কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের ২৮ হাজার শিক্ষার্থীর ২ যুগের অপেক্ষার অবসান

স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশ: ১ বছর আগে

দুই যুগেরও অধিক সময় জলাবদ্ধতা ও কচুরিপানায় পরিণত হয়ে থাকা কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের ২৮ হাজার শিক্ষার্থীদের স্বপ্নের খেলার মাঠের সংস্কার কাজ পুনরায় শুরু হয়েছে। খেলার মাঠ সংস্কারের কাজ শুরু হওয়ায় বেশ আনন্দিত কলেজের শিক্ষার্থীরা। ভিক্টোরিয়ায় পড়াশোনা-বিনোদন সবই ছিল। তবুও কোথায় যেন একটা শূণ্যতা ছিল। যার জন্য শিক্ষার্থীরা সবসময় উদ্বেগ প্রকাশ করতো। অনার্স-মাস্টার্সের শিক্ষার্থীরা বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহন করতে ধর্মপুর অনার্স শাখা থেকে যেতে হতো কান্দিরপাড় উচ্চমাধ্যমিক শাখায়। ক্লাস শিডিউলে ব্রেক পেলেও ক্রীড়া চর্চার সুযোগ ছিল না শিক্ষার্থীদের। অনার্স শাখায় কোনো মাঠ না থাকায় ফ্রী সময়ে কেউ বন্ধুদের সাথে আড্ডা কেউবা জুনিয়র-সিনিয়রদের সাথে আলাপচারিতা কিংবা মোবাইল ফোনে অযথা সময় নষ্ট করে কাটিয়ে দিত।

অনার্স শাখার একমাত্র খেলার মাঠ ভরাটের কাজ বার বার সম্পন্ন হওয়ার কথা শোনা গেলেও ইতিপূর্বে মাঠের সম্পূর্ণ কাজ শেষ হয়নি। একটু একটু করে যে কাজ হয়েছিল তার ফলাফল কেবল কচুরিপানার জন্ম দিয়েছিল। যার ফলে ক্রীড়া চর্চা থেকে বঞ্চিত ছিল শিক্ষার্থীরা। সংষ্কার না হওয়ায় বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতার কারণে দিনদিন মশার উপদ্রব, সাপ ও বিষাক্ত পোকা-মাকড়ের ভয় বিরাজ করছিলো সমস্ত ক্যাম্পাস জুড়ে।

এবার এ সমস্যার স্থায়ী সমাধানের জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ কর্মসূচি হাতে নিয়েছেন ভিক্টোরিয়া কলেজের অধ্যক্ষ ড. আবু জাফর খান। কলেজের পরীক্ষা ভবনের পেছনের লেক থেকে কেরেন দিয়ে মাটি কেটে ট্রাক দিয়ে মাঠ ভরাটের কাজ শুরু করেছেন অধ্যক্ষ। মাঠের কাজ সম্পন্ন হলে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলবে ক্রীড়াপ্রেমী শিক্ষার্থীরা।

মাঠ সংস্কার নিয়ে কলেজের ইংরেজি বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মহসিন বলেন, ভিক্টোরিয়া অনার্স শাখায় খেলার মাঠ সংস্কার হচ্ছে সত্যিই আমি খুব আনন্দিত। ক্যাম্পাসের মাঠ থাকলেও সেটা কচুরিপানায় পরিপূর্ণ ছিল। দীর্ঘ দিন যাবৎ এই ক্যাম্পাসে খেলাধুলার তেমন কোনো ব্যবস্থা ছিল না। মাঠ খেলাধুলা চিত্তবিনোদনের বড় উৎস। ক্যাম্পাসে লেখেপড়ার পাশাপাশি খেলার সুযোগ হলে আমার মতো অনেক শিক্ষার্থী খুশি হবে। মাঠ হয়ে গেলে ক্যাম্পাসের বিকেলটা বেশ উপভোগ করবো।

ক্যাম্পাস বার্তার সহ-সাহিত্য সম্পাদক কানিজ ফাতেমা বলেন, এ অনুভুতিটা আসলেই অন্যরকম। আমাদের একটা সময় খেলার মাঠ ছিলো না। এখন মাঠ হবে। নিজেদের মাঠে নিজেরা খেলবো, সহপাঠীদের খেলা দেখবো, তাদেরকে উৎসাহিত করবো, নিঃসন্দেহে ভীষন ভালো লাগার মুহুর্ত তৈরি হবে।

