সৌদি আরবে সড়কে নিহত তিন জনের কুমিল্লার বাড়িতে চলছে শোকের মাতম

স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশ: ১ বছর আগে

সৌদি আরবে মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় ১৩ বাংলাদেশি নিহত হয়েছেন। জেদ্দা থেকে ৬০০ কিলোমিটার দূরে যাওয়ার পথে তাদের বহনকারী বাসটি গভীর খাদে পড়ে যায়। এতে মোট ২২ জন নিহত হন। নিহত ১৩ বাংলাদেশির মধ্যে দুই জনের বাড়ি কুমিল্লার মুরাদনগরে আর এক জনের বাড়ি দেবিদ্বারে।

নিহতরা হলেন, মুরাদনগর উপজেলা রামচন্দ্রপুর দক্ষিণ ইউনিয়নের মোস্তাাপুর গ্রামের মোহাম্মদ আউয়াল মিয়ার ছেলে মামুন মিয়া (২২) ও একই উপজেলার রাসেল মোল্লা। অপর জন হলেন , দেবিদ্বার উপজেলার রাজামেহার গ্রামের মীর বাড়ির আব্দুল হামিদের ছেলে মো. গিয়াস উদ্দিনও মারা গেছেন ওই দুর্ঘটনায়।

বুধবার (২৮ মার্চ) সকালে মোস্তাপুর গ্রামের মোহাম্মদ আউয়াল মিয়ার ছেলে মামুন মিয়ার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় করুণ দৃশ্য। ঘরের ভেতর আর্তনাদ করছেন মা মমতাজ বেগম।পাশে বসে আছেন বাবা আউয়াল। দুই বোন আছেন অন্য ঘরে। তারাও কান্না ভেঙে পড়েছেন। স্বজনরা ভীড় করছেন বাড়িতে।

জানা গেছে, মামুন ৬ মাস আগে সৌদি আরব গেছেন। সংসারের অভাব গুছাতে জেলে পেশা ছেড়ে চার লাখ টাকা ঋণ করে মোট পাঁচ লাখ টাকা খরচ করে প্রথমে মামুন সৌদিতে ফাঁড়ি জমান। পরে বড় ভাই হারিছ মিয়াকেও সৌদি নেন।

বাবা আউয়াল মিয়া জানান, দুই মাসে ৫০ হাজার টাকা পাঠান বাড়িতে। বাকি দুই মাসের টাকা জমান ওমরা করার জন্য। ওমরায় রওনা হওয়ার আগে বাবাকে কল দিয়ে দোয়া চান।

আউয়াল মিয়া বলেন, যদি জানতাম আমার ছেলে লাশ হবে। আমি কি যাইতে দিতাম? আমার ছেলের লাশ সরকার যেন আমাদের দেখার সুযোগ দেন। আমি আমার ছেলের লাশ চাই।

মামুনের মামি তাছলিমা বেগম বলেন, মামুনের এক মামার নাম ইয়ার হোসেন। তিনি সৌদি আরবে দীর্ঘদিন থাকেন। তিনিই প্রথমে নিয়েছেন মামুনকে। পরে নিয়েছেন মামুনের আরেক ভাই হারিছকে। মামুন সেখানে যাওয়ার পর সৌদি নেন তার ভাগিনা জাহিদুলকে। জাহিদুল ও মামুন এক সঙ্গে কাজ করতেন ইয়ার হোসেনের কাছে। তিনজন মালিকের কাছ থেকে ১২ দিনের ছুটি নেন ওমরা করার জন্য পরে মালিক তাদের অনুমতি দেন।

মামুনের মামি তাছলিমা বেগম আরও বলেন, তারা তিনজন একই রুমে থাকতেন। রুমে থেকে এক সঙ্গে একই বাসে যাচ্ছিলেন। বাসে যেতে যেতে ইয়ার হোসেন তার স্ত্রীর সঙ্গে ভিডিও কলে কথা বলছিলেন। কথা বলার মাঝেই ঘটে দুর্ঘটনা। দুর্ঘটনায় পুরো বাসে আগুন ধরে যায়। দুর্ঘটনার সময় ইয়ার হোসেন ও জাহিদুল বের হতে পারলেও বের হতে পারেননি মামুন।

ইয়ার হোসেন গুরুতর আহত অবস্থায় সৌদি আরবের একটি হাসপাতালে ভর্তি। সেখান থেকে তিনি তার স্ত্রী মরিয়ম বেগমকে জানিয়েছেন, পুরো বাস পুড়ে গেলে মামুনসহ বাকিরা আর বের হতে পারেনি। একদিন পরেও মামুনকে না পেলে হাসপাতালে বরপে সংরক্ষিত একটি লাশ মামুনের বলে সনাক্ত করে। জাহিদুল ও হারিছ গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে আছেন।

মামুনের মা মমতাজ বেগম বলেন, আমার ছেলে কতবার কাগজপত্র ঠিক করেছে। আবার সেগুলো বাদ হয়ে যায়। পরে আবার কাগজপত্র ঠিক করে বিদেশ গেছে। কথা হইছিল একবছর পরে আসলে ছেলেরে বিয়ে করাবো। ছেলে আমার বলে গেছে আমার কি কি লাগবে আমি বলতাম সে আমার জন্য নিয়ে আসবে। এত বাধার পরেও বিদেশ গিয়ে আমার ছেলে আজ নাই। আমার কিচ্ছু চাইনা শুধু ছেলের মুখটা একবার দেখতে চাই।

মুরাদনগরের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আলাউদ্দিন ভূঁইয়া জনি বলেন, একই পরিবারের তিনজন দুর্ঘটনা কবলিত হয়েছেন। একজন মারা গেছেন। মাত্রই নিহত মামুনের বাড়ি এসেছি। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সর্বাত্মক সহযোগিতা থাকবে। তাছাড়া তার লাশ দেশে আনার জন্য যা যা করা দরকার সব করা হবে।

কুমিল্লা জনশক্তি ও কর্মসংস্থান দপ্তরের কর্মকর্তা দেব্রবত ঘোষ বলেন, ‘আমরা ঘটনা শুনেছি। মরদেহ দেশে নিয়ে আসার জন্য যা যা করতে হয়, তার সবই করব।’