নদী দূষণে দূর্বিসহ বাংলাদেশ — অধ্যাপক ডা: মোসলেহ উদ্দিন আহমেদ

স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশ: ২ years ago

নদী কমিশন ৫৭ হাজার অবৈধ দখলদারের একটি তালিকা প্রকাশ করেছে। সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসন ও বিআইডব্লিউটিএর সহায়তায় ১৪ হাজার অবৈধ দখলদারকে উচ্ছেদ করা সম্ভব হয়েছে। এ উচ্ছেদ কার্য্য চলমান থাকা দরকার। প্রয়াত সাংসদ আসলামুল হক জাতীয় নদীরক্ষা কমিশনের কর্তৃত্ত্ব নিয়ে চ্যালেঞ্জ করেছিলেন। কিন্তু তাঁর এ চ্যালেঞ্জ নাকচ করে পরবর্তী সময়ে অবৈধ দখল করা নদীর জমি জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন চিহ্নিত করে দিয়েছে এবং সে অনুযায়ী বিআইডব্লিউটিএ এবং জেলা প্রশাসন উচ্ছেদ কার্যক্রম পরিচালনা করেছে। গত মার্চ’২২ চাঁদপুর জেলা প্রশাসন জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনকে অবহিত করেন যে সেলিম খান নামের এক ব্যক্তি বহু বছর ধরে অবৈধ ভাবে ৩০০ থেকে ৪০০টি ড্রেজার বাল্কহেড দিয়ে মেঘনার ইলিশের অভয় আশ্রম এলাকায় বালু উত্তোলন করে আসছে। মৎস্য বিজ্ঞানীরা আশঙ্কা প্রকাশ করেন যে এই ব্যাপক ড্রেজিং এর কারনে ইলিশের প্রজনন ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন চাঁদপুর জেলা প্রশাসনকে অবৈধ বালু উত্তোলনকারীকে গ্রেপ্তার করার জন্য নির্দেশনা দেন। নির্দেশনা মোতাবেক চাঁদপুর জেলা প্রশাসন দৃঢ়তার সঙ্গে অভিযান পরিচালনা করে সব বালু সন্ত্রাসীকে গ্রেপ্তার করেন এবং বেশ কিছু ড্রেজার ও বাল্কহেড জব্দ করতে সক্ষম হন। মেঘনার ক্ষতিগ্রস্থ এলাকা সম্পূর্ণভাবে ড্রেজিং মুক্ত। চাঁদপুর জেলা প্রশাসনের এ কার্যক্রম অবশ্যই প্রশংসার দাবী রাখে।

নদীরক্ষা কমিশন একটি মাষ্টার প্ল্যান করেছিল যা কোভিড-১৯ এর কারনে অনেকটা পিছিয়ে গেছে। এই মাষ্টার প্ল্যান পূর্ণদমে চালু থাকা দেশের পরিবেশ রক্ষায় অতীব প্রয়োজনীয়। তুরাগনদী রক্ষা নিয়ে উচ্চ আদালত নদীকে জীবন্ত সত্ত্বা হিসেবে রায় দিয়েছেন কিন্তু এই জীবন্ত সন্ত্বাকে যারা হত্যা করেছেন তাদের বিরুদ্ধে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের আইন সংশোধন করে অচিরেই যথোপযুক্ত ব্যবস্থা নেয়া উচিত। ঢাকার চারপাশের বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, টঙ্গী খাল ও বালু নদীগুলোর অবৈধ দখল করা জমি বহুলাংশে উদ্ধার করা হয়েছে। তবে নদীতে দূষণ বন্ধ করার ব্যাপারে কোন দিক নির্দেশনা নাই। এই ভয়াবহ মাত্রার দূষনের কারন বাসাবাড়ীর পয়োবর্জ্য সিটি কর্পোশেনের ড্রেনের মাধ্যমে নগরীর খালগুলো দিয়ে সরাসরি নদীতে নির্গত হওয়া। প্রায় ২ কোটি নাগরিকের এই ঢাকা এখন একটি পয়োবর্জ্য বিপর্য্যস্ত নগরী। এই বিপর্যয়ের মূল কারন নগরীতে পর্যাপ্ত সুয়ারেজ লাইন নির্মানে ঢাকা ওয়াসার ব্যর্থতা মহানগরী ও তার আশপাশের কলকারখানাগুলো থেকে অব্যাহতভাবে নদীগুলোতে নানা কৌশলে রাসায়নিক বর্জ্য ফেলা হয়। জৈব-অজৈব বর্জ্যরে কারনে ঢাকার চারপাশের নদীগুলো এমনকি শীতলক্ষা বংশী ও বাল্কনদীও আজ দূষনের কারনে অর্ধমৃত পরিণত হয়েছে।

শুধু রাজধানী ঢাকাই নয়। সমগ্র দেশেই এখন এই চিত্র দেখা যায়। দেশের সকল নদীরই দূষণমুক্ত করার সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য থাকা বাঞ্চনীয়। সেই সঙ্গে দূষণকারী সকল সংস্থা প্রতিষ্ঠানের প্রতি নদী, জলাভূমিতে দূষণ বন্ধ করার নির্দেশনা দিতে হবে। অচিরেই সকল সরকারি বেসরকারী সংস্থা যারা দূষণ কাজে ব্যস্ত থাকে তাদের সুনির্দিষ্টভাবে এ কাজ বন্ধের নির্দেশনা দেয়ার ব্যবস্থা নিতে হবে। এ কাজ তদারকীর জন্য নদী কমিশনকে আরও লোকবল দিয়ে সাজাতে হবে। বুড়িগঙ্গা, বালু ও তুরাগনদের সীমানা চিহ্নিত করা হয়েছে। পর্য্যায়ক্রমে প্রতিটি নদীরই সীমানা চিহ্নিত করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। জাতীয় নদীরক্ষা কমিশন বাংলাদেশের সব নদ-নদী , জলাভূমির অভিভাবক সংস্থা হিসেবে সকল ধরনের দখল, দূষণ, নাব্যতার বিষয়ে সদা সজাগ। জনসংখ্যার চাপ, উন্নয়ন কর্মকান্ড, আন্ত:দেশীয় নদীগুলোর উজান দেশে অত্যধিক পাানি প্রত্যাহার, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে দেশের নদ-নদীগুলোতে নানাহ সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন এসব সমস্যা চিহিৃত করে তার যথাযথ সমাধানের জন্য সুপারিশ ও নির্দেশনা সংশ্লিষ্ট বিভাগকে নিয়মিত অবহিত করে। সংশ্লিষ্ট বিভাগ প্রদত্ত সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন করলেই দখল ও দূষণ থেকে গোটা জাতি রক্ষা পেতে পারে। প্রক্রীয়াধীন বলে ফেলে রাখলে সকল নদ নদীই ইকোলজিক্যালি ডেড হয়ে যাবে। নদী মাতৃক বাংলাদেশ আর বলা যাবে না।

সাবেক অধ্যক্ষ, কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ

সভাপতি, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) কুমিল্লা অঞ্চল