বুধবার (২৮ মে) বিচারপতি মো. খসরুজ্জামানের একক হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন। অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় একই মামলায় ৯ বছরের দণ্ডপ্রাপ্ত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে। আদালত তারেক রহমানকেও খালাস দিয়েছেন।
আদালতে আপিলের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী এস এম শাহজাহান, কায়সার কামাল ও জাকির হোসেন ভূঁইয়া। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পক্ষে ছিলেন আইনজীবী আসিফ হাসান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ আব্দুল করিম।
তিনি আরও বলেন, সেনানিবাসে মইনুল রোডের বাড়িটি শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের পরিবারকে দেওয়া হয়েছিল। সেটাও এই মামলায় দুদক বলছে, এটা তারেক রহমানের অর্জিতসম্পদ এবং এটা অবৈধ সম্পদ। অথচ এটা সরকার নিয়মকানুন মেনে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। আরেকটা সম্পত্তি আছে গুলশানে। সেটাও রাষ্ট্রীয়ভাবে দেওয়া। ৩৩ টাকা মূল্যমানের। অথচ মামলায় তারেক রহমানকে দোষী সাব্যস্ত করে সাজা দেওয়া হয়েছিল। বিচারের নামে এ রকম প্রহসন আমি আমার ওকালতি জীবনে দেখিনি।
তারেক রহমানের খালাস প্রশ্নে আইনজীবী এস এম শাহজাহান বলেন, আমরা আদালতে বলেছি জুবাইদা রহমানের আপিল সামনে রয়েছে। তিনি আইন মেনে যথাযথভাবে আপিল করেছেন। আমাদের এখানে নজির আছে ২১ আগস্ট গ্রেনেড মামলা, গিয়াসউদ্দিন আল মামুনের মামলায়, জিয়া অরফ্যানেজ ট্রাস্ট ও চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় তারেক রহমানের আপিল ছিল না। কিন্তু আমরা প্রধান বিচারপতির আদালতে আবেদন করেছিলাম, যদি মামলায় প্রমাণ না হয় তাহলে যিনি আপিল করতে পারেননি, আপিলকারীকে যদি খালাস দেন সেটা তার বেলায়ও প্রযোজ্য হবে। সেই প্রার্থনা আদালত রেখেছেন। ইতোমধ্যে ৩/৪টি মামলায় তারেক রহমানকে খালাস দিয়েছেন। আমরা বলেছি, জুবাইদা রহমানের আপিল শুনতে গিয়ে যদি দেখেন যে, তারেক রহমানের কোনো সম্পত্তি অসদুপায়ে অর্জিত না, তার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত না। যদি জুবাইদা রহমান খালাস হন এই খালাসের বেনিফিট আপিল না করলেও তারেক রহমানকে দিতে পারেন। ইতোপূর্বে দেওয়ার নজির আছে। কোর্ট তখন বললেন সেগুলো দিতে। আমরা বুধবার সেগুলো দাখিল করব। আশা করি ন্যায়বিচার পাব। জুবাইদা রহমান খালাস পাবেন এবং ওনার স্বামী তারেক রহমানও খালাস পাবেন বলে আশা করি।
তার আগে গত ১৪ মে ডা. জুবাইদা রহমানের তিন বছরের কারাদণ্ডের রায়ের বিরুদ্ধে দায়ের করা আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করেছিলেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে জরিমানা স্থগিত করে ওইদিন আপিল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত তাকে জামিন দেওয়া হয়।
গত ১৩ মে আপিল দায়েরে ৫৮৭ দিনের বিলম্ব মার্জনা করেন হাইকোর্ট। বিলম্ব মার্জনার পর ডা. জুবাইদা রহমান সাজার রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন।
সম্পদের তথ্য গোপন ও জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে ২০০৭ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর তারেক রহমান, জুবাইদা রহমান ও তার মা সৈয়দা ইকবাল মান্দ বানুর বিরুদ্ধে রাজধানীর কাফরুল থানায় মামলা করে দুদক।
এ মামলার বিচার শেষে ২০২৩ সালের ২ আগস্ট জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে তারেক রহমানকে দুই ধারায় মোট ৯ বছর এবং তার স্ত্রী ডা. জুবাইদা রহমানকে তিন বছরের কারাদণ্ড দেন ঢাকা মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ আদালতের তৎকালীন বিচারক মো. আছাদুজ্জামান।
রায়ে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) আইন, ২০০৪-এর ২৬(২) ধারায় তারেক রহমানকে তিন বছর এবং ২৭(১) ধারায় ছয় বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। পাশাপাশি তাকে তিন কোটি টাকা জরিমানা করা হয়।
জুবাইদা রহমানকে ২৭(১) ধারায় তিন বছরের কারাদণ্ড ও ৩৫ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। পরে এক আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সরকারের নির্বাহী আদেশে তার সাজা এক বছরের জন্য স্থগিত করা হয়।
২০০৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর স্বামী তারেক রহমানের সঙ্গে লন্ডনের উদ্দেশে দেশ ছাড়েন ডা. জুবাইদা রহমান। ১৭ বছর পর চলতি বছরের ৬ মে শাশুড়ি খালেদা জিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশে ফিরে আসেন তিনি।