প্রকৌশলীর ভুলে মাঝপথে আটকা ৫ সড়কের পিচঢালাই

স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশ: ১ বছর আগে

চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) ভুলে মাঝপথে থেমে আছে পাঁচ সড়কের কাজ। তাই এক বছর ধরে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে স্থানীয় বাসিন্দাদের। অন্যদিকে হারিয়ে গেছে রাস্তা নির্মাণের জন্য রাখা ইটসহ বিভিন্ন উপকরণ।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গোমস্তাপুর উপজেলার পাঁচটি ছোট সড়কের পিচঢালাই নির্মাণ ব্যয় ধরা হয় ৪৮ লাখ ৩৪ হাজার ৩৪৫ টাকা। কিন্তু এসব রাস্তায় থাকা পুরোনো ইটের দাম ১১ লাখ টাকা নির্ধারণের কথা থাকলেও এলজিইডির প্রকৌশলী ভুলে তা করেন ২৩ লাখ টাকা। ২০২১-২২ অর্থবছরে এ পাঁচ সড়কের কাজ শুরু করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। পরে কাজের প্রাথমিক বিল নিতে গিয়ে এমন ভুল দেখতে পেয়ে তারা কাজ বন্ধ রাখে।

চকপুস্তুম এলাকার বাসিন্দা রফিক আলী বলেন, ‘আমাদের ইটের রাস্তাই ভালো ছিল। খামাখা পিচঢালাই রাস্তা করতে গিয়ে আগের রাস্তা ভেঙে ফেলেছে। এক বছর ধরে এভাবে ইট উঠিয়ে রাস্তায় বালু ফেলে রেখেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এক বছর ধরে এভাবে পড়ে আছে। কেন কীভাবে এমন অবস্থায় রাস্তার চলমান কাজ ফেলে গেলো, তা আমরা জানি না। ক্ষোভে বেশকিছু ইটসহ উপকরণ নিয়ে গেছেন স্থানীয়রা।’

স্কুলশিক্ষক মাহবুব আহমেদ বলেন, ‘বালুর ওপর দিয়ে স্কুলে যেতে শিক্ষার্থীদের নানা সমস্যায় পড়তে হয়। বছর ধরে মাঝপথে পড়ে থাকা রাস্তার কাজ দ্রুত সংস্কার প্রয়োজন। তা না হলে সামনে বর্ষা মৌসুমে বড় ধরনের বিপদে পড়বে স্থানীয় বাসিন্দা, পথচারী ও শিক্ষার্থীরা।’

গৃহবধূ শাহনাজ বেগম বলেন, ‘বছরখানেক আগে রাস্তার কাজ শুরু হয়। সেসময় আগের ইটগুলো তুলে নেওয়া হয়। পরে তাতে বালু ভরাট করা হয়। রাস্তার দুই দিকে ফেলে রাখা হয় ইট খোয়া বালু। এরপর হঠাৎ করেই কাজ বন্ধ হয়ে যায়। এভাবে কাজ বন্ধের দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলে স্থানীয়রা এসব মালামাল নিজেদের কাজে ব্যবহারের জন্য নিয়ে যায়।’

এ কাজের ঠিকাদার মেসবাহুল সাকের জঙ্গির দাবি, ‘সব নিয়ম মেনেই কাজ শুরু করেছিলাম। এরপর প্রাথমিক বিল নিতে গেলে জানতে পারি, এলজিইডির ক্যালকুলেশনের ভুলে ১১ লাখ টাকার পরিবর্তে ২৩ লাখ টাকা হয়েছে। যার ১২ লাখ টাকা বেশি। এ নিয়ে সঠিক এস্টিমেট বা প্রাক্কলিত ব্যয় নির্ধারণ করার আবেদন করলেও তা সংশোধন না করায় কাজ শুরু করতে পারিনি।’

তিনি আরও বলেন, ‘একটি দায়িত্বশীল অফিসে থেকেও উপজেলা এলজিইডির এমন ভুল কাজের খেসারত দিতে হচ্ছে আমাদেরসহ স্থানীয় বাসিন্দা ও পথচারীদের। এমনকি জেলা এলজিইডি অফিসের তদারকির পর তা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের পাঠানো হয়। ভুল পাওয়ার পর একাধিকবার তাদের বলার পরও সুরাহা হয়নি। এক বছরে মালামালের দামও বেড়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হলেও তবুও আমরা কাজ শুরু করতে চাই।’

নিজেদের দায় স্বীকার করেছেন গোমস্তাপুর উপজেলা এলজিইডির প্রকৌশলী নূরুল আফসার মোহাম্মদ সুলতানুল ইমাম। তিনি বলেন, ‘উপজেলা এলজিইডির এস্টিমেট বা প্রাক্কলিত ব্যয়ে ভুলের কারণেই এ পাঁচটি রাস্তার কাজ আটকে আছে। আমরা সংশোধন করে তা আবারও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠিয়েছি। আশা করছি, শিগগির কাজ শুরু হবে।’

জেলা এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মোজাহার আলী বলেন, কাজ শুরুর পর আমাদের অফিসের ভুলের বিষয়টি জেনেছি। পরে তা সংশোধনের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। সংশোধিত এস্টিমেটের অনুমোদন পেলেই কাজ শুরু হবে।