১৫ বছর মালিকের বাসাভাড়া তুলে আত্মসাৎ করেছেন নুরুল ইসলাম

স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশ: ২ years ago

১৯৮১ সাল থেকে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম পত্রিকা দৈনিক আজাদীর সম্পাদক এম এ মালেকের বাসায় কাজ করছেন কর্মচারী নুরুল ইসলাম। গৃহকর্তা এম এ মালেক বিশ্বাস করে বাসার কাজ থেকে নুরুল ইসলামকে বসান অফিসের চেয়ারে, কাজ দেন নিজের প্রতিষ্ঠানের। চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার বাসিন্দা নুরুল ইসলাম গৃহকর্তার বিশ্বাসের মর্যাদা দিলেন সেই বিশ্বাস ভঙ্গ করেই।

১৫ বছর ধরেই গৃহকর্তা এম এ মালেকের মালিকানাধীন একটি ভবনের ভাড়া সংগ্রহ করে কিছু অংশ প্রতি মাসেই আত্মসাৎ করতেন কর্মচারী নুরুল ইসলাম। ব্যাংকে কম টাকা জমা দিতেন। গৃহকর্তা তাকে বিশ্বাস করতেন বলেই কখনো হিসাব নিতেন না। এভাবে প্রায় অর্ধকোটি টাকা আত্মসাৎ করে নিজে জমিজমার মালিক হয়েছেন। ব্যাংকে নিজের নামে করেছেন এফডিআর। কিন্তু বিষয়টি আর গোপন থাকেনি। মঙ্গলবার (১৮ অক্টোবর) রাতে ঘটনাটি গণমাধ্যমে ফাঁস হয়।

চলতি বছরের শুরুতে একটি ভবনের টাকা জমা নিয়ে ব্যাংক হিসাবে গরমিল চোখে পড়ে এম এ মালেকের প্রতিষ্ঠানের হিসাব বিভাগে। ব্যাংক স্টেটমেন্ট পর্যালোচনা করে লাখ লাখ টাকা গরমিল পায় হিসাব বিভাগ। অবশেষে গত ৫ অক্টোবর আজাদী সম্পাদকের পক্ষে দৈনিক আজাদীর এইচআর অ্যান্ড লজিস্টিকস অফিসার সরোয়ার জাহান কোতোয়ালি থানায় নুরুল ইসলামের বিরুদ্ধে মামলা করেন। মামলায় এরই মধ্যে নুরুল ইসলামকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জাহিদুল কবির ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, মালিকের বিশ্বাসের সুযোগ নিয়ে এ ধরনের অপরাধীরা নিজের আখের গোছাতে গিয়ে মালিককে একপর্যায়ে সর্বস্বান্ত করেন। আমরা অভিযোগ পেয়ে তাকে গ্রেফতার করেছি। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আসামি স্বীকার করেছেন যে তিনি মোট ৪৮ লাখ ১৭ হাজার ৬৬০ টাকা আত্মসাৎ করেছেন।

মামলার বাদী সরোয়ার জাহান অভিযোগ করেন, দৈনিক আজাদী সম্পাদক ও প্রকাশক এম এ মালেকের একটি ভবনের কেয়ারটেকার মো. আসাদুজ্জামান ভাড়াটিয়াদের থেকে প্রতিমাসে ভাড়া সংগ্রহ করে নুরুল ইসলামের হাতে দিতেন। নুরুল ইসলামের দায়িত্ব ছিল ইউসিবি, আন্দরকিল্লা শাখায় সংশ্লিষ্ট অ্যাকাউন্টে এবং পরে ব্র্যাক ব্যাংক, মোমিন রোড শাখায় প্রতি মাসে টাকা জমা দেওয়ার।

সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের শুরুতে হিসাবে গরমিল পরিলক্ষিত হলে মালিকের নির্দেশে বাদী সরোয়ার জাহান, দৈনিক আজাদী পত্রিকা অফিসের ম্যানেজার সাখাওয়াত হোসেন এবং সিনিয়র অ্যাকাউন্টস অফিসার মো. ইমরান হোসেন দুই ব্যাংকের হিসাব যাচাই-বাছাই করে দেখেন- নুরুল ইসলাম ২০০৬ সালের ডিসেম্বর মাসে ভবনটির কেয়ারটেকার আসাদুজ্জামানের থেকে ১,৪৯,৭০৬ টাকা গ্রহণ করেছেন, কিন্তু ইউসিবিতে জমা করেছেন ১,২৯,৭০৬ টাকা। ওই বছর তিনি ২০ হাজার টাকা আত্মসাৎ করেছেন।

একইভাবে ২০০৭ সালের জানুয়ারি মাসে ১৩,৪০০ টাকা, ২০০৬-০৭ অর্থবছরে ৩৫,৮০০ টাকা, ২০০৭-০৮ অর্থবছরে ১,৬৫,১২৮ টাকা, ২০০৮-০৯ অর্থবছরে ২,৮৫,৮৭৬ টাকা, ২০০৯-১০ অর্থবছরে ২,৯৪,৫৫০ টাকা, ২০১০-১১ অর্থবছরে ৪,৩৮,৯৩১ টাকা, ২০১১-১২ অর্থবছরে ৩,৬৯,৪৬০ টাকা, ২০১২-১৩ অর্থবছরে ৩,৬০,০০০ টাকা, ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ২,৩২,৫৪০ টাকা, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ২,৩৯,৯০০ টাকা, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৪,৭৭,২০০ টাকা, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৩,৫১,৭৫০ টাকা, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৩,৪৯,২৫০ টাকা, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৪,২৭,০০০ টাকা, ২০১৯ ২০ অর্থবছরে ৩,৩৯,৮০০ টাকা, ২০২০-২১ অর্থবছরে ২,৫২,৭০০ টাকা, ২০২১-২২ অর্থবছরে ১,৯৭,৭৭৫ টাকাসহ মোট ৪৮ লাখ ১৭ হাজার ৬৬০ টাকা আত্মসাৎ করেন।

এরপর হিসাব বিভাগ থেকে মালিকপক্ষকে জানানো হলে দৈনিক আজাদী সম্পাদক এম এ মালেক আসামি নুরুল ইসলামকে ব্যাংক স্টেটমেন্ট প্রদর্শন করে হিসাবের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি আত্মসাতের বিষয়টি স্বীকার করেন। পরে গ্রেফতারের পর থানা পুলিশের কাছেও একই বিবৃতি দিয়েছেন নুরুল ইসলাম।