কুসিক নির্বাচন- কি কি আছে কায়সারের ইশতেহারে!

স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশ: ২ years ago

কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের ইশতেহার ঘোষণা করেছে স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী নিজাম উদ্দিন কায়সার। শনিবার (১১ জুন) সকাল সাড়ে ১০ টায় নগরীর ধর্মসাগর পাড়ের নিজ নির্বাচনী কার্যালয়ে নিজের নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেন তিনি। নির্বাচনী ইশতেহার নিয়ে তিনি একটি পুস্তিকা প্রকাশ করেন।
ইশতেহার ঘোষণার আগে তিনি বলেন, প্রতিটি শহর নির্মাণের পেছনে একটি দর্শন থাকে বা থাকা জরুরি; যার উপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠে নাগরিক সংস্কৃতি, মূল্যবোধ, মানবিকতা, জীবনাচরণ, উন্নয়ন পরিকল্পনা ও ভবিষ্যৎ। যা বিগত সময়ে কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের উন্নয়নের ক্ষেত্রে খুব বেশি দৃষ্টি দেয়া হয়নি। ত্রুটি নিয়েই আদর্শ সদর এবং সদর দক্ষিণের সমন্বয়ে যে নগর গড়ে তোলার পরিকল্পনা হয়েছে তাতে হয়েছে চরম বৈষম্য। একটি পূর্ণাঙ্গ সিটি কর্পোরেশন বলতে যা বোঝায় তা হয়ে উঠেনি। পরিকল্পনায় থাকলেও সীমানা বাড়েনি। তাই আধুনিক কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন গড়তে আমার প্রথম বিবেচনার বিষয় হলো- গরীব-ধনী সকলের জন্য মানবিক এক কুমিল্লা, যেখানে নাগরিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত হবে সবকিছুর উপরে, মানুষের অধিকার থাকবে সুরক্ষিত।
তার নির্বাচনের ইশতেহারে তিনি উল্লেখ করেন, 
নিরাপদ ও সম্প্রীতির কুমিল্লা-
কুমিল্লা এক সময় ছিল সম্প্রীতির বন্ধন। ছিল না ভয়-ভীতি আর রাজনৈতিক হয়রানীমূলক মামলা।
কিন্তু ইতিহাস-ঐতিহ্যের নগরী কুমিল্লা আজ নিরাপদ নয়। কেউ মুক্তভাবে চলাচল করতে পারছে না।
সন্ত্রাস আর মাদক যেন পথ ছাড়ছে না। নিরাপদভাবে চলাচল করাও যেন কষ্টসাধ্য।
অহরহ ঘটছে জীবন হানির মতো ঘটনা। ভয় ও আতঙ্ক আজ নিত্যদিনের সঙ্গী। রাজনৈতিক মতপার্থক্য আজ সর্বগ্রাসী। রাজনৈতিক কারণে মিথ্যা মামলা-হামলায় সমাজ আজ কলুষিত।জীবনের যেমন নিরাপত্তা নেই, তেমনি নেই নিরাপদ পানি, বায়ু, পরিবেশ। রাস্তায় কিংবা মার্কেটে গেলে পড়তে হয় ছিনতাইকারীর কবলে। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে প্রতিটি উৎসবকে সামাজিক সম্প্রীতির-বন্ধনে রূপান্তরিত করা। সেজন্য প্রয়োজন আমাদের মধ্যে নিবিড় ভ্রাতৃত্ববোধ সম্প্রীতি ও প্রতিবেশীদের সাথে মিলে মিশে থাকা। রাজনৈতিক সম্প্রীতিও প্রয়োজন। এবিষয়ে আমি আমার পিতৃতুল্য মুরব্বী, তরুণ সমাজ, ভাই-বোনদের নিয়ে একসঙ্গে কাজ করতে চাই।
আবাসন-
ভৌগোলিক দিক থেকে কুমিল্লা বাংলাদেশের একটি অন্যতম স্থান। কুমিল্লা হতে পারে দেশের পূর্ব-দক্ষিণাঞ্চলের আবাসিক রাজধানী। সিটি কর্পোরেশন এলাকায় জনসংখ্যার ক্রমবর্ধমান চাপ হ্রাস সময়ের দাবি। এজন্য নিতে হবে কার্যকর ব্যবস্থা। এবিষয়ে আমি কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। পরিকল্পিত আবাসন ব্যবস্থা তৈরি করতে গুচ্ছ আবাসন, বহুতল আবাসন গড়ে তোলার ছক নির্ধারণ করা হবে। দরিদ্র মানুষের আবাসনের ব্যবস্থার জন্য কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। সিটি করপোরেশনের হোল্ডিং ট্যাক্স ও প্ল্যান সংক্রান্ত জটিলতা, দুর্নীতি এবং নাগরিক হয়রানি বন্ধ করা হবে। এলক্ষ্যে নাগরিকদের ভোগান্তি কমাতে মোবাইল এ্যাপস ও অনলাইনের মাধ্যমে ট্যাক্স আদায়ের ব্যবস্থা নেয়া হবে। শ্রমজীবী ও নিম্নবিত্ত মানুষের জন্য মানসম্মত এবং স্বল্প ভাড়ার আবাসন প্রকল্প গ্রহণ করা হবে। নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস, পানি এবং বিদ্যুৎ সরবরাহসহ নাগরিক সমস্যাবলীর বিষয়ে
প্রতিনিয়ত সংশ্লিষ্ট সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের সাথে যোগাযোগ বজায় রেখে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ নেয়া হবে।
মাদকসহ সামাজিক ব্যাধি ও নৈতিক শক্তির পুনরুদ্ধার-
নেশার মরণ ছোবল কুমিল্লাকে গিলে ফেলেছে। তরুণ সমাজ আজ দিকভ্রান্ত। মাদকের কারণে অপরাধ প্রবণতাও বেড়ে চলেছে। আর এই মাদককে ঘিরেই অনেক হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটেছে এই কুমিল্লায়। এমনকি জনপ্রতিনিধিরাও হত্যার শিকার হয়েছে। সংগঠিত হচ্ছে কিশোর গ্যাং এর মতো সহিংস কার্যক্রম। মাদকের বিরুদ্ধে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি নাগরিক সমাজেরও দায়িত্ব রয়েছে। এরই আলোকে কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন নেশার মরণ ছোবল থেকে কিশোর ও যুব সমাজকে রক্ষা করতে সচেতনতামূলক কার্যক্রম চালু করা হবে। এজন্য প্রশাসনের সাথে সমন্বয় করে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। হতাশা এবং অন্যান্য মনস্তাত্তিক সমস্যার কারণে মাদকাসক্তদের চিকিৎসা এবং তাদেরকে সাইকোলজিস্ট, মনোবৈকাল্য বিশেষজ্ঞের মাধ্যমে সচেতনতা তৈরি করা হবে। মাদকাসক্তদের পুনর্বাসনে এবং এ থেকে মুক্ত করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে সিটি কর্পোরেশনের তত্ত্বাবধানে আধুনিক মাদক নিরাময় কেন্দ্র গড়ে তোলা হবে।‘ক্রাইম ম্যাপিং’ প্রণয়ন এবং অপরাধমুক্ত নগর সৃষ্টিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করতে উদ্যোগ নেয়া হবে। নৈতিক ও সামাজিক মূল্যবোধ, অবক্ষয় রোধে সামাজিক সচেতনতার উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।
তথ্য প্রযুক্তি ও ফ্রিল্যান্সিং-
বর্তমান যুগ তথ্য প্রযুক্তির যুগ। তথ্য প্রযুক্তি, ফ্রিল্যান্সিং, ই-কমার্স ব্যবসার সাথে আমার সম্পৃক্ততা রয়েছে। তাই আমি এই বিষয়ে কিছু বাস্তবধর্মী পদক্ষেপ নিতে চাই। এর মাধ্যমে ঘরে বসেই তরুণ প্রজন্ম অর্থ আয়ের সুযোগ পাবে। আমার কিছু প্রস্তাবনা তুলে ধরছি। প্রতিটি ওয়ার্ডে ১টি করে আইসিটি ক্লাব প্রতিষ্ঠা, যা ১টি কেন্দ্রীয় আইসিটি হাবের  (কেন্দ্রবিন্দু) আওতায় থাকবে।  ক্লাবগুলোর মূল উদ্দেশ্য থাকবে তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ক সচেতনতা বৃদ্ধি, অনলাইনভিত্তিক স্কিল ডেভেলপমেন্টে সহযোগিতা করা হবে।
তথ্য প্রযুক্তি, ফ্রিল্যান্সিং ও ই-কমার্স ব্যবসা উদ্যোক্তাদের সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রশাসন ও সিটি কর্পোরেশন যৌথভাবে কাজ করার উদ্যোগ নিবো। সিটি কর্পোরেশন ভবনে একটি কো-ওয়ার্কিং হাব (কেন্দ্রবিন্দু) তৈরি করা, যা সব সময় এই পেশায় নিয়োজিত সবার জন্য সব সময় উন্মুক্ত থাকবে।
