বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সিনিয়র নেতারা ঢাকায় এবং মনোনয়নপ্রত্যাশীরা নিজ নিজ এলাকায় ঈদুল ফিতর উদযাপন করবেন। নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত হচ্ছেন নেতারা। ঈদে গ্রামে জনসংযোগের কাজ কিছুটা এগিয়ে নিতে চান তারা।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ঢাকায় ঈদ করবেন। ঈদের দিন প্রধান উপদেষ্টার আমন্ত্রণে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর শুভেচ্ছা জানাতে যাবেন। এর আগে ঈদের দিন সকালে তিনি দলের স্থায়ী কমিটির নেতাদের নিয়ে সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মাজারে শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন। ঈদের দিন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এবং ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের সঙ্গে ভার্চুয়ালি ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন।
স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, জমিরউদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, সেলিমা রহমান ও সালাহউদ্দিন আহমেদ ঢাকায় ঈদ করবেন। এর মধ্যে সালাহউদ্দিন আহমেদের নিজ এলাকা কক্সবাজারে যাওয়ার কথা রয়েছে। স্থায়ী কমিটির সদস্য আব্দুল মঈন খান ও এজেডএম জাহিদ হোসেন ঈদ করবেন লন্ডনে। জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী ঈদ করবেন ঢাকায়।
এবারের ঈদ উৎসব নির্বাচনের উৎসবও। আগামী দিনে যারা গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ বিনির্মাণ করতে চান, জনগণের প্রতিনিধি হতে চান তারা নিজ নিজ এলাকায় অবস্থান করছেন। প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন।- যুগ্ম মহাসচিব আব্দুস সালাম আজাদ
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান ও আবদুল আউয়াল মিন্টু ঢাকায়, বরকত উল্লাহ বুলু নোয়াখালী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল ঢাকায় এবং নির্বাহী কমিটির সদস্য রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু নাটোরে নিজ এলাকায় ঈদ করবেন।
যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন নরসিংদী, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি লক্ষ্মীপুর, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স ময়মনসিংহ ও আব্দুস সালাম আজাদ মুন্সিগঞ্জের নিজ নির্বাচনী এলাকায় ঈদ করবেন। ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক কাজী সাইয়েদুল আলম বাবুল গাজীপুরের নিজ নির্বাচনী এলাকায়, ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম বকুল খুলনার নিজ নির্বাচনী এলাকায় ও সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আমিরুল ইসলাম খান আলীম সিরাজগঞ্জের নিজ নির্বাচনী এলাকায় ঈদ করবেন।
কেন্দ্রীয় তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সহ-সম্পাদক, বিএফইউজের মহাসচিব ও বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের সদস্য সচিব কাদের গনি চৌধুরী চট্টগ্রামের ফটিকছড়িতে নিজ নির্বাচনী এলাকায় ঈদ করবেন। কেন্দ্রীয় সহ-দপ্তর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু নাটোরে নিজ নির্বাচনী এলাকায় থাকবেন। বিএনপির সহ-পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিষয়ক সম্পাদক বজলুল করিম চৌধুরী আবেদ নিজ নির্বাচনী এলাকায় ঈদ উদযাপন করবেন।
কেন্দ্রীয় নেতা মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল নিজ এলাকা জামালপুরের মেলান্দহে ঈদ করবেন। নির্বাহী কমিটির সদস্য আবু নাসের মুহাম্মদ রহমাতুল্লাহ নিজ এলাকা বরিশালে আছেন, ঈদের দিন ঢাকায় থাকবেন। সহ-অর্থনৈতিক বিষয়ক সম্পাদক মাহমুদুর রহমান সুমন ও নির্বাহী কমিটির সদস্য তাবিথ আউয়াল বিদেশে রয়েছেন, প্রকৌশলী ইশরাক হোসেন ঢাকায় ঈদ করবেন। ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমিনুল হক ও সদস্য সচিব মোস্তফা জামান ঢাকার নিজ এলাকায় ঈদ করবেন। ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আহ্বায়ক রফিকুল আলম মজনু ও সদস্য সচিব তানভির আহমেদ রবিনও থাকবেন ঢাকায়।
বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান জাগো নিউজকে বলেন, ‘দেড় যুগের বেশি সময় পর এবার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে লন্ডনে ঈদ উদযাপন করবেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।’
যুগ্ম মহাসচিব আব্দুস সালাম আজাদ বলেন, ‘১৭ বছর পর বাংলাদেশের মানুষ ঈদ উৎসব করবে। বিগত সময় মানুষ বাবা-মায়ের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করতে পারেনি। ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের সময় মন্দির ভাঙা হয়েছে। ওই সময় স্বাভাবিকভাবে ধর্ম পালন করতে পারেনি। এবারের ঈদ উৎসব অত্যন্ত স্মরণীয়।’
কার্বনডাই-অক্সাইডমুক্ত অক্সিজেনযুক্ত বাতাসে নেতাকর্মীরা এবার ঈদ উদযাপন করবে। আবার গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রামে যারা গুম-খুনের শিকার হয়েছে তারা কিন্তু ফেরত আসেনি। সুতরাং, সেই পরিবারের জন্য বিষয়টা বিষাদের।- সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল
তিনি বলেন, ‘এবারের ঈদ উৎসব নির্বাচনের উৎসবও। আগামী দিনে যারা গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ বিনির্মাণ করতে চান, জনগণের প্রতিনিধি হতে চান তারা নিজ নিজ এলাকায় অবস্থান করছেন। প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন।’
জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘এবার ঈদ বিএনপি নেতাকর্মীদের জন্য নির্ভয়ের। তবে প্রভাবশালীদের প্রভাবে কিছু কিছু জায়গায় এখনো নেতাকর্মীরা গ্রেফতার হচ্ছেন।’
তিনি বলেন, ‘নির্বাচনের জন্য সবাই মুখিয়ে রয়েছে। কিন্তু সরকার নির্বাচন নিয়ে একটা ধোঁয়াশা তৈরি করেছে। মানুষ নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ চায়।’
তিনি বলেন, ‘আবার প্রতিবছর আমাদের দেশনেত্রী খালেদা জিয়া ঈদে অসংখ্য নেতাকর্মীদের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করেন। এবার সেটা করতে পারছেন না। সেটা নিয়ে শূন্যতা রয়েছে। খালেদা জিয়া কবে দেশে ফিরবেন, আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান কবে ফিরবেন সেই অপেক্ষায় আছি। নির্বাচনী বার্তা বিএনপির জন্য নতুন নয়, বিএনপির নির্বাচনের প্রস্তুতি রয়েছে। শুধু আনুষ্ঠানিক ঘোষণা বাকি।’
স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘শেখ হাসিনা দেশে স্বৈরতন্ত্র কায়েম করেছিল। কোনো দেশে স্বৈরতন্ত্র কায়েম হলে ভিন্নমতের মানুষেরা স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারেন না। বাংলাদেশ তার প্রমাণ স্পষ্ট। মামলা-হামলা আর নির্যাতনে আমরা উৎসব-অনুষ্ঠানও পালন করতে পারিনি। গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ পালিয়ে যাওয়ায় এখন দেশে মোটামুটি স্বাভাবিক অবস্থা বিরাজ করছে। যে কারণে গণতন্ত্রকামীদের জন্য এবারের ঈদটি ভিন্ন আমাজের। প্রকৃত গণতন্ত্রের স্বাদ পেতে দ্রুত জাতীয় সংসদ নির্বাচন দরকার।’