ঘূর্নিঝড় সিত্রাংয়ে কুমিল্লার কৃষিতে ক্ষতি দেড় কোটি টাকা

# ক্ষতিগ্রস্থ ২৮ হাজারের বেশি কৃষকদের প্রণোদনার ব্যবস্থা করেছি- উপ পরিচালক
স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশ: ১ বছর আগে

কুমিল্লায় সিত্রাংয়ের প্রভাবে ১৭ উপজেলার ফসলি জমি ও সবজির জমির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এতে কৃষক ও সাধারণ ক্রেতাদের ওপর পড়েছে দামের প্রভাব। একদিকে শীতকালীন সবজি পুরোপুরি আসেনি। অন্যদিকে সিত্রাং। এ যেন মড়ার উপর খাঁড়ার ঘায়ের মত।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর কুমিল্লা সূত্রে জানা গেছে, কুমিল্লা এ বছর এক লক্ষ ১৬ হাজার ২২২হেক্টর জমিতে সবজি ও ধান চাষ হয়েছে। এর মাঝে এক হাজার ৬০৫ হেক্টর সবজি চাষ হয়েছে। বাকি এক লাখ ১৪ হাজার ৬১৭ হেক্টর জমিতে ধান চাষ হয়েছে। যার মাঝে ৫৬ হেক্টর জমির সবজি ও ধান ঘুর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে নষ্ট হয়ে গেছে। যার আর্থিক মূল্য প্রায় ১ কোটি ৭৭ লাখ ৬৪০ টাকা।
স্থানীয় কৃষকদের বক্তব্যে জানা গেছে, ক্ষতির পরিমান সরকারি হিসেবকেও ছাড়িয়ে যেতে পারে। অনেকে ব্যক্তিগতভাবে বাড়ির আঙ্গিনা বা কৃষি অধিদফতরের রেজিষ্ট্রেশনের বাইরেও সবজি চাষ করেছে। তাদেরও সবজি ও ধানি জমি নষ্ট হয়েছে। যার হিসেব নেই কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের কাছে।
সূত্র জানায়, কুমিল্লা বুড়িচং উপজেলার ময়নামতি ইউনিয়নের কালাকচুয়া গ্রামের কৃষক মো. মহসীন ও তার ভাতিজা মেহেদী হাসান মিলে ৫৪ শতক জমিতে পেপে গাছ রোপন করেছে। মোট ৬৮৫ টি গাছের প্রায় সবকটিতেই এসেছে ফল। এমন সময় সিত্রাংয়ের ঝড়ো হাওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১৭১টি গাছ। যার আনুমানিক ক্ষতি ৩ টন পেপে। বাজার মূল্যে যা প্রায় ১ লাখ ৮০ হাজার।
কৃষক মো. মহসীন বলেন, এক ঘুর্ণিঝড় আমার ঋণ বাড়িয়ে দিয়েছে। আমি প্রায় লাখ টাকার মতো কাঁচা পেপে বিক্রি করতে পেরেছি। যদি এগুলা না বিক্রি করতে পারতাম ক্ষতির পরিমাণ আরও বেশি হতো। যদি সরকার আমাদের দিকে না তাকায় তাহলে আমরা ঘুরে দাঁড়ানোর উপায় নেই।
উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা বানিন রায় বলেন, সিত্রাংয়ের ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের জন্য প্রনোদনা আসলে মহসিনের কথা আমরা মাথায় রেখেছি। তাছাড়া আমাদের স্বাভাবিক কার্যক্রম ও প্রনোদনার আওতায় তাকে আনার জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। উপজেলার বাকি কৃষকদের জন্যেও একই ব্যবস্থা নেয়া হবে।
কুমিল্লা নগরীর টমছম ব্রিজ বাজার, বাদশামিয়ার বাজার, নিউ মার্কেট বাজার, চকবাজার ও রাজগঞ্জ বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ঢেঁড়শ ৭০, পটল ৬০, কফি ১০০, শিম ১০০, করলা ৬০, গাজর ১৪০, বরবটি ৮০, কাকরল ৮০, পেপে ৩০ টাকা, ঝিঙা ৭০, বেগুন ৫০, টমেটু ১৮০, ধনিয়া ১৪০, আলু ৩০, মরিচ ৮০ থেকে ১০০, লাউ সাইজ হিসেবে ৬০ থেকে ৯০ পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। তবে সব বাজারেই দামের পার্থক্য রয়েছে ৫ থেকে ১৫ টাকা পর্যন্ত।
নিউ মার্কেট এলাকার ব্যবসায়ী মনোয়ার হোসেন বলেন, সবজি বেশি দামে কিনতে হয় তাই বিক্রিও করতে হয় বেশি দামে। আমাদের কিচ্ছু করার নেই।

টমছম ব্রিজ বাজারের ব্যবসায়ী আলমগীর হোসেন বলেন, মানুষ সবজি কম কিনে। কিন্তু আমরাতো আর কম আনতে পারিনা। অনেক সবজি নষ্টও হয়। তাই দাম বেশি না রাখলে পোষায় না।
এই সময়ে এত মূল্যবৃদ্ধির কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, শীতকালীন সবজি এখনও পুরোপুরি বাজারে আসেনি। এদিকে পুরাতন সবজিও কম। তাই দাম একটু বেশি। তাছাড়া ঘূর্ণিঝড় এসে আরও ক্ষতি করে দেয়ায় অনেক ফসল নষ্ট হয়েছে। তাই ক্ষতি পোষাতে অনেক কৃষক বেশি দামে বিক্রি করেন।
রাণীরবাজারের একাধিক ব্যবসায়ী বলেন, শুধু শাক, কলা আর আলু ছাড়া কোন সবজি ৫০ টাকার ভেতরে বিক্রি করতে পারেন না তারা। এটা হোক করলা বা মূলা। জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধিতে বেড়েছে পরিবহন খরচ, তার মাঝে শীতকাল আসন্ন, এর ওপরে সিত্রাং। সব মিলিয়ে হযবরল অবস্থা বাজারের।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর কুমিল্লার উপপরিচালক মিজানুর রহমান বলেন, শীতকালীন সবজি আসার পূর্বে একটা গ্যাপ পিরিয়ড থাকে। তখন দামটা সামান্য বেড়ে যায়। আমরা ক্ষতিগ্রস্থ ২৮ হাজারের বেশি কৃষকদের প্রণোদনার ব্যবস্থা করেছি। আরও একটি প্রণোদনার প্রকল্পের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। কুমিল্লার কৃষিতে সিত্রাংয়ের কোন বড় প্রভাব যেন না লাগে তাই এই ব্যবস্থা। আশাবাদী শিগগিরই যে সামান্য ক্ষতি হয়েছে তা পূরণ হবে।