হাসপাতালে স্বাস্থ্য কর্মকর্তা অবরুদ্ধ, প্রশাসনের উদ্ধার

স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশ: ২ years ago

বরগুনার বেতাগীতে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তাকে অবরুদ্ধ করেন স্থানীয়রা। রোববার দুপুরে হাসপাতালে আসা রোগী ও স্থানীয় জনগণ কর্মকর্তাকে না পেয়ে বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মো. আমানুল্লাহ আল মামুনের বিরুদ্ধে একের পর এক অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। এমন ঘটনায় ওই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মরত চিকিৎসক ও কর্মচারীসহ এলাকার মানুষ ক্ষুব্ধ। পরে রোববার দুপুরে জনগণের পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের দুর্নীতির অভিযোগ তুলে বিক্ষোভ মিছিলে অংশ নেয় কর্তব্যরত চিকিৎসক ও কর্মচারীরা।

আরও জানা যায়, স্বাস্থ্য কর্মকর্তার অভিযোগ তোলায় রোববার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. রবীন্দ্রনাথ সরকারকে হঠাৎ অব্যাহতি দিয়ে জুনিয়র ডাক্তারকে আবাসিক মেডিকেল অফিসার পদে দায়িত্ব দেন অভিযুক্ত কর্মকর্তা।

বিক্ষোভ মিছিলে অংশ নেয়া কর্তব্যরত চিকিৎসক ও কর্মচারীরা জানান, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মাঠ পর্যায়ের কর্মরত একাধিক স্বাস্থ্য মাঠকর্মীদের মোবাইল ফোন জিম্মি করে প্রশিক্ষণের ভাতার অংশ উৎকোচ গ্রহণসহ হাসপাতালের বিভিন্ন খাতের বরাদ্দের অর্থ লোপাট, ঘুষ দুর্নীতি, অশালীন ব্যবহার, স্টাফদের হয়রানি ও চাকরিচ্যুত করার হুমকি দেওয়াসহ নানাভাবে হয়রানি করে আসছেন স্বাস্থ্য কর্মকর্তা আমানুল্লাহ আল মামুন।

এ ঘটনায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আওতায় কর্মজীবী একাধিক মাঠকর্মী স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এর মহাপরিচালক বরাবর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে ডজনখানেক লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। এছাড়াও সব ধরনের বিল, ভাউচারে তাকে ৩৫% থেকে ৫০% টাকা ঘুস হিসেবে না দিলে তিনি স্বাক্ষর বা সই করেন না। এমন অর্ধশতাধিক অভিযোগ তুলে সবাই মিলে বিক্ষোভ মিছিল করেন।

এদিকে বিক্ষুব্ধ জনতাকে সামাল দিতে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনে উপস্থিত হন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মাকসুদুর রহমান ফোরকান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুহৃদ সালেহীন ও বেতাগী থানার অফিসার ইনচার্জ শাহ আলম হাওলাদার, পৌর মেয়র গোলাম কবির এসে বিক্ষুব্ধ জনতাকে নানাভাবে বুঝিয়ে ও তাদের দাবি মানা হবে এবং ওই স্বাস্থ্য কর্মকর্তাকে অপসারণের জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিরা করবেন বলে আশ্বস্ত করে পরিস্থিতি সামাল দেন।

এমন পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্য কর্মকর্তা আমানুল্লাহ আল মামুনকে পুলিশি হেফাজতে তার কোয়াটারে পৌঁছে দেওয়া হয়।

স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিরা সংবাদকর্মীদের সামনে এমন বিক্ষোভের কারণ জানতে চাইলে ওই স্বাস্থ্য কর্মকর্তা বলেন, আমি কোনো ধরনের কথা বলতে বাধ্য নই, আপনার সবাই মিলে যা করতে পারেন করেন, আমার ডজনখানেক সচিব পকেটে আছে।

বেতাগী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সুহৃদ সালেহীন বলেন, একজন কর্মকর্তার এমন কর্মকাণ্ডে আমরা উপজেলা প্রশাসন বিব্রত। স্বাস্থ্য কর্মকর্তার বিরুদ্ধে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় পর্যন্ত লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। তদন্তসাপেক্ষে এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে।

এমন ঘটনায় বেতাগী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মাকসুদুর রহমান ফোরকান বলেন, স্বাস্থ্য কর্মকর্তা আমানুল্লাহ আল মামুনের দুর্নীতির শেষ নেই। যত ধরনের কাজ আছে তাতেই তাকে ২৫% ঘুস দিতে হয়। তার সঙ্গে কথা বলতে বহুবার আমি নিজে ফোন দিয়েছি। তিনি কারো ফোনও রিসিভ করেন না; জনসাধারণের ফোন তো ধরেনই না। তার সব অনিয়মের ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলা হবে।

বরগুনা সিভিল সার্জন ডা. ফজলুল হক যুগান্তরকে বলেন, স্বাস্থ্য কর্মকর্তার বিরুদ্ধে সব অভিযোগের ভিত্তিতে ইতোমধ্যে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। সোমবার তদন্ত কমিটি ওই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে উপস্থিত হবেন। তবে অবরুদ্ধ করার বিষয়টি আমি শুনেছি; এ ব্যাপারে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।