জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে অনার্স প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষার দিনে জলাবদ্ধতায় ভোগান্তিতে পড়েন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজে অংশ নিতে আসা হাজারো পরীক্ষার্থী। শনিবার (৩১ মে) সকাল ১১টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত দেশের ১৩৭টি কেন্দ্রে একযোগে এ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এরই অংশ হিসেবে ভিক্টোরিয়া কলেজেও পরীক্ষাকেন্দ্র নির্ধারণ করা হয়।
কিন্তু কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিতে কলেজ ক্যাম্পাসে দেখা দেয় জলাবদ্ধতা। বিশেষ করে ভিক্টোরিয়া কলেজ ডিগ্রী শাখার কলা ভবন, দর্শন ভবন ও বিজ্ঞান ভবন-২ এর নিচতলার মেঝে একেবারে পানিতে তলিয়ে যায়। এতে ভেজা পায়ে এবং অনেক ক্ষেত্রে হাঁটু পর্যন্ত পানি মাড়িয়ে পরীক্ষার্থীদের ঢুকতে হয় পরীক্ষাকক্ষে। পরীক্ষার্থীদেরকে জুতা খুলে বেঞ্চে পা তুলে বসতেও দেখা গিয়েছে৷ পাশাপাশি শিক্ষকরাও হাঁটু পানিতে পরীক্ষার দায়িত্ব পালন করছেন। কলেজে ভর্তি পরীক্ষা দিয়েছেন ৪ হাজার ৩৬৪ জন শিক্ষার্থী।
নগরীর আরো ছয়টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অনুষ্ঠিত হয়েছে এ ভর্তি পরীক্ষা। বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায় শাখার ১৪ হাজার ১৬০ শিক্ষার্থী বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছে।
পরীক্ষায় অংশ নিতে আসা নাজমুল হাসান নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, “পানি মাড়িয়ে কলেজের ভিতরে ঢোকার পর দেখি পুরো নিচতলার মেঝে পানিতে ডুবে আছে। বেঞ্চে বসার আগে জুতা খুলে রাখতে হয়েছে। কিছু জায়গায় পানি উঠে গেছে বেঞ্চের নিচ পর্যন্ত। পরীক্ষা দিতে অনেক অসুবিধা হয়েছে।।
নাজমা আকতার নামে এক অভিভাবক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “এটা ভিক্টোরিয়া কলেজ, কুমিল্লার সবচেয়ে বড় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। অথচ এতটুকু বৃষ্টিতেই ভবনগুলো পানিতে ভেসে যায়! কর্তৃপক্ষের কি কোনো দায় নেই?”
কলেজের এক শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “জলাবদ্ধতা এই কলেজের দীর্ঘদিনের সমস্যা। বর্ষা মৌসুমে প্রায়ই এই ভবনগুলোর নিচতলায় পানি জমে। বারবার বলেও স্থায়ী কোনো সমাধান হয়নি। মেঝে উঁচু করার কথা থাকলেও সেটা করা হয় নি।”
এদিকে, শিক্ষার্থীদের মতে, ভর্তি পরীক্ষার মতো গুরুত্বপূর্ণ দিনে এমন পরিস্থিতি হলে মানসিক চাপে খারাপ ফলাফলের আশঙ্কা থাকে। তারা দ্রুত জলাবদ্ধতা নিরসনে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানান।
এদিকে, শিক্ষাবিদদের অনেকে মনে করছেন, বড় পরিসরে জাতীয় কোনো পরীক্ষার সময় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর অবকাঠামোগত দুর্বলতা সামনে চলে আসে। সময়মতো সংস্কার না হলে ভবিষ্যতে আরও বড় ধরনের সমস্যা তৈরি হতে পারে।
ভিক্টোরিয়া কলেজ অধ্যক্ষ আবুল বাশার ভূঁইয়ার কাছে এ বিষয়ে মুঠোফোনে জানতে চাইলে তিনি বলেন, জলাবদ্ধতা কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজে লেগেই থাকে প্রতিবছর বর্ষার সিজনে। মেঝেগুলো উঁচু করেও সুফল মিলছে না। এ কারণে শিক্ষার্থীদের অনেক কষ্ট পোহাতে হয়। এগুলোর জন্য মূলত আশেপাশের হাউজিংগুলো ও বিসিক দায়ী। তাদের পানিগুলো গড়িয়ে ভিক্টোরিয়া কলেজের পুকুরে আসে। সেগুলো উঁচু করে করা, আর আমাদের কলেজ নিচু। আমাদেরকে এখন একটু কষ্ট করে মোকাবিলা করতে হবে। আমরা চারদিকে বাউন্ডারি করার প্রকল্প হাতে নিয়েছে। এটা হলে আশেপাশের পানি আর প্রবেশ করতে পারবে না। এ প্রকল্প পাস হলে আশা করি সমস্যার সমাধান হবে।