শিক্ষকদের থাপড়িয়ে দাঁত ফেলে দেয়ার হুমকি কুবি কর্মকর্তার

হাছান আল মাহমুদ ।।
প্রকাশ: ২ মাস আগে

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের নবগঠিত শিক্ষক সমিতির সদস্যদের থাপড়িয়ে দাঁত ফেলে দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন কুবি অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও ডেপুটি রেজিস্ট্রার মোহাম্মদ জাকির হোসেন। সোমবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কক্ষে নবগঠিত শিক্ষক সমিতির নেতৃবৃন্দ সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে গেলে তিনি এ হুমকি কথা বলেন।

এ সংক্রান্ত একটি ভিডিও আমাদের কুমিল্লার হাতে এসেছে ।

ভিডিওতে দেখা যায়, নবগঠিত শিক্ষক সমিতির নেতৃবৃন্দের সাথে ভিতরে কথা বলার এক পর্যায়ে সাবেক কয়েকজন শিক্ষার্থী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন পদে আবেদন করা শিক্ষার্থীদের নিয়ে কয়েকজন কর্মকর্তা ও কর্মচারি নিয়ে উপাচার্যের কক্ষে প্রবেশ করার চেষ্টা করেন জাকির। তখন তাদের কক্ষে প্রবেশ করতে বাধা প্রদান করেন সহকারী প্রক্টর হাসেনা বেগম। তখন ঐ প্রক্টরের সাথে উচ্চবাচ্য করতে দেখা যায় ডেপুটি-রেজিস্ট্রার জাকির হোসেন। এসময় চাকরিপ্রার্থী সাবেক কয়েকজন ছাত্রলীগ নেতাকে শিক্ষকদের সাথে উচ্চবাচ্য করতে দেখা যায়। পরে উপাচার্যের দপ্তরের দরজা ভেঙ্গে শিক্ষকদের দিকে তেড়ে যেতে দেখা যায় তাদের। এসময় কর্মকর্তা-কর্মচারী ও সাবেক শিক্ষার্থীদের সাথে প্রক্টরিয়াল বডির সাথে ধাক্কাধাক্কি করতে দেখা যায়। তাদের এমন প্রবেশ নিয়ে ভিতর থেকে প্রশ্ন তুলেন শিক্ষক নেতৃবৃন্দ।

এসময় শিক্ষকদের উদ্যেশে তারা গালিগালাজ করতে দেখা যায় তাদের। তখন তারা বলেন, “চিল্লাইতেছেন কেন আপনারা, চিল্লাইতেছেন কেন? আপনারা গুণ্ডামি করেন। আমাদের আইন শিখান, কোথায় লিখা আছে এখানে আসা যাবে না।”

তখন তাদের বের করে দিতে আসার নওয়াব ফয়জুন্নেছা চৌধুরানী হলেন প্রাধ্যক্ষ জিল্লুর রহমানের উপস্থিতিতে জাকির বলেন, “চিল্লাইতেছে কেন, আমরা মানুষ না। থাপড়াইয়া দাঁত ফালাইয়া দিমু।”

কর্মকর্তা-কর্মচারী ও সাবেক শিক্ষার্থীদের এমন আচরণে ক্ষোভ জানিয়ে শিক্ষক সমিতির অর্থ সম্পাদক ও সহকারী অধ্যাপক মো. মুর্শেদ রায়হান সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লিখেন, “উপাচার্য লালন করছে এক্স স্টুডেন্ট। ভিসি কক্ষ তার দুর্গ। ক্যাডার বাহিনী: প্রক্টরিয়াল বডি, কতিপয় কর্মচারী-কর্মকর্তা, অছাত্র ছাত্র! সন্ত্রাসী দিয়ে শিক্ষক হামলা। শিক্ষকরা কি কথা বলতে পারবে না?”

