বাখরাবাদ গ্যাস ফিল্ডের ডিজিএম জিয়াউল কবিরের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ

একই পদে ১৯ বছর
জাহিদ হাসান নাইম
প্রকাশ: ২ সপ্তাহ আগে

 

 

 

কুমিল্লার মুরাদনগরে অবস্থিত বাখরাবাদ গ্যাস ফিল্ড কোম্পানিতে উপ-মহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) পদে টানা ১৯ বছর ধরে কর্মরত জিয়াউল কবির। সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী তিন বছর অন্তর বদলির নিয়ম থাকলেও রহস্যজনক কারণে প্রায় দুই দশক ধরে একই পদে বহাল রয়েছেন তিনি। দীর্ঘ সময় এক জায়গায় থাকার সুযোগে গড়ে তুলেছেন প্রভাবশালী অবস্থান। তার বিরুদ্ধে জমি ও গাছ বিক্রি, ঠিকাদারি কাজে অনিয়মসহ নানা অভিযোগ উঠেছে।

 

২০০৬ সালের ডিসেম্বরে ডিজিএম হিসেবে যোগ দেন জিয়াউল কবির। এরপর থেকে একটানা একই পদে রয়েছেন। অভিযোগ রয়েছে, তিনি স্থানীয় প্রভাবশালী মহলের ছত্রছায়ায় থেকে বছরের পর বছর বদলি এড়িয়ে গেছেন। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে দাফতরিক ক্ষমতা ব্যবহার করে বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির জালে জড়িয়ে পড়েছেন।

 

সম্প্রতি গ্যাস ফিল্ডের মূল ফটক থেকে প্রায় ২৪০ মিটার রাস্তা এবং ড্রেন নির্মাণে ৫১ লাখ টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। কাজের দায়িত্ব পান মেসার্স কাজী জাহাঙ্গীর ট্রেড লিমিটেড। কিন্তু প্রকল্পের আওতায় খনন করা মাটি গোপনে বিক্রির অভিযোগ ওঠে জিয়াউল কবিরের বিরুদ্ধে।

 

স্থানীয় সূত্র জানায়, ওই মাটি প্রায় ১০০ ট্রাক্টরে করে বিক্রি করা হয় পাশের বল্লবদী গ্রামের মুকবল হোসেনের কাছে। প্রতি ট্রাক্টরের জন্য নেয়া হয় ১৩০০ টাকা করে।

 

মাটি কেনার কথা স্বীকার করে মুকবল হোসেন বলেন, ঠিকাদারের মাধ্যমে আমি ১০-১২ ট্রাক্টর মাটি কিনেছি। এসময় মকবুল রাস্তার মাটির কথা বলে পরে আবার ইনিয়ে বিনিয়ে মাটি কোত্থেকে কিনা হয়েছে সেটা অস্বীকার করেন এই প্রতিবেদকের কাছে।

 

কিন্তু সরেজমিনে মকবুলের মাটি ফেলার স্থানে গিয়ে দেখা যায়, রাস্তা থেকে যে মাটিগুলো তোলা হয়েছিলো, সেগুলোই মকবুলের জায়গায় ফেলা হয়েছে।

 

তবে এ বিষয়ে বাখরাবাদ গ্যাস ফিল্ডের সাইট ইঞ্জিনিয়ার মো. সুমন বলেন, বিষয়টি সঠিক নয়। কাজের সবকিছু ঠিকাদার জানেন।

 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিজিএম জিয়াউল কবির অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, এসব আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র। আমি কোনো মাটি বিক্রি করিনি, কাজ করছে ঠিকাদার।

 

তবে, জিয়াউল কবির বলেন, আমি মাটি বিক্রি না করলেও এলাকাবাসীদের আবদারে কিছু মাটি মসজিদ ও কবরস্থানে দিয়েছি। এলাকাবাসীরাও কিছু নিয়েছেন আবদার করে। তবে, সেখান থেকে কোনো টাকা নেওয়া হয় নি।

 

তবে স্থানীয় ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষ বলছেন, বিষয়টি সবাই জানে। বাজারের ব্যবসায়ী আক্তার হোসেন বলেন, রাস্তার মাটি বাইরে ট্রাকে করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এটা ডিজিএম করেছে নাকি ঠিকাদার করেছে তা ঠিক বলতে পারি না।

 

জিয়াউল কবিরের বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ রয়েছে—গ্যাস ফিল্ডের অভ্যন্তরে গাছ বিক্রি, ইটিপি প্রকল্পে অনিয়ম, জমির মাটি থেকে মাটি বিক্রি করে লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ এবং নিজের পছন্দের ঠিকাদার দিয়ে কাজ করানোর অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

 

অভিযোগ আছে, ফিল্ডের কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরও নিয়োগ দেয়া হয় তার ইচ্ছেমতো। তার বিরুদ্ধাচরণ করলে নানাভাবে হয়রানি করা হয় বলে অভিযোগ করেছেন একাধিক কর্মচারী।

 

জানা গেছে, জিয়াউল কবির নিজেকে বুয়েট ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি দাবি করেন এবং আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা ও কুমিল্লা-১ আসনের সাবেক এমপি ইঞ্জিনিয়ার আব্দুর সবুরের ঘনিষ্ঠ বলেও পরিচয় দিয়ে থাকতেন। তার ব্যক্তিগত ফেসবুকেও এর ইঙ্গিত মেলে—যেখানে তিনি লিখেছেন, “বাংলাদেশের অপর নাম শেখ মুজিবুর রহমান”, “মুজিব আমার চেতনা, মুজিব আমার নিঃশ্বাস”।

 

সরকারি বাংলো ব্যবহার নিয়েও রয়েছে প্রশ্ন। প্রায় আড়াই কোটি টাকা মূল্যের বাংলোটি ব্যক্তিগতভাবে ভোগ করলেও সরকারকে তিনি ডরমেটরি হিসেবে ভাড়া দিয়ে থাকেন মাত্র ১৫০০ টাকা মাসিক হারে।

 

ইটিপি প্রকল্পে অনিয়মের বিষয়ে জানতে চাইলে জিয়াউল কবির আরও বলেন, কাজের বরাদ্দ অনুযায়ী একটু বেশি কাজ করেছি, কিছু মাটি পুকুর পাড়ে ফেলেছি।

 

স্থানীয়দের দাবি, এসব অভিযোগের নিরপেক্ষ তদন্ত হওয়া দরকার। দীর্ঘদিন ধরে এক ব্যক্তির কর্তৃত্বে প্রতিষ্ঠানটি দুর্নীতির আশ্রয়ে পরিচালিত হচ্ছে বলে তারা আশঙ্কা প্রকাশ করেন।