‘হাজী ইয়াছিন না থাকলে গত ১৬ বছর কুমিল্লায় বিএনপির নাম নিশানাও থাকতো না’

টক-শো
জাহিদ হাসান নাইম।।
প্রকাশ: ২ মাস আগে

‘হঠাৎ কেন কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির কমিটি বিলুপ্ত পর্দার আড়ালে কি ঘটছে’ বিষয়ক টক শো অনুষ্ঠিত হয়েছে। রবিবার (৫ জানুয়ারী) রাত ৮ টায় কুমিল্লা আল নূর হসপিটাল, মিশন হাসপাতাল প্রা. লি. ও কুমিল্লা হরমোন সেন্টার ও জেনারেল হাসপাতালের সৌজন্যে দৈনিক আমাদের কুমিল্লা ও জনপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল কুমিল্লার জমিনের যৌথ উদ্যোগে ১৬৫ তম পর্বের এ টক শো অনুষ্ঠিত হয়। সাংবাদিক, সংগঠক ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক লেখক শাহাজাদা এমরানের সঞ্চালনায় টকশো তে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কুমিল্লা মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক আতাউর রহমান ছুটি ও আদর্শ সদর উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব সফিউল আলম রায়হান৷

এসময় টকশো’তে সদ্য বিলুপ্তি হওয়া কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির কমিটি ও পর্দার আড়ালের ঘটনা নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা উঠে এসেছে।

আলোচনার এক পর্যায়ে আতাউর রহমান ছুটি বলেন, কমিটি কি কারণে বিলুপ্তি করা হয়েছে তা আমি জানি না। দলের হাই কমান্ডের নির্দেশে হঠাৎ এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে৷ ধারণা করছি, আহবায়ক কমিটির প্রায় পৌনে ৩ বছর হয়ে গিয়েছে। এটা একটা কারণ হতে পারে। পাশাপাশি হাজী ইয়াছিনের অধীনে প্রায় ৪০ জনের একটা কমিটি রয়েছে৷

এই কমিটির অধীনে গত পৌনে ৩ বছরে অনেকগুলো কেন্দ্রীয় প্রোগ্রাম হয়েছে, আন্দোলন সংগ্রাম হয়েছে। সবগুলোই হাজী ইয়াছিনের নেতৃত্বে হয়েছিলো৷ আমার কাছে মনে হয়, এখন বিএনপির সুদিন, যেহেতু আমরা মুক্ত বাতাসে ঘুরছি।

আজ থেকে ২০/২৫ দিন আগে, হাজী ইয়াছিন আমাদেরকে ডেকে বলেছিলো অচিরেই কর্মী সম্মেলনের আয়োজন করতে৷ আর কুচক্রী মহল এটার সুযোগ নিয়েছে। আমি মনে করি আমাদের নেতা তারেক রহমানকে মিসগাইড করা হইছে। এটার আরেকটু তদন্ত করা উচিৎ।

একটা কমিটি, একটা লিডারশিপ যে পরিমাণ লোড নেওয়ার কথা, হাজী ইয়াছিন তার চেয়ে বেশী লোড নিয়েছে। আমার কথা হলো, কমিটি কেন ২/৪ মাস আগে ভাংলেন না। এখন যখন ফলাফল দেখানোর সময় হয়েছে, তখনই কেন কমিটি ভাঙ্গা হলো৷ এটা সম্পূর্ণভাবে মিসগাইড করা হয়েছে বলে আমি মনে করি।

কুমিল্লাতে জুলাই আগষ্টের আন্দোলনে যতগুলো কার্যক্রম হয়েছিলো সবগুলো ইয়াছিন ভাইয়ের নেতৃত্বে হয়েছিলো৷ শ্রম, মেধা ও অর্থের সাহায্যে তিনি এই আন্দোলনকে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন।

এখন আর বিএনপির কারো মধ্যে বিভেদ নেই। স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকতে পারে৷ আমাদের কুমিল্লায় বিএনপির বিচ্ছিন্ন কোনো কমিটিও গঠিত হয় নি। এটা হাজী ইয়াছিনের সফলতা। হাজী ইয়াছিনের মতো নেতা পাওয়া দুষ্কর।

