ভারতে গিয়ে সাড়ে ৪ শ কিঃমি পথ পাড়ি দিলো কুমিল্লার সাইক্লিস্টরা

স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশ: ২ years ago

আগেই পরিকল্পনা করেছিলাম এবার আর দেশের মধ্যে নয়, দেশের বাইরে গিয়ে সাইকেলে দীর্ঘ পথ পাড়ি দেয়া হবে। সেই সাথে প্রত্যান্ত অঞ্চলের মানুষের সংস্কৃতি দেখা হবে। সেই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে আমরা ভারতের আগরতলা সাইক্লোহলিকস এর সাথে যোগাযোগ করি। তাদের অভূতপূর্ব সাড়া পেলাম। আমাদের লক্ষ্য ছিলো ত্রিপুরার সাথে কুমিল্লার বন্ধত্বপূর্ণ সর্ম্পকের উন্নয়ণ। কথাগুলো বলছিলেন ট্রাভেল এজেন্সি ট্রিপ বিডি- এডভেন্সার এ্যান্ড ট্যুরিজমের স্বত্তাধিকারী আরিফুর রহমান উজ্জল। উজ্জল কুমিল্লার ট্রাভেলার হিসেবে ব্যাপক পরিচিত। গত কয়েক বছর ধরে তিনি নিয়মিত সাইক্লিং করেন।

উজ্জল বলেন, গত ১ জুলাই কুমিল্লা থেকে আমরা সাইকেলে যাত্রা শুরু করি। আখাউড়া স্থল বন্দর দিয়ে আমরা ভারতে প্রবেশ করি। আখাউড়া পর্যন্ত ১২ জনের একটি দল আমাদেরকে এগিয়ে দেয়। বিকেল ৩ টায় বন্দরের আনুষ্ঠানিকতা সেরে আমরা ভারতে প্রবেশ করি। ওই সময়ে আমাদেরকে স্বাগত জানায় আগরতলা সাইক্লোহলিকস ফাউন্ডেশন। ওরা সাইক্লিং করে।

আমরা এই ইভেন্টের নাম দিয়েছিলাম বাংলাদেশ ভারত ফ্রেন্ডশীপ রাইড। আমাদেরকে স্পন্সর করে বাফারলেস, হোটেল ছন্দু ও ত্রিপুরা ট্যুরিজম।

আমাদের আনুষ্ঠানিক সাইক্লিং শুরু হয় ২ জুলাই থেকে। সেদিন আমরা আগরতলা রাজবাড়ি উজ্জয়ন্ত প্যালেস থেকে যাত্রা শুরু করি। অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন ত্রিপুরা ট্যুরিজমের পরিচালক তরিত কান্তি চাকমা। ওই রাইডে আমি দল নেতা ছিলাম। আমাদের দলে ছিলেন মোহাম্মদ গোলাম হাক্কানী ও বাংলা চ্যানেল ফিনিশার আল আমিন আকিক। এছাড়াও আমাদের সাথে ভারতের ৮ জন সাইক্লিস্টও অংশ গ্রহণ করেন।

প্রথম দিন আমরা ত্রিপুরার বক্সনগর বৌদ্ধ বিহার, নিরমহল , মেলাঘর হয়ে সোনামুড়া যাই। তারপর রাত্রি যাপন করি। দ্বিতীয় দিন বিলুনিয়া হয়ে জলাইবাড়িতে সাইক্লিং করি। তৃষ্ণা অভয়ণ্য, ছবি টিলা ঘুরে সেদিনের মত রাইড বন্ধ করে রাত্রি যাপন করি।

তৃতীয় দিনে পিলাক প্রত্নতত্ত্ব স্থাপনা পরিদর্শণ করে যতনবাড়ির দিকে সাইক্লিং করি। সেখানে তৃতীয় সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ শিলাছড়িতে রাইড করি। ওই শিলাছড়ি থেকে বাংলাদেশের খাগড়াছড়ি উপজেলার পানছড়ি, সাজেকের পর্বত শ্রেণী স্পষ্ট দেখা যায়।

চতুর্থ দিন যতনবাড়ি থেকে ডাম্বুর লেকের নারকেলকুঞ্জ পর্যন্ত ৭৬ কিঃমি রাইড করি। ওই এলাকাটি পাহাড়বেস্টিত। এটা আসলের কুমিল্লার উপর দিয়ে যে গোমতী নদী বয়ে গেছে সে নদীর উৎপত্তিস্থল। নারকেলকুঞ্জতে আমরা ক্যাম্পিং করে রাত্রি যাপন করি।

পঞ্চম দিন আমরা নারকেলকুঞ্জ থেকে অমরপুরের ছবিমূড়া যাই। সেখানে লেকের ভেতরে দেবদেবির মূর্তি খোদাই করা আছে। ষষ্ঠ দিন আমরা কালাজাড়ি পাহাড়ে রাইড করি। এটা আগরতলার দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পর্বত শৃঙ্গ। এর পর চলে যাই উদয়পুরে। সেখানে ত্রিপুরা রাজাদের পুরনো স্থাপনা ঘুরে দেখেছি। পরে আগরতলা শহীদ বগতসিং সরকারী ইয়ুথ হোস্টেলে রাত্রি যাপন করি।

কুমিল্লা সাইক্লিং দলের অন্য দুই সদস্য মোহাম্মদ গোলাম হাক্কানী ও আলামিন আকিক তাদের অনুভূতি ব্যক্ত করে বলেন, এই ভারতের আগরতলা ও আশেপাশের এলাকাগুলোতে রাইড করে অসাধারণ এক অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি। আমরা যখন বিভিন্ন এলাকা দিয়ে সাইকেল চালিয়ে যাচ্ছিলাম তখন অন্তত ৩৭ টি স্পষ্টে আমাদেরকে পানির বোতল, কেক, জুস , লাচ্চি, কোল্ড ড্রিংকস, কলা , চকলেট, আনারস পেঁপে দিয়ে আপ্যায়ণ করেছেন স্থানীয়রা। এই অনুভূতির কথা বলে বুঝানো যাবে না।

এ ক’দিনে আমরা দক্ষিন ত্রিপুরার প্রধান প্রধান শহর সাইক্লিং করে সাড়ে ৪ শ কিলোমিটার পথ পাড়ি দেই। ফেরার দিন ৮ জুলাই আগরতলায় নিযুক্ত বাংলাদেশের ডেপুটি হাইকমিশনের ফাস্ট সেক্রেটারি ও ভারপ্রাপ্ত উপ হাউ কমিশনার রেজাউল হক চৌধুরীর সাথে আমরা দেখা করি।
তারপরে দেশের মাটিতে। আখাউড়া থেকে আবারো সাইকেলে করে কুমিল্লায় আসি।