মুরাদনগরে রামচন্দ্রপুর নৌরুট যাত্রীসহ নানা সংকটে বন্ধের পথে

স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশ: ১০ মাস আগে

তিতাস নদী বিধৌত রামচন্দ্রপুর বাজার প্রায় সাড়ে ৩শ’ বছরের ঐতিহ্য। বাজারটি কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার উত্তর পশ্চিম প্রান্তে অবস্থিত। বাজারের ওপারেই হোমনা-বাঞ্ছারামপুর। রামচন্দ্রপুর বাজার সংলগ্ন লঞ্চ ঘাটটির বয়স শতবছর। এই লঞ্চঘাটে সারা দিন বড় ছোট লঞ্চ ও নৌকা ভিড়তো। যাত্রী কমায় রামচন্দ্রপুর বাজারের জৌলুস কমে গেছে। ৭ বছর আগেও এখান থেকে ঢাকা,নারায়ণগঞ্জসহ বিভিন্ন রুটে ১২টি লঞ্চ ছেড়ে যেতো। সেখানে তা দুইটিতে এসে ঠেকেছে। যেখানে ঘাট কয়েকটি ভেঁপুর শব্দে সরগরম থাকতো সেখানে একটি লঞ্চের ভেঁপুর শব্দ বিউগলের সুর হয়ে বাজে।

পাশের উপজেলা নবীনগর, বাঞ্ছারামপুর, হোমনা দেবিদ্বার ছাড়াও মেঘনা, তিতাস , নারায়ণগঞ্জ ও নরসিংদী থেকে নদী পথে রামচন্দ্রপুর ঘাট হয়ে আমদানী – রপ্তানী হতো অর্থকরী ফসল সোনালী পাটসহ নানা পণ্য।
সাপ্তাহিক হাটের দিনে টলার, লঞ্চ , নৌকার ভীড়ে আধা কিলোমিটার পর্যন্ত ঢুকা যেতো না । নদীপথে খন্ড খন্ড বাধ আর দখল দুষণে নাব্যতা সংকট দেখা দিয়েছে। খাল বিল বন্ধ হওয়ায় এখন আর আগের মতো ঘাটে নৌকা ,টলার লঞ্চ ভিড়ে না।

ঘাটের দুইটি মাত্র লঞ্চ ও কয়েকটি নৌকা থেকে ইজারার টাকা তোলেন ৭০ বছর বয়সী মোরশেদ মিয়া। তার বাড়ি বাঞ্ছারামপুর উপজেলার ঘাউড়াটুলী। তিনি এই ঘাটে কাটিয়েছেন তার কৈশোর ও যৌবনকাল। ৪২ বছর এই তিতাস নদীর পাড়ে বসে জোয়ার ভাটা দেখেছেন। মাছে ভরপুর নদী দেখেছেন। সেই নদীর পেটে আজ পলি জমে পোয়াতির রূপ নিয়েছে। দুই পাড়ে বাজার আর বসতিতে নদী রুগ্ন হয়ে গেছে।
তাগড়া মোরশেদ মিয়াও নদীর মতো তার যৌবন হারিয়েছেন। মুখের চামড়ায় ভাঁজ পড়েছে। দাঁত নড়বড়ে হয়ে গেছে। কথা বললেও তা অন্যরকম শোনায়। তিনি বলেন, এই ঘাটে এক সময় তিনজনে ঘাটের ইজারার টাকা উঠাতো। আধা ঘন্টা পর পর লঞ্চ ছাড়তো। চার আনা করে টাকা তুলতেন। এখন তা ১০টাকা। যে লঞ্চ ভাড়া ৩০টাকা ছিলো তা এখন ১৫০টাকা। লঞ্চ নাই, যাত্রীও নাই। প্রতিদিন দুপুর ১২টায় একটা লঞ্চ রামচন্দ্রপুর ছেড়ে যায়। আর নারায়ণগঞ্জ থেকে আরেকটা ৮টায় ছেড়ে দুপুর ২টায় এসে পৌঁছে। রামচন্দ্রপুর থেকে নারায়ণগঞ্জ পর্যন্ত প্রতিটি চেয়ার সিট ২০০টাকা। ফ্লোরে ১৫০টাকা। নারায়ণগঞ্জ যেতে সময় লাগে ৫-৬ঘন্টা।

ঘাটে গিয়ে দেখা যায়, বাজারের সড়ক ও ঘাট সংলগ্ন ব্রিজটির অবস্থা বেহাল । পণ্যবাহী বড় পরিবহন উঠলে ব্রিজটি ভেঙে পড়তে পারে। ঘাটের পল্টুন থেকে সবেধন নীলমনি লঞ্চটি ছেড়ে যাচ্ছে। লঞ্চের চেয়ার ও ফ্লোর মিলিয়ে ৩০জনের মতো যাত্রী। যেখানে আগে এই ঘাট থেকে উঠতো শতাধিক যাত্রী।
ঘাটের ইজারাদার স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য জীবন মিয়া বলেন, ঘাটের বয়স ১০০বছরের বেশি হবে। লঞ্চঘাটটি এখন বন্ধের পথে। প্রশাসন লঞ্চ চালুর ব্যবস্থা করলে এটি জমজমাট হয়ে উঠতো।
রামচন্দ্রপুর আবদুল মজিদ কলেজের বাংলা বিভাগের সাবেক বিভাগীয় প্রধান মো. শাহ আলম বলেন,রামচন্দ্রপুর বাজারের বয়স সাড়ে তিনশ’র বেশি হবে। ঘাট সংলগ্ন সড়কগুলোর অবস্থা বেহাল। যাত্রীদের ঘাটে যেতে সমস্যায় পড়তে হয়।
রামচন্দ্রপুর উত্তর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ইকবাল সরকার বলেন,রামচন্দ্রপুর লঞ্চঘাটি ঐতিহ্যবাহী। ঘাটের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। ঘাট সচলের বিষয়ে প্রশাসনের সাথে কথা বলবো।
মুরাদনগর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা আলাউদ্দিন ভুইয়া জনী বলেন, রামচন্দ্রপুর লঞ্চঘাটটির আয় কমে গেছে। লঞ্চ চলাচল বাড়ানোর বিষয়ে নৌ-পথ পরিচালনা কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলবো।
লঞ্চঘাটটির দায়িত্বপ্রাপ্ত চাঁদপুর বন্দর কর্মকর্তা শাহাদাত হোসেন বলেন,লঞ্চ কমে যাওয়ায় রামচন্দ্রপুর-নারায়ণগঞ্জ রুটে স্থবিরতা বিরাজ করছে। ঢাকা থেকে লঞ্চ চালুর বিষয়ে আমাদের পরিকল্পনা রয়েছে। এজন্য স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও ব্যবসায়ীদের সাথে আলোচনা করবো। যাতে মালামাল পরিবহনে তারা নৌ-পথ ব্যবহার করেন।