নগরীতে চরম ভোগান্তিতে পথচারীরা রাস্তার উপরেই বাজার

# শুধু রাস্তা নয় বিভিন্ন স্কুলের সামনেও এসব হাটবাজার বসে- মেয়র রিফাত
জাহিদ হাসান নাঈম ।
প্রকাশ: ১ বছর আগে

কুমিল্লা নগরীর বিভিন্ন স্থানে অবৈধ ভাবে বাজার গড়ে উঠেছে। কোথায়ও আবার মুল বাজার থেকে বাহিরে এসে ফুটপাত আবার ফুটপাত শেষ করে মুল রাস্তার উপর পসরা সাজিয়ে বসেছে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। এসব বাজারে ক্রেতাদের চাহিদা থাকায় বিক্রেতারাও দখল করে আছে রাস্তা।ফলে পথচারীদের ভোগান্তি চরমে। রাস্তার উপর বাজার বসায় অহরহ ঘটছে দূর্ঘটনাও। বিক্ষুদ্ধ কন্ঠে নগরবাসীরা জানান, ৫ বছর পর পর মেয়র , কাউন্সিলর আসে আবার যায় কিন্তু ভাগ্যের পরিবর্তন হয় না তাদের।
গত দুই দিন নগরীর বিভিন্ন পয়েন্টে সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, নগরীর রানীর বাজার, টমছমব্রিজ, পদুয়াবাজার, ছোটরা, বাদশামিয়ার বাজারসহ নগরীর নানা পয়েন্টে পয়েন্টে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি নিয়ে বসে রাস্তা দখল করে আছে। এতে ভয়াবহ যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। নাগরিকদের ও যানবাহনের চলাচলে নানা বিরম্বনায় পড়তে হলেও নিরব ভুমিকা পালন করছে কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন ও আইনশৃংখলা বাহিনী।
এ সকল স্থানে নানান রকম সবজি, মাছের পসরা সাজানো আছে। কেউ ভ্যানে করে, কেউ বা ঝুড়ি পাতিয়ে বসেছে রাস্তার উপরেই। এছাড়া ঝুপড়িঘর করে চায়ের দোকান, ফলের দোকান ফুচকা-চটপটির দোকানও গড়ে তোলা হয়েছে।
রাস্তার উপর এ সকল অস্থায়ী বাজার বসার কারণে প্রতিদিন সকাল হতেই শুরু হয় যানজট। এই যানজটের কারণে সময় মত ছাত্রছাত্রীরা পৌঁছতে পারে না শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আর অফিসে যাওয়া নাগরিকদেরও পোহাতে হয় একই ভোগান্তি।
কুমিল্লা শহরতলীর সাতোরা এলাকা থেকে প্রতিদিন বাচ্চাকে মডার্ন স্কুলে দিয়ে আসেন আফরোজা আকতার। কিন্তু, প্রতিদিনই এই যানঝটের ভয়ে তার অনেক আগেই বাড়ি থেকে বের হয়ে যেতে হয় বাচ্চাকে নিয়ে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “যানজটের ভয়ে তাড়াতাড়ি বের হই বাড়ি থেকে। বাচ্চার স্কুলে দেরি হলে, পরে ক্লাসে ঢুকতে দেয় না স্যারেরা।” আফরোজা আকতারের মতো এমন আরো অনেক অভিভাবকও একই অভিযোগ করেছেন।

বাচ্চাকে স্কুলে দিতে আসা আবদুল লতিফ বলেন, মডার্ণ স্কুলে যাওয়ার জন্য একমাত্র রাস্তা এটি। অন্য রাস্তা দিয়ে গেলে ঘুরে যেতে হয়, আবার ওখানেও যানজটে পড়তে হয়। রাস্তাটি সরু হওয়াতে দুই লাইনে গাড়ি চলতে পারে না। তার মধ্যে রাস্তার পাশে এমন বাজার বসায় দুর্ভোগ বেড়েই চলে। আশপাশে বাজার না থাকায় আমিও মাঝে মাঝে এখানে বাজার করি। তাই বলে এই নয় যে, আমি রাস্তার উপর বাজার বসাকে সমর্থন করি।”
অন্যদিকে আরেকজন পথচারী কামাল বলেন, সারাদিন অফিস করে বাসায় ফেরার পথে শহরের রাস্তাগুলোর যানজট মাড়িয়ে এসে রাস্তার ভেতরের গলিতেও যদি যানজট পাই, ব্যাপারটা সত্যি ভীষণ যন্ত্রণাদায়ক। এটার প্রতিকার হওয়া জরুরি।
তবে, রানীর বাজারের বিক্রেতা মফিজ মিয়া বলেন, আমরা গরিব মানুষ। আমাদের এত টাকা নেই যে, বাজারে একটা দোকান নিয়ে বসব। তাই পেটের দায়ে রাস্তার ওপর বসি। পরিবারের ভরণপোষণের ভার আমার একার। তাই অভাবের তাড়নায় বসতে হয়। আরেকজন বিক্রেতা সেলিম মিয়া বলেন, এখানে বেচাকেনা খুব ভালো। প্রায় সারাদিনই ক্রেতা থাকে। কয়েকদিন পর পর আমাদের তুলে দেয়া হয়। তারপরও বসি, কারণ এখানে বসলে কিছু টাকা উপার্জন করা যায়। যানজট বাজারের জন্যই হয়। কিন্তু পেটের জন্য এখানে দোকান নিয়ে বসতে হয়।
নগরীর প্রায় প্রত্যেকটি পয়েন্টেই এমন ফুটপাতে অবৈধ দোকান কিংবা সবজির বাজারের দেখা মিলে। যার কারণে পথচারীদেরও ফুটপাত দিয়ে হাঁটতে অসুবিধা হয় বিধায় বাধ্য হয়ে রাস্তা দিয়ে হাঁটেন। এতে দূর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা থাকে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে, কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আরফানুল হক রিফাত বলেন, জনগণ সচেতন না হলে, কখনও এই হাট বাজার বন্ধ হবে না। শুধু রাস্তা নয় বিভিন্ন স্কুলের সামনেও এসব হাটবাজার বসে, জনগণ তাদের থেকেইতো বাজার করছে। সিটি কর্পোরেশন এখন যানজট নিয়ে কাজ করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। এখন আমাদের প্লান অনুযায়ী আগামী কয়েক বছরে ৭৫% যানজট বন্ধ হয়ে যাবে বলে আশাবাদী। আর জনগণ বাজার থেকে তরিতরকারি না কেনায় সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে। তাই জনগণকেই সচেতন হতে হবে।