এই হাজী ইয়াছিন ছিলেন বৃহত্তর কুমিল্লার অগ্নিকন্যা রাবেয়া চৌধুরীর উত্তরসূরি। হাজী ইয়াছিন ২০০৬ সাল থেকে এই কুমিল্লা মহানগরের রাজনীতি করছেন। এবং সেই সময় থেকে তিনি পরিচ্ছন্ন রাজনীতি করেছেন।

৫ তারিখের পর আমাদের মধ্যে কিছু অসুস্থ প্রতিযোগীতা তৈরী হয়েছে। এর কারণেই এসব হচ্ছে। যদিও আমাদের নেতা তারেক রহমান বলেছেন এদের কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না। ৪ আগষ্টের আগ পর্যন্ত আমরা আন্ডারগ্রাউন্ডের নেতৃত্ব দিয়েছিলাম। ৫ তারিখ স্বৈরাচারের পতনের পর হাজী ইয়াছিন সবার আগে জেলখানায় গিয়েছিলেন নেতাকর্মীদের খোঁজ নিতে। আর এর পরেই তিনি সংখ্যালঘুদের নিয়ে একটি প্রোগ্রাম করেছিলেন। সেখানে তিনি বলেছিলেন, সংখ্যালঘুদের উপর যেন কোনো অশুভ ছায়া না পড়ে ৷  হাজী ইয়াছিনের কারণেই কুমিল্লায় সংখ্যালঘুদের উপর কোনো আঁছ লাগে নি।

এই সময়ে জেলা কমিটি ভেঙ্গে দেওয়া ঠিক হয় নি৷ এটা সঠিক সময় নয়। এতে জেলা বিএনপি দূর্বল হয়ে পড়বে। আমি আশা করবো এই ষড়যন্ত্র অচিরেই প্রকাশ পাবে।

আমি একটু অতীত স্মরণ করতে গিয়ে বলবো, যখন আমাদের নেতাকর্মীরা মামলার শিকার হতো কেউ বলতে পারবে না তার পরিবার এক টাকা খরচ করতে হয়েছে। হাজী ইয়াছিন জেলখানা থেকে আদালত সব জায়গায় তিনি ব্যবস্থা করতেন নিজ অর্থে। তিনি জেলখানায় ফ্যানের ব্যবস্থাও করে দিয়েছিলেন। কারো কারো জন্য মিনারেল ওয়াটারেরও ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন।

আজকে যারা ষড়যন্ত্র করছেন, নমিনেশন বাণিজ্য ও পদ পদবী বাণিজ্য করবেন তাদের সেই স্বপ্ন পূরণ হবে না। আমরা আগে আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের নেতৃত্ব ঐক্যবদ্ধ ছিলাম, ইনশাআল্লাহ আগামীতেও থাকবো। কোনো ষড়যন্ত্রই সফল হয় হবে না।

সৎ মানুষের বাঁধা অনেক। বর্তমান সময়ে অসৎ কাজ অনেক। হাজী ইয়াছিন রাজনীতিতে কষ্টার্জিত টাকা ব্যয় করেছেন দলের প্রয়োজনে৷ উনি অসৎ নয় বিধায় আরেকজন সুবিধা নিতে পারছে না। বাস্তবিক অর্থে, সততার জয়ই হবে শেষ পর্যন্ত। হাজী ইয়াছিনের নেতৃত্বেই জেলা বিএনপি আগামীর স্বপ্ন বুনবে।

সফিউল আলম রায়হান বলেন, কমিটি গঠন করা ও ভেঙ্গে দেওয়া এগুলো সাংগঠনিক রীতিনীতি৷ গত পৌনে ৩ বছরে আমরা অনেকগুলো কেন্দ্রীয় প্রোগ্রাম ও আন্দোলন সংগ্রাম করেছি। হাজী ইয়াছিন ওই সময়ে কতোগুলো দারুণ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যা দলকে শক্তিশালী করেছে। আমাদের এখনো প্রতি ওয়ার্ড ভিত্তিক ৩ হাজার থেকে সাড়ে ৪ হাজার নেতাকর্মী রয়েছে। সবার নাম, নাম্বার সব রয়েছে আমার কাছে।

