গবেষক শিক্ষকদের অধ্যক্ষ পদে আবেদনের সুযোগ রেখে এমপিও নীতিমালা সংশোধন করা হোক

স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশ: ১ বছর আগে

পূর্বের এমপিও নীতিমালায় এমপিওভুক্ত বেসরকারি ডিগ্রি কলেজসমূহে কর্মরত প্রয়োজনীয় অভিজ্ঞতাসম্পন্ন সহকারী অধ্যাপকগনের পাশাপাশি একই অভিজ্ঞতাসম্পন্ন প্রভাষকগনও বেসরকারি ডিগ্রি কলেজে অধ্যক্ষ পদে আবেদনের সুযোগ পেতেন। কিন্তু ২০২১ সালের এমপিও নীতিমালায় সেই সুযোগ বাতিল করার কারনে শুধুমাত্র প্রভাষকগনই নয়, সহকারী অধ্যাপকগনও সেই সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। এই বিধিনিষেধের ফলে বর্তমান সময়ে এমপিওভুক্ত ডিগ্রি কলেজগুলোতে অধ্যক্ষ নিয়োগের ক্ষেত্রে যোগ্যতাসম্পন্ন প্রার্থীর অভাবে কোরাম সংকট সৃষ্টি হচ্ছে। পরিণামস্বরূপ ডিগ্রি কলেজ কর্তৃপক্ষসমূহ বারবার নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেয়ার পরও যোগ্য ও প্রয়োজনীয় অভিজ্ঞতাসম্পন্ন অধ্যক্ষ নিয়োগ করতে সক্ষম হচ্ছেননা। অনেক কলেজ কর্তৃপক্ষ অনিচ্ছা সত্ত্বেও বাধ্য হয়ে ভাড়া করা (প্রক্সি প্রার্থী) প্রার্থী দ্বারা কোরাম সংকট দুর করার চেষ্টা করেও সফল হচ্ছেননা। অনেক ক্ষেত্রে যাদেরকে প্রক্সি প্রার্থী হিসেবে আনা হচ্ছে তারা নিজেরাই রাজনৈতিকভাবে তদবির শুরু করায় কলেজগুলোতে বিশৃঙ্খলা ও ক্ষমতার দ্বন্দ্ব দৃষ্টিগোচর হচ্ছে । তাছাড়া ডিগ্রি কলেজসমূহে অধ্যক্ষ নিয়োগে বর্তমানে যেহেতু মাননীয় সংসদ সদস্যগনের অনুমতি নেয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে তাই স্বাভাবিকভাবেই অধ্যক্ষ নিয়োগ বোর্ডে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ও ডিজির প্রতিনিধির সুপারিশ/মতামত প্রাধান্য না পাওয়ায় অধিকাংশ ক্ষেত্রেই যোগ্য প্রার্থীর পরিবর্তে বিভিন্ন কলেজ কর্তৃপক্ষ অযোগ্য প্রার্থী নিয়োগ দান করতে বাধ্য হচ্ছেন । ফলশ্রুতিতে ডিগ্রি কলেজসমূহে বিভিন্ন ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষার সার্বিক কর্মকান্ড পরিচালনা ও মান উন্নয়নে ব্যাঘাত সৃষ্টি হচ্ছে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, এমপিওভুক্ত ডিগ্রি কলেজে সহযোগী অধ্যাপক পদ নেই(২০১০ এর নীতিমালায় সংযোজন করা হলেও ২০১৮ এর নীতিমালায় তা বাতিল করা হয়)এবংকর্মরত অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষগন ব্যতিত অন্য পদবির শিক্ষকগনের অধ্যক্ষ পদে আবেদনের সুযোগ এমপিও নীতিমালা-২০২১ এ রাখা হয়নি ।অন্যদিকে, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রবর্তিত মহামান্য রাষ্ট্রপতির ১০% সরাসরি কোটা (পূর্বে ২০% ছিল) দীর্ঘ ১৪ বছর যাবত বন্ধ থাকার কারনে এমপিওভুক্ত বেসরকারি কলেজসমূহে প্রয়োজনীয় অভিজ্ঞতাসম্পন্ন উচ্চতর ডিগ্রিধারী গবেষক শিক্ষকগন (এমফিল/ পিএইচডি/ প্রথম শ্রেনী ধারী শিক্ষকগন) পিএসসির মাধ্যমে পরীক্ষায় অংশ গ্রহনপূর্বক উত্তীর্ণ হওয়া সাপেক্ষে সরকারি কলেজসমূহে উচ্চতর পদে যেমন- সহকারী অধ্যপক, সহযোগী অধ্যাপক এবং অধ্যাপক পদে) নিয়োগের সুযোগ লাভ করতে ব্যর্থ হয়েছেন। বর্তমানে অধিকাংশ শিক্ষকের বয়স বহু পূর্বেই অতিক্রান্ত হওয়ায় তাদের সরকারি কলেজে উচ্চতর পদে শিক্ষক হিসেবে প্রবেশের আর কোন সুযোগ নেই। এরূপ পরিস্থিতির কারনে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালী মহান নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বেসরকারি কলেজসমূহে কর্মরত মেধাবী গবেষক শিক্ষকদের সম্মানীত করার জন্য যে সুমহান পদক্ষেপ ও সুযোগ রেখেছিলেন, এককথায় বলা যায়, যে কোন কারনেই হোক তা উপেক্ষিত হয়েছে, যাতে মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জ্বীবিত জাতি মর্মাহত হয়েছে। বেসরকারি কলেজে কর্মরত গবেষক শিক্ষকগনের যেহেতু সহযোগী অধ্যাপক/অধ্যাপক পদে পদোন্নতির কোন সুযোগ নেই,(যদিও জাতীয় শিক্ষানীতি-২০১০ এর কৌশল মোতাবেক তা তাদের পাওয়ার কথা)পৃথক বিশেষ ইনক্রিমেন্ট এরও কোন ব্যবস্থা নেই তাই স্বাভাবিকভাবেই তাদের শেষ ভরসা ছিল ডিগ্রি কলেজে অধ্যক্ষ পদে আবেদনের সুযোগ লাভ করা। কিন্তু যেহেতু ভাগ্য তাদের প্রতি সুপ্রসন্ন নয়, তাই ২০২১ সালের এমপিও নীতিমালায় সেই শেষ সুযোগটিও বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তারা মানসিকভাবে বিষন্ন ও হতাশাগ্রস্থ। তাদের (অর্থাৎ পূর্বসূরীদের) এরূপ পরিণতি দেখে পরবর্তী প্রজন্মের মেধাবী ব্যক্তিবর্গ ও শিক্ষকগন গবেষনার প্রতি ক্রমান্বয়ে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন। অর্থাৎ জাতি ক্রমশ গবেষনা বিমুখ হচ্ছে। কেননা গবেষনা কর্মে অবদান রাখার পর যদি মূল্যায়নের পরিবর্তে অবমূল্যায়ন কিংবা মানসিক যন্ত্রনায় ছটফট করতে হয় তাহলে গবেষনা করে লাভ কি? যে দেশে গুণের কদর নেই, সেদেশে গুণির জন্ম হবে কিভাবে? বেসরকারি কলেজে কর্মরত উচ্চতর ডিগ্রিধারী গবেষক শিক্ষকগন ধরেই নিয়েছেন যে, বঙ্গবন্ধু প্রবর্তিত ১০% (পূর্বের ২০%) সরাসরি কোটা আর কোনদিন ফিরে আসবেনা, আর আসলেও বয়স অতিক্রান্ত হওয়ায় তাদের ভাগ্যে আর সরকারি কলেজে যাওয়ার সুযোগ হবেনা। অর্থাৎ তারা সবাই নিয়তিকে মেনে নিয়েছেন।

