গোমতী নদীর চর কথাটি মনে এলেই মানসপটে ভেসে উঠে বর্ষায় পাহাড়ি ঢলে সব ফসল ও জনপদ তলিয়ে যাওয়া আর শুষ্ক মৌসুমে মাটিলুটের মহোৎসব। দিনরাত ভেকু, ভেলচা, এসকেভেটর আর ট্রাক্টরের দৌরাত্ম্যে ক্ষতবিক্ষত দুই পাড়ের শত শত একর ফসলি জমি। কখনো বন্যায় বা নদী ভাঙ্গনে কখনো আবার মাটি খেকোদের হাতে জমি হারানো যেন এ অঞ্চলের নিরীহ কৃষকদের নিয়তি।
তবে সেই অমোঘ নিয়তি এবং দুর্দশা কাটিয়ে উঠছেন কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলার কৃষকেরা। গোমতী নদীর চরের জমি মাটিখেকোদের হাতে তুলে না দিয়ে বেশ কিছু এলাকায় তাঁরা গড়ে তুলেছেন সবুজ বিপ্লব। বিগত কয়েক বছর ধরেই এখানে চাষ হচ্ছে শসা, করলা, চালকুমড়া, লাউ, মিষ্টি কুমড়াসহ নানা জাতের শাকসবজি।
উপজেলার বারেরার চর, খলিলপুর, আশানপুর ও বালিবাড়ির চরসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় কৃষকেরা শাকসবজি চাষ করে ঘুরে দাঁড়াচ্ছেন। বারেরার চর এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, অন্তত ১০ একর জমি জুড়ে মাচায় মাচায় ঝুলছে সবুজ করলা। তারা জানান, করলায় এবার বাম্পার ফলন হয়েছে। দামও ভালো পাওয়ায় খুশি কৃষকেরা।
স্থানীয় কৃষক বাচ্চু মিয়া জানান, “এবার ৪০ শতাংশ জমিতে করলার চাষে খরচ হয়েছে প্রায় ৩০ হাজার টাকা, আর বিক্রি হয়েছে প্রায় আড়াই লাখ টাকার করলা।” তিনি আরও জানান, করলার আগে একই মাচায় শসার চাষ করেছেন। একবার মাচা তৈরি করলে পর্যায়ক্রমে সেখানে শসা, করলা, লাউ, চালকুমড়াসহ একাধিক সবজি চাষ করা যায়। এতে উৎপাদন খরচ ও পরিশ্রম—দুই-ই কমে।
একই এলাকার কৃষক আবু কালাম বলেন, “গোমতী চরের পলিমাটি অত্যন্ত উর্বর। যে কোনো ফসলের জন্যই উপযোগী। অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার সবজির ফলন ভালো হয়েছে এবং দামও ভালো পেয়েছি। বর্তমানে ৭০ শতাংশ জমিতে করলা চাষ করেছি। ৬৫-৭০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করতে পারছি। এখন পর্যন্ত প্রায় সাড়ে চার লক্ষ টাকার করলা বিক্রি করেছি।”
উপজেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, এ বছর দেবিদ্বার উপজেলায় ৩৫ হেক্টর জমিতে করলার আবাদ হয়েছে। ফলন ও বাজারদর—দুটিই আশানুরূপ।
চরাঞ্চলে করলার পাশাপাশি অন্যান্য শাকসবজিরও চাষ হয়। তবে এবারের করলার সাফল্য কৃষকদের মধ্যে নতুন আশার সঞ্চার করেছে। বাজারে করলার চাহিদা ও দাম ভালো থাকায় কৃষকেরা লাভবান হচ্ছেন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা বানিন রায় জানান, “চরাঞ্চলের কৃষকদের সার্বিক সহযোগিতা ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আরও বেশি ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে। তাঁদের মান উন্নয়ন ও নিরাপদ ফসল উৎপাদনে প্রয়োজনীয় উপকরণ সরবরাহসহ সব ধরনের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।”