শাসনগাছা ফ্লাইওভারের সুফল পাচ্ছে না কুমিল্লা নগরবাসী

বাস টার্মিনালের অব্যবস্থাপনায়-----
স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশ: ২ years ago

কুমিল্লার নগরীর যন্ত্রনার আরেক নাম শাসনগাছা ফ্লাইওভার। অথচ নগরবাসীকে যানজটের যন্ত্রনা থেকে মুক্ত করতেই করা হয়েছিল এ ফ্লাইওভার। কিন্তু শাসনগাছা বাস টার্মিনাল কর্তৃপক্ষের অব্যবস্থাপনা ও ট্রাফিক পুলিশের স্বল্পতাসহ নানা কারণে এই ফ্লাইওভারের সুফল থেকে ক্রমান্বয়ে বঞ্চিত হচ্ছে নগরবাসী।
যানজটে নাকাল শাসনগাছা ও এর আশেপাশের এলাকা। এর বিরুপ প্রভাব ফেলে গোটা কুমিল্লা নগরীতে। ফ্লাইওভারে উঠতে-নামতে এমনকি ফ্লাইওভারের উপরেও এখন প্রায়ই লেগে থাকে যানজট। কখনও কখনও সেই যানজট ছাড়িয়ে নগরীর শাসানগাছা এলাকা থেকে পুলিশ লাইন এবং ঝাউতলা পর্যন্ত দীর্ঘ হয়। বাস টার্মিনালের কর্তৃপক্ষের অব্যবস্থাপনা,অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতা,অবহেলার কারনে দিন দিন এ যানজট ভয়াবহ আকার ধারন করছে বলে ভুক্তভোগীরা জানান।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ,ফ্লাইওভারের মুখে ও নিচে বিভিন্ন স্থানে বাস ও মিনি বাস,অটোরিকাশা দাঁড় করিয়ে যাত্রী ওঠানামা করানো,বিভিন্ন যানবাহনকে ফ্লাইওভারে উঠতে বাধ্য করা,ফøাইওভারে প্রবেশমুখের সড়কের বেহালদশাসহ নানা কারনে এ যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। এতে করে যানজট নিরসনের জন্য তৈরী ফ্লাইওভার এখন নগরবাসীর জন্য সীমাহীন ভোগান্তিতে পরিণত করছে।
কুমিল্লা সড়ক ও জনপথ বিভাগ সূত্র জানা যায়, ২০১৩ সালের জুলাই মাস থেকে ফ্লাইওভারটির নির্মাণ কাজ শুরু হয়। ৯৪ কোটি টাকা ব্যয়ে ৬৩১ দশমিক ৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের এ ফ্লাইওভারটি নির্মাণ করেছে বাংলাদেশি স্প্রেক্টা ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড কোম্পানি। দীর্ঘ পাঁচ বছর নির্মাণ কাজ শেষে ২০১৮ সালের ৫ এপ্রিল ফ্লাইওভারটি উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ।
যদিও শাসনগাছা রেলক্রসিংয়ের কারণে বার বার রেল গেইট আটকে থাকার কারণে যানজটে জনজীবন বিপর্যস্তের কথা চিন্তা করে ফ্লাইওভারটি নির্মাণ করা হলেও শাসনগাছা বাস টার্মিনাল কর্তৃপক্ষের অব্যবস্থাপনা, অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতা কারনে সেই সুফলটি পাচ্ছে না নগরবাসী। এখন অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে, ফ্লাইওভারে উঠতে যানজট, নামতে যানজট, রেলগেইটে যানজট আর বাস টার্মিনাল এলাকাতো যানজটের মহাকারখানায় পরিণত হয়ে আছেই।রাত ১২টার পর প্রায় থাকে না ফ্লাইওভারের সড়ক বাতি গুলো।
