মাছের মেলায় আলুর কেজি ২৪০ টাকা!

স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশ: ১ বছর আগে

বগুড়ায় নবান্ন উপলক্ষে বিভিন্ন উপজেলায় হাট-বাজারে মাছের মেলা বসেছে। মাছ কিনতে বা দেখতে সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত মানুষ ভিড় করছেন। তাদের পদচারণায় হাট-বাজার ও এলাকা মুখরিত হয়ে উঠেছে। আশপাশের প্রতিটি বাড়িতে জামাই-মেয়ে, নাতি-নাতনি ও আত্মীয়-স্বজনে ঠাসা।

এবার মাছের দাম তুলনামূলক কম। ব্যবসায়ীরা বলছেন, মানুষের হাতে টাকা নেই; তাই বাজার মন্দা যাচ্ছে। তাই তাদের এবার লোকসান গুণতে হচ্ছে। তবে বাজারে আসা নতুন আলু বিক্রি হয়েছে ২৪০ টাকা কেজি দরে।

শুক্রবার দিনভর বগুড়ার শিবগঞ্জের উথলী, সদরের মহাস্থান, কাহালু, নন্দীগ্রামসহ বিভিন্ন হাট-বাজারে গিয়ে মাছের মেলা প্রচুর আমদানি দেখা গেছে। বাঘাইর, রুই, কাতলা, মৃগেল, চিতল, ব্রিগেডসহ বিভিন্ন প্রজাতির বড় বড় মাছ সাজিয়ে রাখা হয়েছে। এছাড়াও বিক্রি হচ্ছে, নতুন আলু, কেশরসহ বিভিন্ন সবজি। হরেকরকম মিষ্টান্ন ছাড়াও শিশুদের খেলনা, মাটির তৈজসপত্র।

স্থানীয়রা বলছেন, প্রতিটি মেলায় অন্তত কোটি টাকার শুধু মাছ কেনাবেচা হবে।

নবান্ন উৎসব উপলক্ষে দুই শতাধিক বছরের প্রাচীন শিবগঞ্জের উথলী গ্রামের বটতলায় এবারও বসেছে মাছের মেলা। বিভিন্ন বয়সের মানুষের উপস্থিতিতে হাট জমজমাট হয়েছে।

হাটে আসা প্রবীণ আফসার আলী (৭২) জানান, সনাতন ধর্মাবলম্বীরা নবান্ন উপলক্ষে মাছ কিনতেন। প্রথা অনুসারে এলাকার নতুন জামাই মাছ কিনে শ্বশুরবাড়িতে নিয়ে যেতেন। এখনও এ প্রথা চালু আছে তবে এটা সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মাঝে নেই; সব ধর্ম-বর্ণের মানুষের মাঝে ছড়িয়ে পড়েছে।

মেলায় এক কেজি থেকে শুরু করে ২২ কেজি ওজনের ব্ল্যাক কার্প, ১৫ কেজি ওজনের কাতলা, ১১ কেজি ওজনের রুই ছাড়াও বিভিন্ন ওজনের চিতল, সিলভার কার্প, ব্রিগেড কার্পসহ হরেক প্রজাতির মাছ বিক্রি হয়। প্রতি কেজি মাছ ২৫০ টাকা থেকে ৬৫০ টাকায় বিক্রি হয়।

শিবগঞ্জের মাছ ব্যবসায়ী শাহজাহান সিরাজ জানান, এবার মাছের বাজার মন্দা। যে মাছ আগের মেলায় ৮০০ থেকে হাজার টাকা কেজি দরে বিক্রি করেছেন এখন তা ৫০০ টাকাতেও বিক্রি করতে পারছেন না।

এ প্রসঙ্গে তিনি জানান, মানুষের হাতে টাকা না থাকায় তারা ইচ্ছা থাকলেও বড় মাছ কিনতে পারছেন না। তাই এবার সব মাছ ব্যবসায়ীকে লোকসান গুণতে হবে।

গাইবান্ধার মাছ ব্যবসায়ী মোখলেসার রহমান জানান, তিনি ২২ কেজি ওজনের একটি ব্ল্যাক কার্প ১৭ হাজার টাকায় বিক্রি করেছেন।

নবান্ন উৎসব উপলক্ষে মাছের মেলার পাশাপাশি নতুন শাকসবজিও বিক্রি হয়। জমি থেকে তোলা নতুন আলু ২০০ থেকে ২৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়। মিষ্টি আলু ও কেশন প্রতি কেজি ১২৫ টাকা থেকে ২০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।

মেলার অন্যতম আয়োজক আজিজুল হক জানান, সনাতন ধর্মাবলম্বীদের নবান্ন উৎসব উপলক্ষ্যে গত ২০০ বছর ধরে উথলী বাজারে মাছের মেলা বসে। আশপাশের বিভিন্ন গ্রামের বাড়িতে উৎসবের আয়োজন করা হয়। তারা মেয়ে, জামাই, নাতি-নাতনি, আত্মীয়-স্বজনকে নতুন আলু দিয়ে মাছ রান্না করে খেতে দেন। মাছের পাশাপাশি স্বজনদের পিঠাপুলিও খেতে দেওয়া হয়। প্রতিটি বাড়িতে হরেক রকমের শীতের পিঠা তৈরি করা হচ্ছে। বৃহস্পতিবার রাতে শুরু হওয়া মাছের মেলা শুক্রবার গভীর রাত পর্যন্ত চলে।

শিবগঞ্জের উথলী মেলা ছাড়াও বগুড়া সদরের মহাস্থান, নন্দীগ্রাম, দুপচাঁচিয়া, কাহালুসহ বিভিন্ন উপজেলায় নবান্নের মাছের মেরা বসে। এসব মেলায় মাছ রান্নার জন্য নতুন আলুসহ বিভিন্ন শীতকালীন শাকসবজি, হরেক রকমের মিষ্টান্ন, দই, ভাজাপোড়া, মাটির খেলনা, তৈজসপত্র বিক্রি হয়।