সম্মেলনের ভিতরে শান্তিপূর্ণ বাহিরে দুই এমপির সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে আহত ১০

কুমিল্লা মহানগর আওয়ামীলীগের সম্মেলনে এমপি সীমাকে ঢুকতে না দেওয়ার অভিযোগ
স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশ: ১ বছর আগে

কুমিল্লা মহানগর আওয়ামীলীগের প্রথম ত্রি বার্ষিক সম্মেলনের ভিতর ঢুকতে দেওয়া হয়নি কুমিল্লা মহানগর আওয়ামীলীগের সহ সভাপতি ও সংরক্ষিত নারী আসনের এমপি আঞ্জুম সুলতানা সীমাকে। তিনি নিজেই এ কথা নিশ্চিত করে বলেন, আমি সম্মেলনে ঢুকতে চেয়েও না গেইট বন্ধ করে দেওয়ায় ঢুকতে না পেরে চলে আসি। চলে আসার সময় পেছন থেকে স্থানীয় এমপি বাহার সাহেবের লোকেরা আমার নেতাকর্মীদের উপর হামলা চালিয়ে ১০/১২ জন নেতাকর্মীকে আহত করে। অপর দিকে মহানগর আওয়ামীলীগের সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক আবিদুর রহমান জাহাঙ্গীর জানিয়েছেন, আমরা সম্মেলনের ভিতরে ছিলাম। বাহিরে কি হয়েছে জানিনা।
এদিকে, আজকের মহানগর আওয়ামীলীগের সম্মেলনকে কেন্দ্র করে গত এক সপ্তাহ ধরেই কুমিল্লা মহানগর আওয়ামীলীগের সভাপতি আকম বাহা উদ্দিন বাহার এমপি ও সহ সভাপতি আঞ্জুম সুলতানা সীমা এমপির সমর্থকদের মধ্যে উত্তেজনা চলে আসছিল। বাকুযুদ্ধে ছিলেন দুই এমপিও।
কিন্তু আজ শনিবার(৫ নভেম্বর) সম্মেলনকে কেন্দ্র করে কুমিল্লা টাউন হলের সম্মেলন মঞ্চ ও নগরীর কান্দিরপাড় কেন্দ্রিক সবগুলি সংযোগ সড়কেরই দৃঢ় অবস্থান নিয়ে রাখেন এমপি বাহার সমর্থিত নেতাকর্মীরা।সকাল ৭টার আগেই প্রতিটি সংযোগ সড়কই ছিল বাহার সমর্থিত নেতাকর্মীদের একক আধিপত্য ও অবস্থান। বেলা পোনে ১২টায় যখন আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের উদ্বোধক বক্তা হিসেবে বক্তব্য রাখা শুরু করেন ঠিক তখনি সম্মেলনে স্থলে আসার চেষ্টা করেন আঞ্জুম সুলতানা সীমা এমপি। কিন্তু টাউন হলের গেইট এমপি বাহার সমর্থিত নেতাকর্মীদের নিয়ন্ত্রনে থাকায় তিনি আর সম্মেলন স্থলে প্রবেশ করতে পারেননি। তিনি টাউন হলের গেইট থেকে ফিরে যাওয়ার পর পরই নগরীর নজরুল এভিনিউস্থ রোডে শুরু হয় মুহু মুহু গোলাগুলি ও ককটেল বিস্ফোরণের আওয়াজ । চলে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা। চলে উভয় পক্ষের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া। পরে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ সময় হেমলেট পড়া কয়েকজন যুবক দৈনিক সমকালের ফটোসাংবাদিক এনকে রিপনের ক্যামেরা ছিনিয়ে নেয়। রাবার বুলেট বিদ্ধ হন প্রথম আলোর ফটো সাংবাদিক এম সাদেক।
এ সময় সম্মেলনে মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বক্তৃতা চালিয়ে গেলেও সম্মেলনের ভিতরেও এমপি বাহার সমর্থিত নেতাকর্মীদের মধ্যে কিছুটা অস্থিরতা দেখা যায়। তবে তা মঞ্চ থেকেই নিয়ন্ত্রন করেন এমপি বাহার।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কুমিল্লা মহানগর আওয়ামীলীগের সহ সভাপতি ও সংরক্ষিত নারী আসনের এমপি আঞ্জুম সুলতানা সীমা বলেন, গতকাল (শুক্রবার) রাতেও কেন্দ্রীয় নেতাদের সাথে আমার কথা হয়েছে। উনারা বলেছে সম্মেলনে সবাই যেতে পারবে, সমস্যা নেই। আজ যখন আমাকে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না তখন আমি টাউন হলের গেইটের সামনে থেকে হানিফ চাচা(যুগ্ম সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ)কে ফোন দিলে তিনি জানান, তুমি একা এসো। তখন আমি বললাম আমার সাথে তো নেতাকর্মীরা রয়েছে। তখন হানিফ চাচা বলল, আচ্ছা আমি দেখছি। পরে আর তিনি কিছু না বলায় আমি চলে এসেছি । আমি চলে আসার পর এমপি বাহারের নেতাকর্মীরা আমার নেতাকর্মীদের উপর হামলা করে ১০/১২জনকে আহত করেছে। এর মধ্যে দূর্গাপুরের মফিজ মিয়ার পায়ে ৩টা গুলি লেগেছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে অপর দিকে মহানগর আওয়ামীলীগের সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক আবিদুর রহমান জাহাঙ্গীর জানিয়েছেন, আমরা সম্মেলনের ভিতরে ছিলাম। বাহিরে কি হয়েছে জানিনা।
এ বিষয়ে কুমিল্লা জেলা পুলিশ সুপার আবদুল মান্নান বলেন, ওই এলাকার পরিস্থিতি শান্ত আছে। টাউন হল মাঠের বাইরে অন্য সড়কে ঝামেলা হয়েছিল। প্রশাসন পরিস্থিতি সামাল দিয়েছে।
উল্লেখ্য, আজ শনিবার সোয়া ১১টায় আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার এমপির সভাপতিত্বে কুমিল্লা টাউন হল মাঠে মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলন শুরু হয়। এরপর ওবায়দুল কাদের বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে সম্মেলনের উদ্বোধন করেন। সম্মেলনে প্রধান অতিথি ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম। প্রধান বক্তা ছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ। বিশেষ অতিথি ছিলেন কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাইদ আল মাহমুদ, কেন্দ্রীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক মো. আবদুস সবুর, কেন্দ্রীয় ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী।