‘তাঁকে কুমিল্লা ছাড়ার কথা ওনারা বলতে পারেন না’

সাক্ষাৎকার: আরফানুল হক
স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশ: ২ years ago

আরফানুল হক: ইনশা আল্লাহ, আমার আশা, আমার বিশ্বাস, কুমিল্লার মানুষ নৌকার পক্ষেই রায় দেবে। আমি এক শ ভাগ আশাবাদী।

এত শক্ত আস্থার জায়গাটি তৈরি হলো কীভাবে?

আরফানুল হক: আমি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রার্থী। আমি কুমিল্লার মানুষের সেবা করব। আর আমার সেই সেবাকাজে জননেত্রী শেখ হাসিনা আমাকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করবেন। কুমিল্লার যে সমস্যাগুলো, তা গত ১৬ বছরেও লাস্ট মেয়র (মনিরুল হক) দূর করতে পারেননি। তিনি কুমিল্লার মানুষকে মুক্তি দিতে পারেননি। আমার বিশ্বাস, আমি যদি মেয়র নির্বাচিত হতে পারি, আমি কুমিল্লার মানুষের কোনো সমস্যা নিয়ে গেলে নেত্রী আমাকে নিরাশ করবেন না।
আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মেয়র। নেত্রী আমাকে মনোনয়ন দিয়েছেন।

আর এক দিন পর কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের নির্বাচন। নগরের সব সড়ক ও সড়কের আশপাশ ছেয়ে গেছে বিভিন্ন প্রার্থীর পোস্টারে।

আর এক দিন পর কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের নির্বাচন। নগরের সব সড়ক ও সড়কের আশপাশ ছেয়ে গেছে বিভিন্ন প্রার্থীর পোস্টারে।
ফাইল ছবি

তাহলে কি আপনি মনে করেন যিনি মেয়র ছিলেন, তিনি কিছু করতে পারেননি?

আরফানুল হক: অবশ্যই।

আরফানুল হক: তাহলে তো ঢাকাইয়্যা ভাষায় বলতে হয়, ‘আবার জিগায়’। আপনি একটু কুমিল্লা শহরে হাঁটেন। দেখেন কুমিল্লা শহরটাকে কী করেছে।

বিদায়ী মেয়র বলেছেন, তিনি অনেক কিছু করেছেন, আবার অনেক কিছু করতে পারেননি।

আরফানুল হক: কী করেছে, একটা এক্সাম্পল (উদাহরণ) দিতে বলেন।

আরফানুল হক: ফুটপাত কি করছে জানেন? ড্রেন ছোট করে ফুটপাত করেছে। ড্রেন ছোট করার কারণে ড্রেনের পানি রাস্তায়, আর রাস্তার পানি আমাদের বাসায়। সব ড্রেন ছোট করে ফেলেছে।

ভবিষ্যতে সিটি করপোরেশনে বড় বড় প্রকল্প আসছে। সেসব বিষয়ে আপনার দৃষ্টিভঙ্গি কী।

আরফানুল হক: আমি নতুন শহর করব, তিলোত্তমা কুমিল্লা করব।

আরফানুল হক: সবকিছুর মূলে এই জনপদের, কুমিল্লা-৬ সংসদীয় আসনের এমপি আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার সাহেব। তিনি যে প্রজেক্টগুলোকে মনে করেছেন এখনই দরকার, ওই প্রজেক্টগুলোই উনি স্থানীয় সরকারমন্ত্রীর কাছে সুপারিশ করেছেন। ওর (মনিরুল হক) কি প্রধানমন্ত্রীর কাছে যাওয়ার কোনো সুযোগ আছে? কুমিল্লার মানুষের জন্য উনিই (বাহাউদ্দিন) এগুলো এনে দিয়েছেন।

দল তো আপনার সঙ্গে আছে। স্থানীয় সংসদ সদস্যদের (বাহাউদ্দিন) সমর্থন বাড়তি পাওনা কি না।

আরফানুল হক: বাড়তি পাওনা আমার সব কাজের জন্য। কুমিল্লার মানুষের যে সমস্যাগুলো আছে, সেগুলোর সমাধানের জন্য আমি ওনার সঙ্গে পরামর্শ করব এবং আমার বিশ্বাস, আমার একজন মুরব্বি হিসেবে কুমিল্লার মানুষের আস্থার জায়গা উনি। উনি আমাকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করবেন।

আরফানুল হক: আমার পড়বে না, পড়বে সাক্কু (মনিরুল হক) সাহেবের ভোটব্যাংকে।

সেটি কীভাবে।

আরফানুল হক: বাহার ভাই কুমিল্লার ছেলে। সাক্কু সাহেব কিন্তু কুমিল্লার ছেলে না। আপনি খবর নেন ওনার বাবাকে কোথায় কবর দেওয়া হয়েছে। আকবর হোসেনকে (সাবেক মন্ত্রী ও সাক্কুর ফুফাতো ভাই) কোথায় কবর দিয়েছে, কুমিল্লায় কবর দেওয়া হয়নি।

আরফানুল হক: প্রশ্নই ওঠে না। আমি তো বললাম, আমার কথাটি আপনি বুঝেছেন কি না, জানি না। আমি নোংরা রাজনৈতিক ভাষায় কথা বলতে চাই না। বাহার ভাইয়ের মতো মানুষকে, উনি কুমিল্লা থেকে চলে যাওয়ার জন্য নির্বাচন কমিশনে চিঠি দিয়েছেন, দুই–দুইবার নালিশ করেছেন। কুমিল্লার সাংবাদিক, এমনকি আপনার কাছেও আমার প্রশ্ন রইল, বাহার ভাই কি আমার কোনো নির্বাচনী সভায় অংশ নিয়েছেন? কোনো পথসভায় অথবা নির্বাচনী প্রচারে আমার সঙ্গে উনি ছিলেন?