হাজী ইয়াছিন রাজনীতিতে সময় দিতে গিয়ে এখন নিজের ব্যবসা বাণিজ্যেও সময় দিতে পারেন না। আমরা ওয়ার্ড কমিটি করেছি ভোটের মাধ্যমে। এই প্রক্রিয়ায় দুইটা ইউনিয়ন আমরা শেষ করেছি।

পৌনে ৩ বছরের ১ দিনও আমরা বসে ছিলাম না। ফ্যাসিবাদ সরকারের আন্দোলনে কুমিল্লায় উল্লেখ্যযোগ্য আন্দোলন হয়ে গিয়েছিলো। আন্দোলন সংগ্রামের দিনগুলোতে হাজী ইয়াছিন ঘরে বসে ছিলেন না। আন্দোলন সংগ্রামের সময়ে আমাদের বিরুদ্ধে ৩০০ এর অধিক মামলা হয়েছিলো৷ সেই মামলাগুলো হাজী ইয়াছিন গ্রেফতার হওয়া থেকে শুরু করে জামিন পর্যন্ত কাজ করতেন তার জন্য৷

আজকে যাদেরকে সামনের সারিতে কোর্ট টাই পড়া দেখছি তারা গত ১৬ বছর কোথায় ছিলো৷ তাদের অধিকাংশ শ্যাডো বাহারের লোক ছিলো৷ তারা সবাই বাহারের প্রেতাত্মা ছিলো৷

আমি যখন গ্রেফতার হয়েছিলাম, হাজী ইয়াছিন সার্বক্ষণিক আমার খোঁজ নিয়েছে। আমি মনে করি কমিটি বিলুপ্তির পেছনে গভীর ষড়যন্ত্র করেছে।

হাজী ইয়াছিনের মতো পরিচ্ছন্ন মানুষের কারণে যারা চাঁদাবাজি করতে পারছে তাদের কাজ এটা৷ হাজী ইয়াছিনকে সরাতে পারলে তারা চাঁদাবাজি করতে পারবে তাই তারা এই চক্রান্ত করছে।

হাজী ইয়াছিন না থাকলে গত ১৬ বছরে কুমিল্লায় বিএনপির নাম নিশানাও থাকতো না। আজকে যারা সুন্দর চেহারা নিয়ে নেতৃত্ব নিতে চায়, তারা তো একসময় শ্যাডো বাহারের প্রেতাত্মা ছিলো।

সংগঠনের বাহিরের লোকেরাই বলছে, হাজী ইয়াছিনের মতো লোকের কমিটি ভেঙ্গে দিলো, এটা কিভাবে সম্ভব। হাজী ইয়াছিন যেভাবে জনগণের আস্থা অর্জন করছিলো, গত ১৬ বছরে এমন কেউ ছিলো না। আমরা বছরে দুইমাসও ঘরে ঘুমাতে পারতাম না৷ কিন্তু এখন অনেকেই দলের সামনে আসছে, যারা ১৬ বছর বাহারের লোক ছিলো, এখন আবার আসছে বিএনপি করতে।

রাজনীতির মধ্যে একটা খেলা আছে। কুমিল্লার বিএনপিকে ধ্বংস করতে চক্রান্তের পর চক্রান্ত হচ্ছে। গত ১৬ বছরের আওয়ামীলীগের দোসররাই এখন আবার বিএনপিতে যোগ দিচ্ছে।

আজকে যারা জেলা কমিটির কর্ণধার হওয়ার স্বপ্ন দেখেন তারা অতীত স্মরণ করেন। নিজের বিবেকের কাছে প্রশ্ন করেন গত ১৬ বছর আপনারা কোথায় ছিলেন। কিভাবে আপনারা এই স্বপ্ন দেখেন।

হাজী ইয়াছিনের মেধা, শ্রম দলকে সুসংগঠিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। হাজী ইয়াছিন বলতেন, আমি সৎ থাকবো, আপনি সৎ থাকবেন আর অন্যকে সৎ থাকতে বলবেন। উনার বিকল্প আমরা আর কাউকে ভাবতে পারি না, পারবোও না। জেলা বিএনপি হাজী ইয়াছিন ছাড়া হবে, এটা কল্পনাও করতে পারি না আমরা।