রুদ্ধশ্বাস ম্যাচে কোহলির বীরত্বে ভারতের নাটকীয় জয়

স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশ: ১ বছর আগে

ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ মানেই উত্তজনার পারদ তুঙ্গে। বারুদুন্মুখ অবস্থা। টানটান উত্তেজনা। রুদ্ধশ্বাস, শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থতি। পরতে পরতে নাটকীয়তা। অবশেষে অপ্রত্যাশিত কিংবা প্রত্যাশিত সমাপ্তি। মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সুপার টুয়েলভে ভারত-পাকিস্তানের ম্যাচে এগুলোর কোনটি ছিল না!

নানা নাটকীয়তা আর রুদ্ধশ্বাস পরিস্থিতি শেষে বিরাট কোহলির বীরত্বে অসাধারণ এক জয় পেয়েছে ভারত। পাকিস্তানের করা ১৫৯ রান তাড়া করতে নেমে শেষ বলে মেন ইন ব্লু’রা জিতেছে ৪ উইকেটে।

এদিন পাকিস্তানের বোলিং তোপের মুখে ৩১ রানেই ৪ উইকেট হারিয়ে বসে ভারত। দলীয় ৭ রানের মাথায় নাসিম শাহর বলে বোল্ড হয়ে যান লোকেশ রাহুল (৪)। ১০ রানের মাথায় হারিস রউফের বলে আউট হন অধিনায়ক রোহিত শর্মা (৪)। ২৬ রানের মাথায় রউফের দ্বিতীয় শিকারে পরিণত হন মারকুটে ব্যাটসম্যান সূর্যকুমার যাদব। ১০ বলে ২ চারে ১৫ রান করেন তিনি।

বার বার সঙ্গী হারালেও কোহলি ছিলেন ঠাণ্ডা মাথায়। দেখে-শুনে নিচ্ছিলেন রান। পঞ্চম উইকেটে হার্দিক পান্ডিয়া এসে তার সঙ্গে জুটি বাঁধেন। এই জুটিতে তারা দুজন ১১৩ রান তোলেন মাত্র ৭৮ বলে।

তাদের অসাধারণ জুটির পরও শেষ দুই ওভারে জিততে ভারতের প্রয়োজন ছিল ৩১ রান। পাকিস্তানের মতো বোলিং লাইন-আপের বিপক্ষে এই রান নেওয়া অসম্ভব না হলেও বেশ কঠিন। হারিস রউফের করা ১৯তম ওভারের শেষ দুই বলে দুই ছক্কা হাঁকান কোহলি। তাতে ওই ওভারে আসে ১৫ রান। জিততে শেষ ওভারে ভারতের প্রয়োজন হয় ১৬ রান।

এরপরই যেন নাটকীয়তার শুরু। পেসারদের বোলিং কোটা শেষ। পাকিস্তানের অধিনায়ক বাবর আজম ভরসা রাখলেন মোহাম্মদ নাওয়াজের ওপর। কিন্তু ডুবলেন তিনি, ডোবালেন পাকিস্তানকে। যদিও শুরুটা করেছিলেন আশা জাগানিয়া।

তার করা ২০তম ওভারের প্রথম বলেই হার্দিক পান্ডিয়া আউট হয়ে যান। দ্বিতীয় বলে কার্তিক ১ রান নিয়ে প্রান্ত বদল করেন। তৃতীয় বলে কোহলি এসে নেন ২ রান। তাতে জিততে শেষ ৩ বলে প্রয়োজন হয় ১৩ রান। এরপরই যেন ‘গণেশ উল্টানোর’ মতো সব উল্টে গেল। পাল্টে গেল দৃশ্যপট।

