্বজনরা। এমন অভিযোগ করেছেন আহত গৃহকর্মীর মামা হাফেজ ইব্রাহিম খলিল।
মুঠোফোনে কথোপকথনের একপর্যায়ে এসব তথ্য জানিয়েছেন আহত গৃহকর্মীর মামা ইব্রাহিম খলিল। তিনি বলেন, ভাগনির বাবা নেই। পরে আমরা তার মাকে অন্যত্র বিয়ে দেই। বিয়ের কিছুদিন পর পাশের বাড়ির এক লোক এসে আমাকে বলেন, কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের অধ্যক্ষ আবু তাহেরের মেয়ের বাচ্চাদের খেলার কোন বন্ধু নেই। যদি আমার ভাগনিকে দেই তাহলে তারা বাচ্চাদের সঙ্গে খেলাধুলা করবে আর তাদের সঙ্গে পড়াশোনাও করবে। প্রথমে আমি রাজি হইনি। পরে ওই মেয়ে আসে এবং আমাদের অনুরোধ করে বলেন, “আমার ভাগনিকে নিজের মেয়ের মত করে রাখতে চান।”
আর্থিক অনটনের পরিবারের নুন আনতে পানতা পুরোয়। তাই বুকে পাথর বেঁধে ভাগনিকে দিয়ে দেই। দেয়ার দুই তিন মাস আমার বোনের সাথে কথা হয়েছে। এরপর থেকে চার বছর সে কুমিল্লায়। কোনদিন আমার সাথে কথা হয়নি। শুনেছি আমার বোনের সাথেও তার তেমন কথা হয়নি।
চার বছরে কোনদিন ভাগনির সঙ্গে কথা বলতে চাননি এমন প্রশ্নে ইব্রাহিম বলেন, আমার ভাগনি আমার কত কাছের যারা আমাকে চেনেন তারা জানেন। আমি প্রতি সপ্তাহে কল দিতাম। ওই মহিলার (তাহমিনা তুহিন) মেয়ে বলতো ভাগনি কথা বললে কান্না করবে তাই কথা বলতে দিত না।
তিনি যুক্ত করেন, আমার ভাগনির দাঁত নড়ে আবার বসে গেছে। সেই দাঁতের পাশে দাঁত উঠেছে। তার মাথার চুলে সেম্পু, সাবান লাগাতে হবে। তাই তার মাথার চুল পুরো কেটে দিত। তার নোংরা জামাতেই চলতো বছর। চার বছর গ্রামের বাড়িতে তাহমিনা তুহিনের মেয়ে কতবার গিয়েছে। আমরা দৌড়ে তার বাড়িতে গেলেই সে বলতো আমাদের ভাগনিকে আনেনি। দুঃখ নিয়ে চলে আসতাম।
ভাবতাম ভাগনি আমাদের থেকেও ভালো আছে। কিন্তু সেদিন খবর পাই ভাগনি ভালো নেই। হাসপাতালে গিয়ে প্রথমে ভেবেছিলাম ভাগনিকে শুধু সেদিনই মেরেছে। পরে তার পুরো শরীরে দেখি দাগ আর দাগ। অনেক গুলো বছর পুরোনো। অনেক গুলো মাস ছয়েক। আবার অনেক গুলো কয়েকদিন আগের।
কেন তার শরীরে গরম পানি ঢেলেছে এমন প্রশ্নে ইব্রাহিম বলেন, ওই ঘরের আরেকজন কাজের মহিলা ছিল। সে কোন একটি অভিযোগ দেয়ায় ভাগনিকে তিনদিন তারা খাবার দেয়নি। পরে ভাগনি ক্ষুধা সহ্য করতে না পেরে ঘরের রান্না ঘর থেকে চামুচে করে পাউডার দুধ নিয়ে খেতে চেয়েছিল। কিন্তু তাকে দুধ না খেতে দিয়ে চুলায় থাকা গরম পানি শরীরে ঢেলে দেয়।
মামলা তুলে নিতে কোন হুমকি আসছে কিনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, মামলা করার আগে থেকেই টাকা দিয়ে তারা সমাধানের চেষ্টা করে যাচ্ছে। মামলার পরে আমাদের স্থানীয় নেতারা এসেছেন। মিমাংসা করতে। প্রথমে এক লাখ টাকা দেবে বলেছে। আমি রাজি না হওয়ায় তা পাঁচ লাখ পর্যন্ত উঠেছে। গরিবের সংসার। না খেয়ে থাকবো কিন্তু ভাগনিকে যারা এত কষ্ট দিয়েছে তাদের বিচার হোক। আমি আদালতের কাছে বিচার চাই।
ভাগনি কোথায় ও কেমন আছেন এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, শরীরের ব্যান্ডেজ গুলো একবার চেঞ্জ করেছে ডাক্তার। তার অবস্থা আগের মতই। এখনও শোয়ায় আছে। ডাক্তার বলেছে সুস্থ হতে সময় লাগবে।
এদিকে ৯ জানুয়ারি গ্রেফতার তাহমিনা তুহিনের জামিন নামঞ্জুর করেছে আদালত। কুমিল্লা জেলা ও দায়রা জজ মো. হেলাল উদ্দিন এ আদেশ দেন।
মামলার বাদী পক্ষের আইনজীবী মোহাম্মদ ইলিয়াস মিন্টু বলেন, শুধু তাহমিনা তুহিন নয় তার মেয়ে ইমুসহ ওই শিশুকে নির্যাতন করতো। তারা জালি বেত দিয়ে তাকে মারতো। গরম পানি শরীরে ঢেলেছে বলে ম্যাজিস্ট্রেটের নিকট জবানবন্দি দিয়েছে ওই শিশু। আমরা প্রত্যাশা করছি এই অমানবিক নির্যাতনকারী নারীকে আদালত জামিন দেবেন না।
কুমিল্লার কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আহমেদ সনজুর মোর্শেদ মিন্টু বলেন, ঘটনার পর মামলা দায়ের করেন ওই গৃহকর্মীর মামা। পরে অভিযুক্তকে আমরা গ্রেফতার করে কারাগারে প্রেরণ করি। এ ঘটনায় তদন্ত এখনও চলমান আছে।
ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ আবু তাহের বলেন, মেয়েটি আমাদের আত্মীয়ের মধ্যে। মেয়ের শ^শুর বাড়ি দেবিদ্বারে তার বাড়ি। আমার স্ত্রী জানিয়েছেন তাকে মারধর করেননি। সে পাপোষে পা পিছলে পড়ে পায়ে একটু গরম পানি পড়েছে। পাশের হোস্টেলের একটি মেয়ে বিষয়টিকে বড় করেছে।
উল্লেখ্য-গত ৩ জানুয়ারি সন্ধ্যায় কুমিল্লা শহরতলীর ধর্মপুর ভিক্টোরিয়া কলেজ সংলগ্ন পূর্ব দৌলতপুর এলাকার এস আর টি প্যালেসের মালিক ও কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ আবু তাহেরের গৃহকর্মীকে মারধর করেন তার স্ত্রী তাহমিনা তুহিন। পরে গরম পানি ঢেলে তার শরীর ঝলসে দেন তিনি।