কুমিল্লা মহানগর ছাত্রলীগের আহবায়ক আব্দুল আজিজ সিহানুক বলেন, ক্রীড়া শিক্ষার একটা অংশ। ক্রীড়া শিক্ষার্থীকে প্রফুল্ল ও উজ্জীবিত রাখে আর শিক্ষা মেধা বিকাশে সহায়তা করে। ভিক্টোরিয়া কলেজের শিক্ষার্থীরা দীর্ঘদিন যাবৎ কলেজ মাঠ নিয়ে দাবি জানিয়ে আসছিলো। মাঠ আধুনিকায়নের ফলে কলেজের ২৮ হাজার শিক্ষার্থীর দীর্ঘদিনের অপেক্ষার অবসান ঘটবে। আনন্দের হাসি ফুটবে ক্রীড়াপ্রেমী শিক্ষার্থীদের মুখে। এর ফলে মাদক থেকে বিরত থাকবে শিক্ষার্থীরা।

শিক্ষক পরিষদের সম্পাদক মঈন উদ্দিন বলেন, ২৯ হাজার শিক্ষার্থীর জন্য একটি খেলার মাঠ অত্যন্ত জরুরি ছিল। কলেজের নিজস্ব মাঠ থাকা সত্ত্বেও ক্যাম্পাস থেকে নিচু হওয়ায় মাঠটি জলাবদ্ধতায় পরিপূর্ণ ছিল। এমতাবস্থায় শিক্ষার্থীদের খেলাধুলার সুযোগ সৃষ্টি এবং ক্যাম্পাসের সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য ৬ ফেব্রুয়ারি মাঠ সংস্কারের কাজ শুরু হয়েছে। আশা করছি আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে কাজটি সমাপ্ত হবে। মাঠ সংস্কার ক্যাম্পাসে কোনো প্রতিকূল পরিবেশের তৈরি করবে বলে মনে করি না। বরং তা সৌহার্দ্য সম্প্রীতি জোরদারে ভূমিকা রাখবে। মাঠ খেলাধুলা ও কলেজের আভ্যন্তরীণ বৃহৎ প্রোগ্রাম আয়োজনে ব্যবহৃত হবে।

ভিক্টোরিয়া কলেজের অধ্যক্ষ ড. আবু জাফর খান বলেন, দুই যুগের অধিক সময় যাবৎ শিক্ষার্থীদের খেলার মাঠটি কচুরিপানায় পরিপূর্ণ ছিল। আমরা খেলার মাঠটি সংস্কারের স্বপ্ন দেখেছিলাম। আজ মাঠটি হচ্ছে এটা ভেবেই অনেক আনন্দ লাগছে। আমরা হয়তো একদিন এ কলেজ থেকে চলে যাবো। কিন্তু ছাত্র-ছাত্রীদের স্বপ্ন বাস্তবায়ন হবে। শুধু খেলার মাঠ নয় আমরা জলাবদ্ধতা সৃষ্টিকারী কলেজের বিভিন্ন জায়গাগুলো মাটি দ্বারা পরিপূর্ণ করেছি। লাইব্রেরিতে সহজে পৌঁছানোর জন্য ব্যবসায় শিক্ষা ভবন, ম্যাথম্যাটিকস ভবন এবং মিলিনিয়াম ভবনের পেছন দিকেও আমরা একটি রাস্তা করে দিয়েছি। কলেজের শিক্ষা এবং সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য যা যা করা প্রয়োজন আমরা করবো ইনশাআল্লাহ।

মাঠ আধুনিকায়নের ফলে সকল ধরনের অপরাধের সমাপ্তি ঘটবে। নতুন মাঠে শিক্ষার্থীরা খেলবে। বন্ধুরা হাসবে। দু’দলের লড়াইয়ে এক দল বিজয়ী হবে। ভিক্টোরিয়ার সমস্ত ক্রীড়াপ্রেমী শিক্ষার্থীদের মাঝে আনন্দ উল্লাস ছড়িয়ে পড়বে। মেধা বিকাশের পাশাপাশি ক্রীড়া মনন প্রফুল্ল ও উজ্জীবিত হবে। এমনটাই সবার প্রত্যাশা।