সোমবার (১২ সেপ্টেম্বর ) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়,শাসনগাছা ফ্লাইওভারের নিচের সড়কে মাঝপথে বিভিন্ন বাস দাঁড় করিয়ে যাত্রী ওঠানামা করানো হয়। এতে করে পেছনের দিকের গাড়িগুলোর দীর্ঘ লাইন তৈরী হচ্ছে। একই স্থানে ফ্লাইওভারের নিচের দিকের রাস্তাটি অত্যন্ত সরু হওয়ায় একটার বেশি গাড়ি প্রবেশ করতে পারে না। যদিও ফ্লাইওভারের নিচের সরু রাস্তা বড় করতে বর্তমানে সংস্কার কাজ করছে বলে জানায় সড়ক বিভাগ।
পপিয়া পরিবহনের চালক আব্দুল খালেক মোল্লা বলেন, শাসনগাছা পার হতে আমাদের ৪০ মিনিট থেকে কখনো কখনো ১ ঘন্টা সময় লেগে যায়। এখানে কেউ কারো কথা শুনে না। আমরা চালকরা একদিকে শুনি যাত্রীর বকা অপর দিকে লাঠির গুতা খাই ট্রাফিক পুলিশের। কিন্তু গাড়িতো ভাই সামনে আগাতে পারি না।
সুগন্ধা পরিবহনের মধ্যবয়সী এক চালক নাম প্রকাশ না করে বলেন, এখানে আরো তিনটা ফ্লাইওভার করলেও কাজ হবে না। এই বাসটার্মিনালের যারা কর্তাব্যক্তি তাদের সদইচ্ছা থাকতে হবে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে আরো কয়েকজন পরিবহন শ্রমিক নেতা বলেন, এই বাস টার্মিনালকে কেন্দ্র করে অনেক রাজনীতি আছে, টাকার খেলা আছে। সুতরাং এখানে শৃখংলা আনতে হলে প্রশাসনের কঠোরতার পাশাপাশি রাজনৈতিক সদইচ্ছা থাকাও জরুরি।
কথা হয় তানিয়া আক্তার নামের এক শিক্ষার্থী জানান,দাউদকান্দি থেকে শহরে বিশ^বিদ্যালয়ের ভর্তি কোচিং করতে এসেছি। কোচিং শেষে বাড়ি ফেরার সময় দুপুর একটায় যখন ফ্লাইওভারে সামনে আসি, তখন দেখি পুরো রাস্তায় যানজট। প্রায় ১ঘন্টা ১০ মিনিট এখানে যানজটে ছিলাম । গাড়ি সামনেও যায় না পেছনেও যায় না। কি এক আজব দেশে বাস করছি, প্রশ্ন ঐ শিক্ষার্থীর।
এ বিষয়ে শাসনগাছা শ্রমিকলীগ নেতা টিটু মিয়া বলেন,আমরা সবসময় চেষ্টা করি যেন যানজট দীর্ঘ না হয়। আমি নিজেই ট্রাফিকের দায়িত্ব পালন করি।এখানে ট্রাফিক পুলিশ খুবই জরুরী। আমরা সব সময় বিষয়টি সিটি কপোরোশেন ও ট্রাফিক পুলিশ সুপারের কাছে বলে আসছি। কোনো সমাধান মিলেনি।
কুমিল্লা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ট্রাফিক) রাজন কুমার দাস বলেন,শাসনগাছা এলাকা আমাদের ৩জন ট্রাফিক পুলিশ নিয়মিত থাকে। যেহেতু সেখানে একটা বাস টার্মিনাল রয়েছে, তাই টার্মিনালের গাড়িগুলো বিশৃঙ্খলা করে। বিষযটি আমরা সরেজমিনে গিয়ে দেখবো ।
কুমিল্লা সিটি করোপেশনের প্রধান নির্বাহী ড.সফিকুর রহমান বলেন,বিষয়টি সড়ক বিভাগের দায়িত্ব।আমাদের অংশটুকু আমরা সব সময় যানজট মুক্ত রাখার চেষ্টা করি । ইজারাদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ থাকলে আমরা বিষয়টি সত্যত্যা যাচাই করে প্রয়োজনী ব্যবস্থা গ্রহন করবো ।
কুমিল্লা সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সুনীতি চাকমা বলেন,শাসনগাছা ফ্লাইওভারের নিচের সড়কে প্রায় ১৩ কোটি টাকার কাজ চলমান রয়েছে। তাই হয়তো কিছু সমস্যা থাকতে পারে। আমরা শাসনগাছা ইজারাদার ও সিটি কপোরেশনের সাথে বসে যানজটের বিষয় নিয়ে কাজ করবো ।এছাড়া ফ্লাইওভারের লাইটগুলো বন্ধ বিষয় আপনাদের মাধ্যমে শুনেছি।আমাদের লোক পাঠিয়ে তা সমাধান করা হবে ।