কুমিল্লা সার্কাস থেকে এশিয়ান কালো ভালুক ও দুটি বানর উদ্ধার করেছে বন বিভাগ

‘সার্কাস কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে মুচলেকা গ্রহণ করা হয়েছে’
স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশ: ২ সপ্তাহ আগে

কুমিল্লা নগরের জাঙ্গালিয়া এলাকায় বাণিজ্য মেলায় চলমান সার্কাসের প্রদর্শনী থেকে একটি এশিয়ান কালো ভালুক ও দুটি বানর উদ্ধার করেছে বন বিভাগ। শনিবার দুপুরে ঢাকা থেকে আসা বন্য প্রাণী অপরাধ দমন ইউনিট ও কুমিল্লা সামাজিক বন বিভাগ অভিযান চালিয়ে সার্কাস থেকে এসব বন্য প্রাণী উদ্ধার করে।
কুমিল্লা সামাজিক বন বিভাগের রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. মাজহারুল ইসলাম শনিবার রাত আটটার দিকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, প্রকৃতি সংরক্ষণবিষয়ক সংস্থাগুলোর জোট আইইউসিএনের তালিকায় এশিয়ান কালো ভালুক মহাবিপন্ন প্রজাতির বন্য প্রাণী। শনিবার বিকেলে আটক করা বন্য প্রাণীগুলো গাজীপুরের উদ্দেশে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। উদ্ধার করা বন্য প্রাণীগুলোকে গাজীপুর সাফারি পার্কে অবমুক্ত করা হবে।
মাজারুল ইসলাম বলেন, ‘জাঙ্গালিয়া ডিওএইচএস মাঠে চলছে “কুটির শিল্প ও বাণিজ্য মেলা”। সেখানে টিকিটের বিনিময়ে সার্কাসে ভালুক ও বানরের মতো বন্য প্রাণী দিয়ে খেলা দেখানো হচ্ছে , এ ধরনের পোস্ট সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। পরে বন সংরক্ষক হোসেন মাহমুদ নিশাত খোঁজ নিয়ে বিষয়টি নিশ্চিত হন এবং আমাদের ব্যবস্থা নিতে বলেন। যেহেতু কুমিল্লা সামাজিক বন বিভাগের কাছে বন্য প্রাণী সংরক্ষণের কোনো সুযোগ নেই, সে জন্য আমরা ঢাকার বন্য প্রাণী অপরাধ দমন ইউনিটের সহযোগিতা নিয়ে এসব বন্য প্রাণী ওই সার্কাস থেকে উদ্ধার করি।’ রেঞ্জ কর্মকর্তা মাজহারুল বলেন, ‘সার্কাস কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে মুচলেকা গ্রহণ করা হয়েছে, তাঁরা আর বন্য প্রাণী দিয়ে খেলা দেখাবেন না। ধারণা করছি, কালো রঙের এই ভালুকটিকে পার্বত্য চট্টগ্রামের আলীকদম এলাকা থেকে খুব ছোট বয়সে সংগ্রহ করে সার্কাস কর্তৃপক্ষ। প্রায় ১৫ বছর ধরে ভালুকটি বন্দী করে এভাবে সার্কাসের খেলা দেখানো হচ্ছে বলে ধারণা করছি।’ গাজীপুরের উদ্দেশে রওনা দেওয়ার আগে কুমিল্লায় সার্কাস থেকে উদ্ধার করা এশিয়ান কালো ভালুক ও বানরের সঙ্গে বন বিভাগের কর্মকর্তারা। শনিবার বিকেলে গাজীপুরের উদ্দেশে রওনা দেওয়ার আগে কুমিল্লায় সার্কাস থেকে উদ্ধার করা এশিয়ান কালো ভালুক ও বানরের সঙ্গে বন বিভাগের কর্মকর্তারা। শনিবার বিকেলেছবি: প্রথম আলো
বন্য প্রাণী উদ্ধার ও সংরক্ষণ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছেন কুমিল্লার মোশারফ হোসেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘শুধুমাত্র খাবারের লোভ দেখিয়ে বছরের পর বছর এসব বন্য প্রাণীকে এভাবে লোহার খাঁচায় বন্দী রেখে সার্কাসে ব্যবহার করা হচ্ছিল। এটি একটি অপরাধ। আমার ধারণা, বিপন্ন প্রায় প্রজাতির ভালুকটি অন্তত ১২ বছর এভাবে খাঁচাবন্দী রেখে সার্কাসে ব্যবহার করা হয়েছে। ভালুকটি মুক্ত হচ্ছে দেখে ভালো লাগছে। বিপন্ন প্রায় প্রজাতির ভালুকটি সিলেট ও চট্টগ্রামের বনগুলোতে এখনো অল্প টিকে আছে। তবে দেশের বেশির ভাগ অঞ্চলে এটি দেখা যায় না।’
মোশারফ হোসেন বলেন, ‘সার্কাস দল “দি রাজমুনি সার্কাস বগুড়া” মেলায় বন্য প্রাণী দিয়ে সার্কাস দেখাচ্ছিল। বিষয়টি জানতে পেরে বন বিভাগের লোকজনসহ আমরা স্বেচ্ছাসেবকেরা রাতেও পাহারা দিয়েছি, যেন সার্কাস কর্তৃপক্ষ বন্য প্রাণীগুলোকে সরাতে না পারে। এর মধ্যে খবর পেয়ে ঢাকা থেকে বন্য প্রাণী অপরাধ দমন ইউনিটের লোকজন আসেন এবং অভিযান পরিচালনা করে ভালুক ও দুটি বানর উদ্ধার করেছেন।’ ঢাকা থেকে আসা বন্য প্রাণী অপরাধ দমন ইউনিটের পরিদর্শক নার্গিস সুলতানা বলেন, দি রাজমুনি সার্কাস কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে মুচলেকা গ্রহণ করা হয়েছে। তাঁরা ভবিষ্যতে বন্য প্রাণী ব্যবহার করবেন না বলে অঙ্গীকার করেছেন। যদি আবারও এমন অভিযোগ আসে, তাহলে তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হবে। উদ্ধার করা বন্য প্রাণীগুলোকে গাজীপুর সাফারি পার্কে নেওয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি।