কুমিল্লায় স্কুলছাত্রীকে হত্যা চেষ্টার অভিযোগে বান্ধবীর মায়ের বিরুদ্ধে মামলা

স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশ: ২ years ago

কুমিল্লা নগরীর রামমালা রোডের এক বাসায় ঢুকে এক স্কুলছাত্রীকে খুর দিয়ে গলাকেটে হত্যার চেষ্টা করেছেন এক নারী। হত্যা চেষ্টাকারী ঐ নারী স্কুল ছাত্রীটির বান্ধরীর মা বলে জানা গেছে। ঘটনাটি ঘটেছে ১৮ সেপ্টেম্বর রোববার রাত সাড়ে ৯টায় রামমালা আদর্শ ক্রিস্টাল গার্ডেন সিটি নামের একটি ভবনের নবম তলার ফ্ল্যাটে ।
আহত নাবিলা তাবাসসুম চৌধুরী (১২) ওই ভবনের ভাড়াটিয়া তপু চৌধুরীর মেয়ে। সে নগরীর ইবনে তাইমিয়া স্কুল এন্ড কলেজের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী। অভিযুক্ত মহিলা জেসমিন আক্তার (৪০) একই ভবনের অষ্টম তলার ভাড়াটিয়া।

কুমিল্লা কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি মুহাম্মদ সহিদুর রহমান জানান, ঘটনার পরপরই জেসমিন আক্তার পালিয়ে গেছে। তাকে ধরতে অভিযান শুরু করেছে পুলিশ।

আদর্শ ক্রিস্টাল গার্ডেন সিটির বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জেসমিনের মেয়ে জান্নাতুল ফেরদৌস সুমনা (১৩) কুমিল্লা শিক্ষাবোর্ড সরকারী মডেল কলেজের সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী। একই ভবনে বসবাস করায় নাবিলা ও সুমনার মধ্যে ভালো বন্ধুত্ব গড়ে উঠে। তারা প্রায়ই এক সঙ্গে থাকতো। সুমনার মা জেসমিনও নাবিলাদের বাসায় যাতায়াত করতেন।

রোববার রাত সাড়ে ৯টার দিকে নাবিলার মা শরীফা চৌধুরীর চিৎকারে ভবনের ভাড়াটিয়ারা সেখানে গিয়ে নাবিলার গলার কিছু অংশ কাটা দেখতে পান। এ সময় রক্তে তাদের ফ্ল্যাটের সামনের ড্রয়িং রুমের মেঝে ভেজা ছিলো। পাশেই পড়েছিলো রক্তমাখা খুর। পরে তারা দ্রুত নাবিলাকে উদ্ধারে করে পাশের একটি হাসপাতালে নিয়ে যায়। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হওয়ায় তাকে তাৎক্ষণিকভাবে রক্ত দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়।

নাবিলার মা শরীফা চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, “সুমনা ও নাবিলা খুব ভালো বন্ধু। ঘটনার কিছুক্ষণ আগে রাত ৯টার দিকে নিজের পোষা বিড়াল নিয়ে সুমনাদের বাসায় গিয়েছিলো নাবিলা। কিন্তু সুমনাকে ঘুমন্ত অবস্থায় দেখে নাবিলা বাসায় এসে আমার সঙ্গে শুয়ে ছিলো। কিছুক্ষণ পর সুমনার মা আমাদের বাসায় আসেন। এরপর তিনি কথা আছে বলে নাবিলাকে বেড রুমে থেকে ড্রয়িং রুমে ডেকে নিয়ে যান।

“একটু পরেই ধস্তাধস্তির আওয়াজ শুনে আমি গিয়ে দেখি, জেসমিন আমার মেয়ের মুখ চেপে ধরে তাকে খুর দিয়ে জবাই করতে চেষ্টা করছে। আমি দৌঁড়ে গিয়ে মেয়েকে বাঁচাতে গেলে জেসমিন আমাকেও হত্যা করবে বলে হুমকি দেয়। এরপর আমি চিৎকার শুরু করলে সে দ্রুত পালিয়ে যায়। পরে অন্য ফ্ল্যাটের লোকজন মেয়েকে হাসপাতালে নিয়ে যায়।”

শরীফা চৌধুরী ভাষ্য, “মেয়ের বান্ধবীর মা হওয়ায় জেসমিনের সঙ্গে আমাদেরও ভালো সম্পর্ক ছিলো। কিন্তু হঠাৎ তিনি কেন আমার মেয়েকে হত্যার চেষ্টা করেছেন সেটা আমি জানি না। আমার মেয়ে কোনো অন্যায় করলে তিনি আমাকে বলতে পারতেন। আমি এ ঘটনার বিচার চাই। আমার মেয়ে এখনে জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে।”

সোমবার বিকালে এ বিষয়ে জানতে নাবিলার বাবা তপু চৌধুরীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, “আমার মেয়ের অবস্থা এখনও আশঙ্কাজনক। বলতে গেলে আমি দিশেহারা অবস্থায় রয়েছি। তিনি কেন আমার মেয়েকে গলাকেটে হত্যার চেষ্টা করছেন, সেটা আমি বলতে পারবো না। আমি চাই তদন্তের মাধ্যমে সব বেরিয়ে আসুক।”

ওসি বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে রক্তমাখা খুর উদ্ধার করেছে। কেন এই ঘটনা ঘটেছে, সেটা এখনো জানা যায়নি। তদন্ত শুরু হয়েছে এবং এ ঘটনায় থানায় মামলা দায়েরের প্রক্রিয়া চলছে।