কুমিল্লায় মেয়েসহ বিধবাকে পেটানোর অভিযোগ, মামলা নিতে গড়িমসি পুলিশের

স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশ: ২ years ago

কুমিল্লা সদর উপজেলায় সম্পত্তি সংক্রান্ত বিরোধ নিয়ে এক বিধবা নারী ও তাঁর মেয়েকে পেটানোর অভিযোগ উঠেছে। যদিও ভুক্তভোগীদের ভাষ্য, তাঁদের সম্পত্তি দখল করে এলাকা ছাড়া করতেই হামলা চালিয়েছে প্রতিপক্ষ। ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার বারপাড়া ইউনিয়নের কৃষ্ণপুর গ্রামে। ভুক্তভোগী ওই বিধবার নাম রাবেয়া খাতুন। তিনি ওই গ্রামের মৃত মাহাবুব আলমের স্ত্রী। হামলায় আহত হয়েছেন তাঁর মেয়ে তিশা আক্তার।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, হামলার ঘটনায় থানায় লিখিত অভিযোগ করা হলেও মামলা নিতে গড়িমসি করছে পুলিশ। উল্টো ঘটনাটি স্থানীয়ভাবে মিমাংসার চেষ্টা করা হচ্ছে পুলিশের সহযোগিতায়। তবে পুলিশের ভাষ্য, বাদী-বিবাদীরা স্থানীয়ভাবে বিষয়টি মিমাংসার কথা বলেছেন। পুলিশ নিজে মিমাংসার কোন উদ্যোগ নেয়নি।
বুধবার (৩ আগস্ট) দুপুরে সরেজমিনে ওই বিধবার বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে, বিছানায় শুয়ে কাতরাচ্ছেন মেয়ে তিশা আক্তার। মেয়ের মাথার পাশে বসে আছেন মা রাবেয়া খাতুন। ঘটনার পর থেকেই মা-মেয়ে আতংকে রয়েছেন বলে জানিয়েছেন তাঁরা।
রাবেয়া খাতুন জানান, গত সোমবার বিকেলে তাদের উপর হামলা চালিয়েছেন প্রতিবেশী মন্তাজ মিয়া ও তার পরিবারের সদস্যরা। হামলার সময় মন্তাজ মিয়া বহিরাগত লোকজনও এনেছিলেন।
তিনি বলেন, আমার স্বামী মারা গেছেন ২০২০ সালে। মৃত্যুর আগে মন্তাজ মিয়ার কাছে দুই গন্ডা জায়গা বিক্রি করেন তিনি। সেখানে এখন দৌতলা বাড়ি করেছেন মন্তাজ। তাঁর বিল্ডিংয়ের পাশেই আমাদের টিনের ঘর। বাড়ির ছাদের সকল পানি আমাদের ঘরের দিকে ফেলেন মন্তাজ মিয়া। এতে বৃষ্টি এলেই আমাদের ঘরে তাদের ছাদের পানি প্রবেশ করে। এনিয়ে আমার মেয়ে প্রতিবাদ করলে মন্তাজ বলেন- এখানে বসবাস করতে হলে এভাবেই চলতে হবে। তিনি নাকি আমাদের ঘরের ভেতরে সম্পত্তি পাবেন। সব কিছু সহ্য করে না থাকতে পারলে এলাকা ছেড়ে চলে যেতে হবে। এসব ঘটনার জের ধরেই সোমবার বিকেলে আমাদের উপর হামলা চালানো হয়।
ওই বিধবার মেয়ে তিশা আক্তার বলেন, হামলার সময় আমাদের মা-মেয়েকে লাঠিসোটা দিয়ে এলোপাতাড়ি পেটানো হয়। এছাড়া আমাকে অকথ্য ভাষায় গালমন্দ করে শ্লীলতাহানির চেষ্টা করা হয়। পরে আমার মা-মেয়ে কুমিল্লা সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছি। ঘটনার দিন রাতেই থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন আমার মা। কিন্তু পুলিশ এখনো মামলা নেয়নি। উল্টো স্থানীয়দের মাধ্যমে ঘটনাটি মিমাংসার চেষ্টা করছে পুলিশ। আমরা আইনের মাধ্যমে ন্যায় বিচার চাই, স্থানীয়ভাবে মিমাংসা চাই না। মন্তাজ মিয়ার মূল উদ্দেশ হলো আমাদের বাড়ি থেকে বিতাড়িত করে আমাদের সম্পত্তি দখল করা। এরই মধ্যে মামলা তুলে নিতে আমাদেরকে চাপ দেওয়া হচ্ছে।

এসব প্রসঙ্গে জানতে অভিযুক্ত মন্তাজ মিয়ার মোবাইলফোনে কল করা হলে এক নারী রিসিভি করে বলেন- মন্তাজ মিয়া ঘরে নেই। এছাড়া তিনি এসব বিষয়ে কথা বলবেন না। তবে ওই নারী নিজের বিস্তারিত পরিচয় দিতে রাজি হননি।

বিধবার দায়ের করা লিখিত অভিযোগটির তদন্ত করছেন কুমিল্লা কোতয়ালি মডেল থানার চকবাজার ফাঁড়ির উপ-পরিদর্শক (এসআই) বিমল দাস। মামলা নিতে গড়িমসির অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন, আমি মঙ্গলবার বিকেলে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। তখন দুইপক্ষই বলেছেন- তাঁরা বিষয়টি স্থানীয়ভাবে মিমাংসা করবেন। পুলিশ বাদীকে স্থানীয়ভাবে মিমাংসার জন্য চাপ দিয়েছে, এটা ভিত্তিহীন কথা। তারা নিজেরা বিষয়টি সমাধান করতে না পারলে আমরা পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নেব। আমরা কোন গড়িমসি করিনি।