বন্ধু ও উস্তাদের কাছে শুনে শুনে কোরআনে হাফেজ হন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ইকবাল

স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশ: ১ বছর আগে

# অন্ধ হয়েও চা বিক্রি করে সংসার চালান
# অনুষ্ঠান করেন বিবিসি বাংলা ও বাংলাদেশ বেতারে
# এলাকার নানা সামাজিক কাজে জড়িত
# স্বনির্ভর ইকবাল স্বপ্ন দেখেন নিজ জনপদকে এগিয়ে নিতে

হাফেজ মো. ইকবাল হোসেন। পাঠশালায় ভর্তি হওয়ার আগে অজানা রোগে হারিয়েছেন দৃষ্টিশক্তি। অদম্য ইচ্ছায় তিনি হয়েছেন হাফেজে কুরআন। অন্ধত্ব জয় করে হাল ধরেছেন সংসারের। স্বনির্ভর হয়ে পরিচালনা করেন নিজস্ব ব্যবসা। যুক্ত রয়েছেন সমাজিক কাজকর্ম ও উপস্থাপনায়। স্রোতা হিসাবে পুরষ্কার পেয়েছেন বিবিসি বাংলা ও বাংলাদেশ বেতার থেকে। স্বপ্ন দেখেন শশীদল জনপদকে এগিয়ে নিতে।
সূত্রমতে, হাফেজ মো. ইকবাল। বাড়ি কুমিল্লা জেলার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার নাগাইশ গ্রামে। সাড়ে ৪ বছর বয়সেই জ্বরে আক্রান্ত হয়ে চোখের দৃষ্টি হারান। নাইঘর গ্রামে হাফেজিয়া মাদ্রাসায় ভর্তি হন। বন্ধুদের কাছে শুনে শুনে ৩০ পারা কোরআন মুখস্থ করে হাফেজ হন।
নাগাইশ গ্রামের বাসিন্দা নজরুল ইসলাম বলেন, ইকবাল আমার ভাতিজা। তার আগ্রহ আর মেধা শক্তি দিয়ে আল্লাহর রহমতে হাফেজে কুরআন হয়েছে। বাড়ির সামনে সে একটা চায়ের দোকান পরিচালনা করে। সে যা পায় তা দিয়ে সংসার চালায়। নিজে রেডিও শোনে, অন্যদের রেডিও শোনার জন্য বলে।
অন্ধ হাফেজ মো. ইকবাল হোসেন বলেন, আমার বয়স যখন সাড়ে চার বছর তখন হাম বা এ জাতীয় কোন একটা রোগ হয়। সঠিক চিকিৎসার অভাবে আমি দৃষ্টি হারাই। আর পড়া লেখা হয়নি। পরে বয়স যখন ১০-১২ হলো আমি হেফজ বিভাগে ভর্তি হলাম। উস্তাদ ও বন্ধুদের কাছে শুনে শুনে হাফেজ হই।।
নাইঘর গ্রামের হাজী রেহান উদ্দিন হাফিজিয়া মাদ্রাসা থেকে হাফেজ হই। ইমামতি বা অন্যকাজে নানা প্রতিবন্ধকতা দেখি। ২০১০ সালে বিবাহ করি। একটা সময় বাড়ির সামনে এ দোকান দিয়ে ব্যবসা শুরু করি। বর্তমান স্ত্রী, এক ছেলে ও দুই মেয়ে নিয়ে আমার সংসার। বড় ছেলে এ বছর হেফজ শেষ করেছে। আমার সখ হলো সমাজিক কাজ করা, উপস্থাপনা করা। এলাকাকাসীদের নিয়ে একটি সমাজিক সংগঠন করেছি মুরাদ বেতার যুব সংঘ।
উপস্থাপনার জন্য যখন ডাক আসে, যাই। বিবিসি বাংলা ও বাংলাদেশ বেতার থেকে বহুবার পুরষ্কার পেয়েছি। আমার স্বপ্ন হলো নিজ ইউনিয়ন, নিজ গ্রামের মানুষের কল্যাণে কাজ করা।
দৈনিক বুড়িচং-ব্রাক্ষণপাড়া পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক সৈয়দ আহাম্মদ লাভলু বলেন, হাফেজ ইকবাল একজন সংগঠক, বেতারের উপস্থাপক । সে হাফেজ মানুষের কল্যাণে কাজ করতে খুব পছন্দ করে।
হাফেজ ইকবাল আরো বলেন, মানুষ চেষ্টা করলে অনেক অসাধ্য কাজ সাধন করতে পারে। আমি আমার সন্তানদের উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করতে চাই এবং একটি সুষ্ঠু ও সুন্দর সমাজ গঠন করতে এলাকাবাসী সার্বিক সহযোগিতা কামনা করছি।

শশীদল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আতিকুর রহমান রিয়াদ বলেন, সে আমার পরিচিত। একজন সংগ্রামী যুবক। অন্যদের জন্য আদর্শ ও অনুকরণীয়। আমি তার মঙ্গল কামনা করছি।