তবে বিষয়টি অস্বীকার করে ডেপুটি রেজিস্ট্রার মোহাম্মদ জাকির হোসেন বলেন, “এমন কোনো কিছু আমি বলিনি। ওই মুহূর্তে সবাই হইচই করছিল, কে কাকে কি বলেছে আমি জানি না।”

কর্মকর্তাদের অফিস সময় বিকাল চারটায় শেষ হয়ে গেলেও, সেখানে জাকির হোসেনের উপস্থিতির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “ভিসি স্যারের সাথে অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের মিটিং ছিল আজকে। সেজন্য আমরা ভিসি স্যারের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান করছিলাম।”
তবে উপাচার্য দপ্তরের সহকারী রেজিস্ট্রার হোসাইন মোর্শেদ ফরহাদ জানান, আজকে উপাচার্যের সাথে অফিসার্স এসোসিয়েশনের কোনো অ্যাপয়েন্টমেন্ট ছিল না। আজকে সবই উদ্ভূত পরিস্থিতিতে হয়েছে।
অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. কাজী মোহাম্মদ কামাল উদ্দিন বলেন, “আমাদেরকে ‘হু আর ইউ’ বলেছে, অপমান করেছে, হামলা করার চেষ্টা করেছে এর বিচার যতদিন না হবে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে কোন কর্মকর্তা চলতে পারে না। একজন কর্মচারী কেন এখানে এসে একজন শিক্ষককে বলে ‘হু আর ইউ’। আমরা এখানে এসেছি উপাচার্য স্যারের সাথে আলোচনা করার জন্য। তারা আমাদের সাথে এইরকম ব্যবহার করতে পারে তারা আমাদেরকে যে কোন কিছু করতে পারে।”

এদিকে উপাচার্যের কক্ষে শিক্ষক নেতাদের অবস্থানের কারণে তাদের সাথে কথা বলা সম্ভব হয়নি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর (ভারপ্রাপ্ত) ড. কাজী ওমর সিদ্দিকী বলেন, “ভিসি দপ্তরে হট্টগোল হয়ে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে আমরা প্রক্টরিয়াল বডি সেটা সমাধানের চেষ্টা করেছি।”অছাত্ররা ভিসি দপ্তরে এসে ঝামেলা করতে পারে কিনা এই প্রশ্নের জবাবে বলেন, এখানে কেউ অছাত্র আছে বলে আমাদের জানা নেই। আমরা যদি কারো বিরুদ্ধে অছাত্রের অভিযোগ পাই আমরা ব্যবস্থা নিবো। আর এখানে যারা আছে তারা অনেকে সান্ধ্যকালীন কোর্সের ছাত্র, তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র, তারা এখানে যে পরিস্থিতি, তাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হিসেবে তারা আসতে পারে।
মেহেদী হাসান বলেন, আজ শিক্ষক সমিতির নির্বাচনের পর আমরা উপাচার্যের সাথে দেখা করতে যাই। উপাচার্য আমাদের সাথে দেখা করবেন না জানিয়ে বলেন, “কিসের শিক্ষক সমিতি!” তখন আমরা স্যারকে বোঝানোর চেষ্টা করি দেখা করার বিষয়ে। তখন তিনি আমাকে বলেন আপনি একজন মিথ্যাবাদী। ওই মুহূর্তে রুমের ভেতর থেকে কেউ একজন কল দিলে কর্মকর্তা জাকির হোসেনসহ কিছু অছাত্র ও বহিরাগতরা এসে উপাচার্যের রুমে জোরপূর্বক প্রবেশ করে শিক্ষকদের উপর চড়াও হন এবং অশালীন মন্তব্য করেন।

তিনি আরও বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতা এবং আজকের এই ঘটনার পিছনে প্রক্টর দায়ী। তাই আমরা প্রক্টরের পদত্যাগের দাবিতে ও আজকের এই ঘটনার সুষ্ঠু বিচারের দাবিতে উপাচার্যের রুমে অবস্থান করছি।