সাড়ে ৬ বছরেও বাস্তবায়ন হয়নি শহর সুরক্ষা প্রকল্প

চাঁদপুর প্রতিনিধি।।
প্রকাশ: ১০ মাস আগে

পদ্মা-মেঘনার ভাঙনে ক্রমশ বাস্তচ্যুত হয়ে নিঃস্ব হচ্ছেন চাঁদপুর শহর রক্ষা বাঁধের পাশে বসবাসকারী নানা পরিবার, বিভিন্ন চরাঞ্চলের বাসিন্দারা। তাই ২০১৭ সালে এখানে স্থায়ী এবং শক্তিশালী বাঁধ নির্মাণের লক্ষ্যে ‘চাঁদপুর শহর সুরক্ষা’ নামে একটি প্রকল্প নেওয়া হয়। কিন্তু দীর্ঘ সাড়ে ছয় বছরেও সেই প্রকল্প আলোর মুখ দেখেনি। কবে এটি বাস্তবায়ন হবে সে বিষয়েও সংশ্লিষ্টদের কেউ নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারছেন না।

চলতি বর্ষা মৌসুমে হঠাৎ মেঘনার করাল গ্রাসে একে একে হারিয়ে যাচ্ছে বসতভিটা, শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান এবং ফসলি জমি। বর্তমানে চাঁদপুর সদর, হাইমচর ও মতলব উত্তর উপজেলার ২৪টি ইউনিয়নের কয়েকশ পরিবার নদীর ভাঙন ঝুঁকিতে রয়েছে।

চাঁদপুর সেচ প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জহিরুল ইসলাম যুগান্তরকে জানান, চাঁদপুর শহর রক্ষায় ভাঙনরোধে দুই বছর আগে স্টাডির মাধ্যমে ডিপিপি করে প্ল্যানিং কমিশনে জমা দেওয়া হয়েছে। এখন সেখান থেকে অনুমোদন হলে কাজ শুরু করা যাবে। বর্তমানে বর্ষা মৌসুমে ভাঙন রোধে তাৎক্ষণিকভাবে জরুরি হিসাবে ব্লক ও জিও ব্যাগ মজুত আছে। এখন সে ধরনের পরিস্থিতিতে তেমন কোনো সমস্যা হবে না। চাঁদপুর সদরের মেঘনার পশ্চিমে নদী বেষ্টিত ব্যাপক জনঅধ্যুষিত রাজরাজেশ্বর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান হযরত আলী বেপারী জানান, আমাদের পুরো ইউনিয়ন পদ্মা ও মেঘনার ভাঙনের শিকার। প্রতি বছর বর্ষায় চরাঞ্চলের বাসিন্দাদের দুর্ভোগের সীমা থাকে না। ওই ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা এ পর্যন্ত ৬ থেকে ৭ বার ভেঙেছে। সরকার ব্যবস্থা না নিলে অচিরেই জেলার মানচিত্র থেকে বিশাল জনগোষ্ঠীর গুরুত্বপূর্ণ এই ইউনিয়ন হারিয়ে যাবে।

হাইমচর উপজেলার নীলকমল ইউনিয়নের ইশানবালার সাবেক ইউপি সদস্য মিজানুর রহমান জানান, ইশানবালার ভাঙনরোধে কয়েকবার পানি উন্নয়ন বোর্ড বালু ভর্তি জিও টেক্সটাইল ব্যাগ দিয়ে প্রতিরোধের চেষ্টা করলেও কোনো লাভ হয়নি। বর্ষা চলছে। ভাঙনের মাত্রাও বাড়ছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড মেঘনা ধনাগোদা প্রকল্পের দায়িত্বপ্রাপ্ত বর্তমানে চাঁদপুরের অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা উপ-সহকারী প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, মতলব উত্তর উপজেলা থেকে শুরু করে হাইমচর পর্যন্ত পদ্মা ৫ কিলোমিটার, মেঘনা ৫৮ কিলোমিটার। বর্তমানে ভাঙন প্রবণ এলাকা প্রায় ১২ কিলোমিটার। এ পর্যন্ত চাঁদপুর সদর ও হাইমচরে নদী তীর সংরক্ষণ হয়েছে ২১.৫৮৯ কিলোমিটার। বর্তমানে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা ১০.৩০০ কিলোমিটার। এর মধ্যে হানারচর থেকে হামইচরের নয়ানী ৪ কিলোমিটার, হাইমচরের মেঘনা নদীর পশ্চিমে ইশানবালায় ৪.৩০০ কিলোমিটার এবং একই উপজেলার আলু বাজার এলাকায় ২ কিলোমিটার। তিনি আরও জানান, বর্তমান সরকারের আমলে অর্থাৎ ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত চাঁদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড ১৫.৫৩৯ কিলোমিটার নদী তীর সংরক্ষণের কাজ করেছে। চাঁদপুর সদরের হানারচর ইউনিয়নের হরিণা ফেরিঘাট এবং হাইমচরের চরভৈরবী কাটাখাল রক্ষা প্রকল্পে ১.৬০০ কিলোমিটার নদী তীর সংরক্ষণ কাজ চলমান রয়েছে।

ইতোপূর্বে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনিও মেঘনার ভাঙন থেকে চাঁদপুর শহরকে রক্ষায় জরুরি ভিত্তিতে কাজ শুরু করার জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডের সংশ্লিষ্টদের অনুরোধ জানিয়েছেন।

এদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ড চাঁদপুরের নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয়ের সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্টাল অ্যান্ড জিওগ্রাফিক ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (সিইজিআইএস) সমীক্ষার প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, ১৯৭২ সালে চাঁদপুর শহর নদী ভাঙনের শিকার হয়। তখন সরকার নিজস্ব অর্থায়নে চাঁদপুর শহর রক্ষা প্রকল্প (১ম পর্যায়) কাজ শুরু করে। এরপর ১৯৮৮ সালের ভয়াবহ বন্যার পরে এফডিআরের অধীনে চাঁদপুর শহর রক্ষার জন্য সীমিত আকারে কাজ করা হয়। ১৯৯৭ সালে সম্পূর্ণ পাউবোর নিজস্ব পরিকল্পনা ও নকশার মাধ্যমে চাঁদপুর শহর সংরক্ষণ প্রকল্প (২য় পর্যায়) কাজ শুরু হয়। বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার ২০০৮ সালে ক্ষমতায় আসার পর শহর রক্ষা বাঁধ আরও শক্তিশালী করার লক্ষ্যে কাজ শুরু করে। সর্বশেষ চাঁদপুর শহর সুরক্ষার জন্য ৩ হাজার ৪শ কোটি টাকা ব্যয়ে ৩ হাজার ৩৬০ মিটারের একটি প্রকল্প চূড়ান্ত করে পাউবো।

এই প্রতিবেদন থেকে আরও জানা যায়, চাঁদপুর শহরের অবস্থান মেঘনার বাম তীরে, যেখানে মেঘনা ও পদ্মার প্রবাহ মিশেছে। সেই এলাকাটি অত্যন্ত প্রশস্ত এবং গভীর। নদীর ভাঙনে শহরটি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। তাই এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে শুধু শহরই রক্ষা পাবে তা নয়, মূল্যবান জমি ও সম্পদ বাঁচবে এবং নদী ভাঙন থেকে তীরের বাসিন্দারাও রক্ষা পাবে।