‘ রাস্তাঘাটে কত মানুষ দেখি, আমার নিমাই চানরে দেখি না ’

স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশ: ৬ দিন আগে

‘হাড় নেই, চাপ দেবেন না’ এমন লেখাসহ একটি ছবি দেখে পরিবার নিশ্চিত হয় তাদের ফয়সাল আর বেঁচে নেই। কিন্তু ছেলের লাশ কিংবা কবর শনাক্তের জন্য আজও দৌড়ঝাঁপ করে যাচ্ছেন তারা।

মরদেহ দাফনকারী আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলামও এ বিষয়ে নিশ্চিত কোনো তথ্য দিচ্ছে না বলে হতাশা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছে ফয়সালের পরিবার। পুলিশের কাছ থেকেও কোনো তথ্য পাচ্ছেন না তারা। গতকাল বুধবার বিকেলে গণঅভ্যুত্থানে শহীদদের জীবনী নিয়ে লেখা ‘শহীদ স্মৃতি স্মরণিকা’ হাতে পেয়ে সাংবাদিকদের কাছে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন ফয়সালের স্বজন। তাঁর বাবা বলেন, ‘মরদেহ কিংবা কবর কিছুই তো পাইলাম না। ছেলের কবরটা দেখে অন্তত চোখের পানি ফেলতে চাই।’

শহীদ ফয়সাল সরকার কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলার এলাহাবাদ ইউনিয়নের কাচিসাইর গ্রামের সরকার বাড়ির সফিকুল ইসলাম সরকারের ছেলে। ফয়সাল ঢাকার দক্ষিণখান এস এম মোজাম্মেল হক টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষা দিয়ে জিপিএ-৪.৩৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হন। লেখাপড়ার পাশাপাশি সংসারের অভাব ঘুচাতে শ্যামলী পরিবহনের একটি বাসে সুপারভাইজার হিসেবে কাজ করতেন। বাবা-মা, ভাইসহ পরিবার নিয়ে থাকতেন আবদুল্লাহপুর এলাকায় একটি ভাড়া বাসায়।

পরিবারের সদ্যসরা জানান, আন্দোলন চলাকালে গত বছরের ১৯ জুলাই বিকেলে আবদুল্লাহপুরের শ্যামলী পরিবহনের কাউন্টারে যাবে বলে বাসা থেকে বের হয় ফয়সাল সরকার। এর পর রাত ঘনিয়ে এলেও খোঁজ মেলেনি তাঁর। মোবাইল ফোন বন্ধ পেয়ে বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুঁজি শুরু করেন ফয়সালের স্বজন। এদিকে বাইরে তখনও চলছিল গোলাগুলি। এই হাসপাতালে ওই হাসপাতালে খোঁজাখুঁজি করে হদিস না পেয়ে ২৮ জুলাই দক্ষিণখান থানায় জিডি করেন ফয়সালের ছোট ভাই ফাহাদ।

ফয়সালের মা হাজেরা বেগম বলেন, ‘পুত ছাড়া এবারের ঈদ গেল, প্রতি ঈদ চান্দের আগে আমার পুতে বাইত আইয়া আনন্দ-ফূর্তি করত, ঘরের ঈদবাজার করত। বোনদের বাড়িতে কাপড়-চোপড় পাঠাইত এবার তো আমার নিমাই চান আইল না। রাস্তাঘাটে কত মানুষ দেখি, আমার নিমাই চানরে দেখি না।’