সূলভ মূল্যে হাই স্পিড ইন্টারনেট সংযোগ প্রদানের জন্য কুমিল্লার সকল আইএসপি প্রোভাইডারদের সাথে সমন্বয় সাধন করা হবে।
বিদেশ থেকে রেমিটেন্স আনার ক্ষেত্রে কুমিল্লায় সকল ব্যাংকের সাথে সমন্বয় করে কিভাবে রেমিটেন্স সহজে উত্তোলন করা যায় সে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের অভ্যন্তরে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ক সচেতনতামূলক প্রচার প্রচারণা জোরদার করা। জন্ম মৃত্যু সনদ, ট্রেড লাইসেন্স এবং অন্যান্য সব ধরণের নাগরিক সেবা তাৎক্ষণিক প্রদানের জন্য ‘ওয়ানস্টপ সার্ভিস’ (অনলাইন) চালু করা। সিটি করপোরেশন কার্যক্রমের স্বচ্ছতার লক্ষ্যে অবাধ তথ্যপ্রবাহ (Access to Information) নিশ্চিত করা।
জলাবদ্ধতা-
নগরীর জলাবদ্ধতার বিষয়টি নতুন কিছু নয়।
সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা ছাড়া ড্রেনেজ ব্যবস্থা গড়ে
উঠার কারণে কুমিল্লা মহানগর এলাকায় একটু
বৃষ্টি হলেই রাস্তাঘাট ও বাড়িঘর পানিতে ডুবে যায়।
এজন্য নগর পানি নিষ্কাশন ও বৃষ্টির পানিসমূহ প্রবাহের জন্য সকল ড্রেন ও খালের অবৈধ দখল উচ্ছেদপূর্বক বিশেষজ্ঞদের মতামত নিয়ে মহা পরিকল্পনা গ্রহণ করে নগরীর জলাবদ্ধতা দূরীকরণে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
যানজট-
শতবছরের ঐতিহ্যবাহী প্রাচীন এই কুমিল্লা শহর।
বর্তমানে নগরীর প্রতিটি সড়ক যানজটে পরিণত হয়েছে। যানজট নিরসনে বহুমুখী প্রকল্প গ্রহণ করা হবে। কুমিল্লা মহানগরীতে প্রবেশ-নির্গমনের জন্য পদুয়ার বাজারে ফ্লাইওভার, টমছমব্রিজ ও কোটবাড়ীতে (ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক) আন্ডারপাস নির্মাণ এবং গুরুত্বপূর্ণ সড়কের ইন্টারসেকশনে ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণ করা হবে। পর্যাপ্ত ও পরিচ্ছন্ন ফুটপাতের ব্যবস্থাগ্রহণ এবং কার্যকর কল্পে বিভিন্ন আইনসম্মত ব্যবস্থা গ্রহণ করা। রাস্তায় যত্রতত্র পার্কিং ঠেকাতে নতুন ভবন নির্মাণ অনুমোদনের ব্যাপারে সিটি কর্পোরেশন সচেষ্ট থাকবে। শহরের গুরুত্বপূর্ণ জনবহুল স্থানসমূহে পার্কিং এর জন্য ব্যবস্থা নেয়া হবে। সিএনজি অটোরিক্সার জন্য নির্দিষ্ট স্থান নির্ধারণ করে দেয়া হবে। কুমিল্লা নগরীর চারিদিকে বৃত্তাকার সড়কের বিষয়ে উদ্যোগ গ্রহণ ও পরিকল্পনা করে বাস্তবায়নের পদক্ষেপ নেওয়া হবে।যানজট নিরসনে নাগরিক সমাজ, পেশাজীবীসহ জনগণের মতামতকে প্রাধান্য দিয়ে প্রশাসনের সাথে সমন্বয় করে পদক্ষেপ গ্রহণ করবো।
স্বাস্থ্যসেবা-
নগরবাসীর স্বাস্থ্যসেবা সহজলভ্য করার কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
নগর স্বাস্থ্য ক্লিনিক সমূহের মান বৃদ্ধি করার উদ্যোগ গ্রহণ। প্রতিটি বিনোদন এলাকা ও ওয়ার্ড ভিত্তিক (পার্ক, দিঘী, গোমতী নদী, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান) ওয়ান স্পট ক্লিনিক বা অত্যাধুনিক হেলথ্ চেকআপ বুথ (ডায়াবেটিক, প্রেসার, রক্তের গ্রুপিং, ওজন পরিমাপ) স্থাপনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