এমতাবস্থায়, গবেষক শিক্ষকদের হৃদয়ে রক্তক্ষরন ও মর্মবেদনার কথা উপলব্ধিপূর্বক এমপিওভুক্ত বেসরকারি কলেজসমূহে কর্মরত প্রয়োজনীয় যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতাসম্পন্ন গবেষক শিক্ষকদের এমপিওভুক্ত ডিগ্রি কলেজসমূহে অধ্যক্ষ পদে আবেদন ও নিয়োগের সুযোগ সম্বলিত বিধান এমপিও নীতিমালায় সন্নিবেশিত করে তাদের হতাশাগ্রস্ত মনে কিছুটা আশার আলো সঞ্চার করা যায় কিনা তা বিবেচনার জন্য শিক্ষা মন্ত্রনালয়সহ যথাযথ কর্তৃপক্ষসমূহের নিকট বিনীত আবেদন জানাচ্ছি। একই সাথে এই গভীর, হৃদয়বিদারক ও স্পর্শকাতর বিষয়টির প্রতি মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী, মাননীয় জনপ্রশাসন মন্ত্রী এবং সর্বোপরি জাতির জনকের সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর মানবিক ও সদয় দৃষ্টি আকর্ষন করছি।

লেখকঃ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রথম এমফিল ডিগ্রি প্রাপ্ত গবেষক, কলামিষ্ট, সঙ্গীত শিল্পী এবং সহকারী অধ্যাপক, ব্যবস্থাপনা বিভাগ, শংকুচাইল ডিগ্রি কলেজ, বুড়িচং, কুমিল্লা।  mdmoinuddinchowdhury.2012@gmail.com