চতুর্থ বলটি নো করেন নাওয়াজ, সেই বলে কোহলি ছক্কা হাঁকান। তাতে চার বলেই ১০ রান পেয়ে যায় ভারত। ৩ বলে ১৩ রান থেকে কমে হয় ৩ বলে ৬ রান। চতুর্থ বলটি ওয়াইড করেন নাওয়াজ। ফ্রি হিট থাকে বহাল। চতুর্থ বলে লেগ বাই থেকে আসে আরও ৩টি রান। তাতে ২ বলে জিততে ৩ রান প্রয়োজন হয় ভারতের। পঞ্চম বলে কার্তিককে আউট করে আবার ম্যাচ জমিয়ে তোলেন নাওয়াজ। কিন্তু এরপর একটি ওয়াইড দিয়ে বিপদ ডেকে আনেন। অশ্বিন শেষ বলটি মিড অফে পাঠিয়ে ১ রান নিয়ে জয় নিশ্চিত করেন।

এমন একটি ওভারের পর পাকিস্তানের সমর্থকরা বলতেই পারেন— এভাবেও ম্যাচ হারা যায়?

তবে কৃতিত্ব দিতে হবে কোহলিকে। এমন চাপের ম্যাচে ঠাণ্ডা মাথায় কি দুর্দান্ত ইনিংসটাই না খেললেন! একেবারে চোখে লেগে থাকার মতো। আত্মবিশ্বাসী এক-একটা শট। ঠিক যেন জ্যামিতির কম্পাসে মাপা শট। যেটা যেখানে পাঠানোর চিন্তা করেছেন, সেটা ঠিক সেখানে গিয়েই আছড়ে পড়েছে। অনবদ্য ব্যাটিংয়ে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তানকে আছড়ে ফেলেছেন ম্যাচের বাইরে।

৫৩ বলে ৬টি চার ও ৪ ছক্কায় অপরাজিত ৮২ রানের ইনিংস খেলে ম্যাচসেরা হন কোহলি। বল হাতে পাকিস্তানের মোহাম্মদ নাওয়াজ ও হারিস রউফ ২টি করে উইকেট নেন।

তার আগে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে দুই ওপেনার বাবর আজম ও মোহাম্মদ রিজওয়ান তাড়াতাড়ি বিদায় নেন। তবে ইফতিখার আহমেদ ও শান মাসুদের হাফ সেঞ্চুরিতে ৮ উইকেটে ১৫৯ রান করতে পারে পাকিস্তান।

১৫ রানেই ২ উইকেট হারানোর পর মাসুদ ও ইফতিখারের ৭৬ রানের জুটিতে প্রতিরোধ গড়ে পাকিস্তান। কিন্তু এই জুটি ভাঙতেই বিপদে পড়ে তারা। ইফতিখার ৫১ রান করে বিদায় নেওয়ার আগে চার ছক্কা মেরে রানের গতি বাড়ান। তার আউটে পর হার্দিক পান্ডিয়ার জোড়া আঘাতে ২ উইকেটে ৯১ রান করা দলটি ৯৮ রানে হারায় ৫ উইকেট। শেষ দিকে মাসুদের সঙ্গে শাহীন শাহ আফ্রিদি রান বাড়ান।

১৯তম ওভারে দুটি চার মেরে হাফ সেঞ্চুরির পথে এগিয়ে যান মাসুদ। ৪০ বলে ফিফটি করেও ফেলেন। এরপর আফ্রিদি ১৯তম ওভারে ছয়-চার মেরে ১৪ রান যোগ করেন স্কোরবোর্ডে। শেষ ওভারের দ্বিতীয় বলে ভুবনেশ্বর কুমারকে ফিরতি ক্যাচ দেন আফ্রিদি, বিদায় নেন ৮ বলে ১৬ রান করে। নেমেই ছয় মারেন হারিস রউফ। শেষ ওভারে যোগ হয় আরও ১০ রান।

শেষ তিন ওভারে ৩৪ রান তোলে পাকিস্তান, হারায় এক উইকেট। তাতেই পাকিস্তানের দলীয় সংগ্রহ ১৫৯ পর্যন্ত যায়।

বল হাতে ভারতের অর্শ্বদীপ সিং ও হার্দিক পান্ডিয়া ৩টি করে উইকেট নেন।