স্বল্প আয়ের মানুষের জন্য বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা প্রদান করা এবং সকলের জন্য ২৪ ঘন্টা (টেলি মেডিসিন/অনলাইন/মোবাইল এ্যাপস) চিকিৎসা
সেবা সার্ভিস গড়ে তোলার লক্ষ্যে বিভিন্ন উন্নয়ন সংস্থার সমন্বয়ে কাজ করার পাশাপাশি সিটি কর্পোরেশন ও আমি ব্যক্তিগতভাবে নগরবাসীর সাথে আলোচনা করে উদ্যোগ গ্রহণ করব।
স্বাস্থ্য সেবায় প্রবীণ, নারী ও শিশুদের বিষয়টি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিবেচনা করা হবে। সকল সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে
এই বিষয়ে সমন্বয় সাধন করবো।
সিটি কর্পোরেশনের উদ্যোগে স্বল্পমূল্যে লাশবাহী ফ্রিজিং গাড়ী এবং রোগীদের জন্য এম্বুলেন্স চালু করা হবে।
সু-শিক্ষা-
শিক্ষা সাংস্কৃতির পাদপিঠ কুমিল্লা।  সে হারে বাড়েনি মানসম্মত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের উদ্যোগে একটি স্মার্ট স্কুল (মোবাইল এ্যাপস/অনলাইন) প্রতিষ্ঠা করা হবে (কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজসমূহ ও ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজসহ উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, ছাত্রদের ও সংশ্লিষ্ট বিষয়ে অভিজ্ঞদের সম্পৃক্ত করে) অনলাইন ভিত্তিক শিক্ষামূলক তথ্যভান্ডার তৈরি করা হবে। এতে ঘরে বসে শিক্ষা গ্রহণ করতে পারবে।
শিক্ষার মান উন্নয়নে স্থানীয় কাউন্সিলর, শিক্ষক, শিক্ষা বিভাগের কর্মকর্তা ও বিশিষ্ট নাগরিকদের
নিয়ে কমিটি গঠনের মাধ্যমে এবং মতামতের ভিত্তিতে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। বেসরকারি কিন্ডার গার্টেন, মাধ্যমিক বিদ্যালয়, মাদ্রাসা কলেজ সমূহকে সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে সহযোগিতা করা হবে। সিটি কর্পোরেশনের আর্থিক সহায়তায় সদর দক্ষিণ থানাধীন এলাকায় দু’টি শিক্ষা
কমপ্লেক্স গড়ে তোলার উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। এসব কমপ্লে­ক্সের মধ্যে প্রাথমিক, মাধ্যমিক উচ্চমাধ্যমিক স্কুলের পাশাপাশি মসজিদ, বিনোদন কেন্দ্র, খেলার মাঠসহ আন্তঃক্রীড়ার সামগ্রী থাকবে।
কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছাত্র-ছাত্রীদের উন্মুক্ত জ্ঞান চর্চার সুবিধার্থে ‘নলেজ সেন্টার’ গড়ে তোলা হবে। শিক্ষায় উৎসাহ ও সহায়তা প্রদানের লক্ষ্যে প্রাইমারি, জুনিয়র ও সেকেন্ডারি স্কুল
সার্টিফিকেট পরীক্ষায় কৃতী ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে প্রতিবছর ‘সিটি স্কলারশীপ’ প্রদান করা হবে। সেই সাথে সেরা স্কুলগুলো ও শিক্ষকদের সম্মানিত করা হবে।
পর্যটন ও বিনোদন-
কুমিল্লায় বিনোদন এবং পর্যটন আকর্ষণের অন্যতম একটি স্থান।  এ লক্ষ্যে নগরীর অন্তত ৫টি স্থানে বিনোদনপাড়া গড়ে তোলার উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে যেখানে দেশী-বিদেশীরাও আকর্ষিত হবেন। সেজন্য গোমতী নদী, কোটবাড়ী এবং সদর দক্ষিণের দু’টি স্থানকে ঘিরে সেই প্রকল্প গ্রহণ করা হবে। ইতোমধ্যে কুমিল্লা পুরাতন গোমতী নদী হাতির ঝিল আদলে গড়ে তোলার প্রকল্প অনুমোদন করা হয়। স্থানীয় মানুষদের উচ্ছেদ না করে কিভাবে আধুনিক পর্যটন গড়ে তোলা যায় সেই বিষয়টিকে গুরুত্ব দেওয়া হবে। গোমতী নদীকে ঘিরে এথনিক ট্যুরিজম এবং ওয়াটার ট্যুরিজম চালু করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। যেখানে আবাসিক খেলাধুলা, নৌকা বাইচ, সভা সেমিনার, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা থাকবে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক এবং কোটবাড়ীকে কেন্দ্র করে পর্যটন খাতকে আরো আকর্ষণীয়