কিন্তু নির্বাচন কমিশনের নিজস্ব তদন্তে তো মনিরুল হকের অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে।

আরফানুল হক: ওনার থাকা উচিত-অনুচিত এটার সিদ্ধান্ত ওনারা (নির্বাচন কমিশন) নিতে পারেন না। যদি উনি কোনো নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করেন, তাহলে ওনাকে সাবধান করতে পারেন। কুমিল্লা ছাড়ার কথা ওনারা (নির্বাচন কমিশন) বলতে পারেন না। এটা ঠিক নয়, কোনো অবস্থাতেই সঠিক নয়। উনি তো গত নির্বাচনেও সীমার (গত মেয়র নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আঞ্জুম সুলতানা) জন্য কাজ করেছেন।

আরফানুল হক: ভোট চাওয়ার আগে কুমিল্লার মানুষকে বলেছি, আমি যদি নির্বাচিত হতে পারি, শপথ নেওয়ার পর আমার প্রথম কাজ হবে সিটি করপোরেশনের গত ১৬ বছরে (১০ বছর সিটি করপোরেশন, ৬ বছর পৌরসভার চেয়ারম্যান) যত দুর্নীতি হয়েছে, সবগুলোর শ্বেতপত্র প্রকাশ করব। এটা করব এই কারণে যে কুমিল্লার মানুষের টাকাপয়সা নষ্ট করা, লুটপাট যেন অন্য কোনো মেয়র করতে না পারে। এ জন্য আমি এটা করব এবং করবই।

আপনি দুর্নীতির শ্বেতপত্র প্রকাশের কথা বলছেন। কিন্তু বিদায়ী মেয়র বলেছেন, দুর্নীতির তথ্য-প্রমাণ থাকলে এত অপেক্ষা না করে এখনই মামলা করছেন না কেন?

আরফানুল হক: আমি মামলা করব কেন? আমি যখন একটা পদে যাব, আমি সিটি করপোরেশনের মেয়র পদের জন্য ইলেকশন করছি, মানুষ যদি আমাকে ভোট দিয়ে মেয়র করে, তখন আমার নৈতিক দায়িত্ব হবে শেষ ১০ বছর আমাদের সিটি মেয়র কী করেছেন। দুর্নীতির যে বিষয়গুলো আমার কাছে আছে, আমি সব প্রকাশ করব। আমি তো ওনাকে চ্যালেঞ্জ করেছি। উনি তো আমার চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হননি।

আরফানুল হক: দল যত বড় হবে, কিছু সমস্যা দলে থাকবে। আমার সঙ্গে আর ১৪-১৫ জন মনোনয়ন চেয়েছিল, নেত্রী আমাকে মনোনয়ন দিয়েছেন। আমি নির্বাচনী মাঠে আছি। এটুকু বলতে পারি, অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে এখন কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগ অনেক শক্তিশালী। সব দিক থেকেই মহানগর আওয়ামী লীগ একটি হৃষ্টপুষ্ট দল।

যদি জানতে চাই, আপনার সবচেয়ে ভালো দিক কোনটি।

আরফানুল হক: আমি মানুষকে ভালোবাসি।

আরফানুল হক: খুব বেশি সত্য কথা বলি।

নির্বাচনী মাঠে নিজের কোনো দুর্বলতা দেখেন?

আরফানুল হক: সব মানুষেরই তো কোনো না কোনো দুর্বলতা থাকে। আমার দুর্বলতা হচ্ছে, আমি প্রতিপক্ষকে আজ পর্যন্ত কোথাও কনডেমড করিনি বা তাঁর বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগও আনিনি। সিটি করপোরেশনের কথা আমি বলেছি যে তদন্ত করব, কাগজপত্র দেখব, ওনার (মনিরুল হক) যত দুর্নীতির কাগজপত্র আছে, সব প্রকাশ করব। কিন্তু নির্বাচনী প্রচারে শুধু উনিই নন, কারও বিরুদ্ধেই কোনো অভিযোগ আনিনি আজ পর্যন্ত। এখনো বলছি, নির্বাচনী মঠে আমাদের মধ্যে সম্পর্ক খারাপ হবে না।

আরফানুল হক: আমি আওয়ামী লীগ করি, আওয়ামী লীগের কথা বলতে পারি। আওয়ামী লীগের বিভিন্ন ইউনিয়ন, বিভিন্ন উপজেলার নেতারা আসতেই পারেন, আমার জন্য কথা বলতে পারেন, নৌকার জন্য কথা বলতেই পারেন। আজকে (গতকাল সোমবার) রাতেই ওরা সবাই যার যার এলাকায় চলে যাবে। আমরা এতটা নিস্তেজ হইনি যে বাইরের লোকজনের শক্তি দিয়ে আমরা কুমিল্লা শহরে শক্তিশালী হব। আমাদের শক্তিই যথেষ্ট। তবে এই শক্তি খারাপ কাজে ব্যবহার করব না।

ফলাফল যদি প্রতিকূলে যায়, কী করবেন।

আরফানুল হক: অবশ্যই যিনি জয়লাভ করবেন, তাঁকে ফুলের মালা দেব। চেষ্টা করব আমি প্রথম মালাটা দেওয়ার জন্য।

আরফানুল হক: না। সবশেষে এটা বলতে পারি, আমি ভয়কে জয় করে আজকের এই জায়গায় এসেছি।

আপনার প্রতিদ্বন্দ্বী দুজন প্রার্থী বিএনপির (এখন বহিষ্কৃত)। এর কি কোনো সুবিধা পাবেন?

আরফানুল হক: কিছু তো পাবই।

আরফানুল হক: এটা ঠিক নয়।