‘ভারতের আগ্রাসন বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত আমাদের সংগ্রাম চলবে’

ত্রিপুরার ডুম্বুর বাঁধ অভিমুখে ছাত্র-জনতার লংমার্চ কুমিল্লায়
স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশ: ৮ মাস আগে

# কুমিল্লা লংমার্চ থেকে ইনকিলাব মঞ্চের ৫ দাবি

বাংলাদেশ ও ভারতের আন্তঃসীমান্ত নদীতে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে ভারতের অবৈধভাবে বাঁধ নির্মাণের প্রতিবাদে ঢাকা থেকে শুরু হওয়া ত্রিপুরার ডুম্বুর বাঁধ অভিমুখে ছাত্র-জনতার লংমার্চটি শুক্রবার বিকেল ৪টার দিকে কুমিল্লা নগরীতে পৌঁছায়। এর আগে শুক্রবার সকালে রাজধানীর জাতীয় জাদুঘরের সামনে থেকে লংমার্চ শুরু হয়। ১০ট ট্রাকে করে ছাত্র-জনতা এই লংমার্চে অংশগ্রহণ করে।
এদিকে, ঢাকা থেকে ত্রিপুরার ডুম্বুর বাঁধ অভিমুখে ছাত্র-জনতার লংমার্চ কর্মসূচির সঙ্গে একাত্মতা জানিয়ে কুমিল্লা নগরীর টাউন হল মাঠে সার্বভৌম সমাবেশে করেছে ইনকিলাব মঞ্চ, কুমিল্লা। এতে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষজন অংশ নেয়। এ সময় বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ভারতের পানি সন্ত্রাসের প্রতিবাদ ও আন্তঃসীমান্ত নদীগুলোতে ভারতের অবৈধ ও একতরফা সকল বাঁধ উচ্ছেদের দাবি জানানো হয়। সমাবেশ শেষে কুমিল্লা এবং ঢাকা থেকে লংমার্চ নিয়ে আসা ছাত্র-জনতা মিছিল নিয়ে বিবিরবাজার সীমান্তের দিকে পদযাত্রা শুরু করে। পরে লংমার্চটি কুমিল্লা চকবাজার এলাকায় গিয়ে শেষ হয়।
লংমার্চে ছাত্র-জনতা ‘দিল্লি না ঢাকা-ঢাকা ঢাকা’, ‘গোলামি না ইনকিলাব-ইনকিলাব ইনকিলাব’, ‘গোলামি না আজাদি-আজাদি আজাদি’, ‘বন্যায় যখন মানুষ মরে-আবরার তোমায় মনে পড়ে’, ‘স্বর্ণা দাস মরল কেন-খুনি মোদি জবাব দে’ লেখা সম্বলিত প্ল্যাকার্ড হাতে স্লেগান দিতে থাকে।
কুমিল্লা টাউন হল মাঠের সমাবেশে দেওয়া বক্তব্যে ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান বিন হাদী বলেন, গত ১৭ বছরে একটা ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্র কায়েম করা হয়েছে। এই ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্রের কারণে ভারতের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে কেউ কথা বলতে পারেনি, প্রতিবাদ করতে পারেনি। কিন্তু এখন আমাদের সামনে কোনো ফ্যাসিস্ট নেই। আমরা অবিলম্বে আন্তর্জাতিক নদীতে ভারতের দেওয়া অবৈধ সব বাঁধ ভেঙে দেওয়ার জোর দাবি জানাচ্ছি। আমরা এই দাবিতে লংমার্চ শুরু করেছি। ভারতের সব ধরনের আগ্রাসন বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত আমাদের সংগ্রাম চলবে।
এছাড়া টাউন হলের সমাবেশে বক্তারা ভারতের পানি সন্ত্রাসের প্রতিবাদ জানিয়ে এক তরফা সকল নদী থেকে বাঁধ উচ্ছেদের জন্য সরকারকে সচেষ্ট হওয়ার দাবি জানান। ইনকিলাব মঞ্চের আয়োজনে ওই সভায় পাঁচ দফা দাবি উত্থাপন করেন মুখপাত্র শরীফ ওসমান বিন হাদী।
ওই ৫ দফা দাবিগুলো হলো- আন্তঃসীমান্ত নদীতে ভারতের সকল অবৈধ বাঁধ ভেঙে ফেলার দাবিতে অতিসত্ত্বর জাতিসংঘ এবং সকল আন্তর্জাতিক ফোরামকে অন্তর্ভুক্ত করে ভারতের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে, বর্তমান সরকার যেভাবে গুমবিরোধী কনভেনশনের স্বাক্ষর করেছে তেমনি জাতিসংঘে পানিপ্রবাহ কনভেনশনও স্বাক্ষর করতে হবে এবং ভারতের কাছে ক্ষতিপূরণ দাবি করতে হবে, অচিরেই তিস্তা মহাপ্রকল্প বাস্তবায়ন করতে হবে, সকল আন্তঃসীমান্ত নদীর নতুন তালিকা প্রণয়ন করতে হবে, ভারত যত সীমান্ত হত্যা করছে তা নিয়ে অতিসত্ত্বর বর্তমান সরকারকে আন্তর্জাতিক আদালতে যেতে হবে।
সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন বিশিষ্ট ইসলামিক বক্তা মোস্তাক ফয়েজী, গবেষক খন্দকার রাকিব, ঢাকা থেকে আসা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক এ কে জুবায়ের, জামায়াতে ইসলামী কুমিল্লা মহানগরের আমীর কাজী দ্বীন মোহাম্মদ, ইনকিলাব মঞ্চের নেতা ও কুমিল্লা মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক আহ্বায়ক ছাত্রনেতা নিজাম উদ্দিন কায়সার, কুমিল্লা প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি মাসুক আলতাফ চৌধুরী, পরিবেশ বিজ্ঞানী গোলাম আলী সুমন, ইনকিলাব মঞ্চের সদস্য তোফায়েল আহমেদসহ অন্যরা। কুমিল্লা টাউন হল মাঠের ওই সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন ইনকিলাব মঞ্চ, কুমিল্লার আহ্বায়ক গোলাম মুহাম্মদ সামদানী।
এর আগে শুক্রবার দুপুর ১২টার দিকে যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তায় পথসভা করে লংমার্চে অংশগ্রহণকারীরা। দুপুর ২টায় কুমিল্লার চান্দিনায় জুমার নামাজ ও পথসভা করে বিকেলে কুমিল্লার টাউন হলে এসে সার্বভৌম সমাবেশে যোগ দেয় তারা। এরপর সীমান্তের দিকে পদযাত্রা শেষে সন্ধ্যায় লংমার্চে অংশ নেওয়া ছাত্র-জনতা ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেয়।