করার লক্ষ্যে পর্যটন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে সমন্বয় সাধন করে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। বিনোদন, পর্যটন এবং ঐতিহাসিক স্থানের (যেমন: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও কাজী নজরুল ইসলামের স্মৃতি, ধীরেন্দ্র নাথ দত্তের বাড়ি, শচীন দেব বর্মণের বাড়ি, নবাব বাড়ি) আলাদা পর্যটন ম্যাপ করা হবে।
পরিচ্ছন্ন পরিবেশ-
নিবিড় বনায়ণ প্রকল্প গ্রহণ করে কুমিল্লাকে পরিবেশ বান্ধব, পরিচ্ছন্ন ও সবুজ কুমিল্লায় রূপান্তর করা। কমিউনিটি লেভেলে স্বেচ্ছাসেবায় সবুজায়নের জন্যে উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।
সিটি কর্পোরেশন এবং স্থানীয় জনগণকে সম্পৃক্ত করে বছরে কমপক্ষে এক লক্ষ গাছের চারা রোপণ করা হবে। ব্যক্তি ও সাংগঠনিক পর্যায়ে কেউ এগিয়ে আসলে তাকে সম্মানিত করবে সিটি কর্পোরেশন। এজন্য প্রয়োজনে প্রণোদনামূলক কার্যক্রমের মাধ্যমে  তাদেরকে উৎসাহিত করা হবে। বায়ু, শব্দ ও পরিবেশ দূষণমুক্ত নগর গড়ে তোলার লক্ষ্যে ‘সোর্স কন্ট্রোল’ বা উৎস নিয়ন্ত্রণে জোর দেয়া। পরিবেশ বান্ধব দালানের জন্যে সিটি কর্পোরেশন থেকে বিশেষ সার্টিফিকেটের ব্যবস্থা এবং ক্ষেত্র বিশেষে প্রণোদনা (ইনসেন্টিভ) প্রদান করা। প্লাস্টিকের ফুল নয় সতেজ ফুলে সাজানো হবে সিটি কর্পোরেশন এলাকাকে।
খাদ্য ও নগর কৃষি-
নগরের অভ্যন্তরে কোন জমি ফাঁকা পড়ে থাকলে তাতে কৃষি কাজে উৎসাহ দেয়া এবং আরবান এগ্রিকালচার বা ‘নগর কৃষি’ ব্যবস্থা চালুর ব্যাপারে জাইকাসহ বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার সহায়তা নেয়া হবে।
বাড়ির ছাদ এবং আঙ্গিনায় গাছ এবং সবজির চাষ করা হলে তাদেরকে পুরস্কারের পাশাপাশি সিটি ট্যাক্স রেয়াত দেয়া হবে। সিটি কর্পোরেশন এবং আমার ব্যক্তিগত পক্ষ থেকে সবজি বীজ, টব, মাটি, জৈব সার বিনামূল্যে দেয়ার ব্যবস্থা করা হবে।
এবিষয়ে কৃষি বিভাগ কুমিল্লায় ছাদ বাগানী, বাগানের সাথে জড়িত এবং বিশেষজ্ঞদের মতামত নেয়া হবে।
জনসমাগম জায়গায় ‘ফুড কোর্ট’ তৈরি করা এবং রাস্তায় যত্রতত্র খাবারের দোকানগুলিকে সেখানে স্থানান্তরে ব্যবস্থা নেয়া।
ভেজাল খাদ্য বিক্রয় রোধে এবং মানসম্মত খাবার বিক্রয় নিশ্চিত করতে কার্যকর মনিটরিং ও আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
দুর্যোগকালীন সময়ে সরকারের পাশাপাশি আমাদের ব্যক্তিগত উদ্যোগে গরিব ও অসহায় মানুষের মাঝে কমমূল্যে/বিনামূল্যে খাদ্য সামগ্রী প্রদানের উদ্যোগ নিবো।
পয়ঃনিষ্কাষণ ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা-
কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন অধীন পয়ঃনিষ্কাশন ও বর্জ্য নিষ্কাশন ব্যবস্থার স্থায়ী সমাধানকল্পে শুয়ারেজ সিস্টেম স্থাপনপূর্বক নিষ্কাশন ব্যবস্থা নিশ্চিতকরণসহ তদসংগে দক্ষিণ এলাকার ৫০টি গ্রামের পরিবেশ ও জনজীবন রক্ষায় ইপিজেড এর বিষাক্ত রাসায়নিক বর্জ্য/পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থাপনার বিষয়ে কার্যকর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিশ্চিতকরণে সিটি কর্পোরেশন উদ্যোগ গ্রহণ করবে।
বর্জ্য ব্যবস্থাপনাতে বিশ্বের জনপ্রিয় বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি 3R (Reduce, Recycle, Reuse) কনসেপ্টের ব্যাপকভাবে চালু করা এবং এলক্ষ্যে উৎস নিয়ন্ত্রনে জোর দেয়া হবে।
ড্রেন পরিস্কার, নর্দমা এবং খাল দখলমুক্ত করে পরিচ্ছন্ন রাখার নিমিত্তে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ময়লা ফেলার জন্য প্রতিটি সড়কে ময়লার বক্স স্থাপন করা।
নগর উন্নয়ন, পরিবেশ রক্ষা, বর্জ্য অপসারণ, আধুনিক প্রযুক্তি ইত্যাদি বিষয়ে প্রবীণ-নবীন বিশেষজ্ঞ সমন্বয় উপদেষ্টা পরিষদ গঠন এবং তাঁদের পরামর্শ মত কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করে তা বাস্তবায়ন করা হবে। রাত ১২টা হতে ভোর ৫টার মধ্যেই আবর্জনা অপসারণের ব্যবস্থা নেয়া হবে।
ক্রীড়া ও সংস্কৃতি-
সংস্কৃতি একটি জাতির মুখচ্ছবি।
সংস্কৃতির মধ্য দিয়ে জাতির মনন ও রুচির বহিঃপ্রকাশ ঘটে। সিটি কর্পোরেশন এলাকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সুস্থ সংস্কৃতি, বিনোদন চর্চা, ও ক্রীড়া অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে। সংস্কৃতি সেবীদের জন্য সিটি কর্পোরেশন থেকে প্রণোদনার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ক্রীড়া ও সাংস্কৃতির ক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের জন্য বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে তাদের কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ সম্মাননা প্রদান এবং বিভিন্ন প্রকাশনা
প্রকাশের ক্ষেত্রে আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হবে।
এছাড়াও তিনি বলেন, কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের বাজারসমূহকে বর্তমানে ব্যবসায়ীদের স্বার্থ রক্ষা করে আধুনিকভাবে গড়ে তোলা হবে। বাসস্ট্যান্ডগুলোকে আধুনিকায়ন এবং বহুতল বিশিষ্ট পার্কিং ব্যবস্থা করা হবে। মহিলাদের জন্য পৃথক ব্যবস্থাসহ পর্যাপ্ত সংখ্যক আধুনিক ও পরিচ্ছন্ন পাবলিক টয়লেট, শ্রমজীবী মানুষের জন্য
বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ, পর্যাপ্ত সংখ্যক ধর্মীয় উপাসনালয়, কবরস্থান, শ্মশান, কমিউনিটি সেন্টার নির্মাণ এবং সামাজিক উন্নয়ন ও বন্ধন দৃঢ় করতে ধর্মীয় নেতাদের নিয়ে নিয়মিত বিভিন্ন কর্মদ্যোগ গ্রহণ করবো। প্রতিবন্ধী, শিক্ষার্থী, মুক্তিযোদ্ধা, বয়স্ক, অসহায় নাগরিকদের জন্য ডিসকাউন্ট ও বিশেষ সেবা সম্বলিত সিটি কার্ড প্রবর্তন করবো।
ইশতেহার ঘোষণার পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেব, ইশতেহারটি বাস্তবায়ন করতে তিনি চার বছর সময় নেবেন।
এসময় উপস্থিত ছিলেন, এডভোকেট ইউসুফ, এস এ বারি সেলিম, এডভোকেট ইশরাকুল আলম, সদর দক্ষিণ উপজেলা বিএনপি বাবুল মিয়া, ডাক্তার মো. হাসানুজ্জামান, ডা. মো. কামরুল ইসলাম মামুন, ডা. মো. মাইন উদ্দীন মিয়াজী প্রমুখ।