২২ হাজার টাকার চেকে ৮ লাখ লিখে প্রতারণা ওভারাইটিং করা চেক গ্রাহককে না জানিয়ে চেক ডিজঅনার

#ভয়ে নিজে সম্পদ বিক্রি করে টাকা পরিশোধ
মোস্তাফিজুর রহমান ।।
প্রকাশ: ৩ সপ্তাহ আগে

কুমিল্লা বুড়িচং উপজেলার ময়নামতি ফরিজপুরে ২২ হাজার টাকার চেকে ৮ লাখ ২২ হাজার লিখে চেক জালিয়তি করেছে জাহেদুল ইসলাম নামের এক প্রতারক। ২২ হাজার টাকার চেকে সামনে দিয়ে ৮ লাগিয়ে করা হয় ৮ লাখ ২২ হাজার টাকা। সেই ওভারাইটিং করা চেক গ্রাহককে না জানিয়ে চেক ডিজঅনার করেন সাউদ বাংলা এগ্রিকালচার ব্যাংক ময়নামতি শাখা।
গতকাল ২৯ এপ্রিল সোমবার সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, ঘটনাটি ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর মাসের। আলেকারচর বিশ্বরোডে অবস্থিত মেসার্স আল জুবায়েদ এন্টারপ্রাইজের প্রোপাইটর মো. জাহিদুল ইসলামের কাছ থেকে সব সময় ওয়ার্কশপের মালামাল বাকি এবং নগদে ক্রয় করেন মো. জাকির হোসেন। টাকা বকেয়া থাকায় জাহিদুল ইসলামকে ২২ হাজার টাকা চেক দেন। সেই চেকে ২২ হাজারের আগে ৮ লাগিয়ে ৮ লাখ ২২ হাজার বানিয়ে ক্যান্টমেন্ট পূবালী ব্যাংকে চেক জমা দেন। সেই চেক পূবালী ব্যাংকের মাধ্যমে সাউদ বাংলা এগ্রিকালচার ব্যাংকে যায়। ব্যাংক কর্মকর্তা কোন প্রকার যাচাই-বাছাই ছাড়া গ্রাহককে না জানিয়ে চেক ডিজঅনার করে দেন।
এবিষয়ে ভুক্তভোগী মো. জাকির হোসেন বলেন, আমি ২২ বছর অন্যের দোকানে কাজ করেছি। পরে সবাই মিলে আমাকে এ দোকানটি ঠিক করে দেয়। আমি সব সময় জাহেদুল ইসলামের কাছ থেকে নগদ এবং বাকিতে মালামাল আনতাম। ২০২০ সালে তার কাছ থেকে ৯৭ হাজার টাকা মাল আনি। সে আমার কাছে ৩৭ হাজার টাকা পাইতো। আমি তাকে ২২ হাজার টাকার একটি চেক দেই। চেকের মধ্যে শুধু অংকে লেখি ২২হাজার, কথায় লেখা হয় নাই। সে ২২ হাজারের সামনে দিয়ে ৮ লাগিয়ে ৮লাখ ২২ হাজার টাকার চেক জমা দেয়। তার এ জালিয়াতিতে সাউদ বাংলা এগ্রিকালচার ব্যাংক ময়নামতি শাখা চেক ডিজঅনার করে দেয়। তারা কি চেকটা চোখেও দেখে নাই যে এটা ২২ হাজাকে ৮ লাখ ২২হাজার বানিয়েছে। এত লাখ টাকার চেক তার ওপরে আবার ওভারাইটিং তারপরেও তারা আমাকে একটি ফোনও দেয়নি। এটা সম্পন্ন ব্যাংক কর্মকর্তার গাফলতি। জাহেদুল আমার কাগজপত্র আটকিয়ে বিভিন্ন ভাবে ভয় দেখায়। আমি ভয়ে নিজের ক্রয়কৃত সম্পদ বিক্রি করে জাহেদুলকে টাকা পরিশোধ করি। সে আমার টাকা দেবো, দিয়ে দিচ্ছি বলতেছে কিন্তু দিচ্ছেনা। আমি এ ঘটনায় একেবারে নিঃস্ব হয়ে গেছি। আমি তার বিরুদ্ধে মামলা করেছি। আমি পরিবার পরিজন নিয়ে আর পারতেছিনা। সে যে আমার টাকা দিয়ে দেবে সেটার স্বাক্ষী আছে অনেকে।
সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা মো হোসেন সরকার বলেন, জাকিরের দোকানে বসে সিদ্ধান্ত হয়েছিলো ৪ লাখ টাকা জাকিরকে জাহেদুল দেওয়ার জন্য কিন্তু জাহেদুল ২লাখ টাকা দেবে বলছে কিন্তু আজকের দিন পর্যন্ত জাকিরকে কোন টাকাই দেয় নাই।
জাকির হোসেনের প্রাক্তন মহাজন মো. আজাদ হোসেন ভূইয়া বলেন জাহেদুল আমার দোকানে আসে এখানে সামাজিক ভাবে আমরা বসি। তাকে আমি বলে দিছি জাকিরকে যেন সে ৫ লাখ টাকা দিয়ে দেয়। কিন্তু সে ৩লাখ টাকা দিতে রাজি হয়। পরে ৪ লাখ টাকায় রাজি হয়ে জাহেদুল আর যোগাযোগ করে নাই। টাকাও দেয় নাই।
অভিযুক্ত মো. জাহিদুল ইসলাম বলেন, সে যা বলেছে সব মিথ্যা। আমি তার কাছে টাকা পাই সে আমার পাওনা টাকার চেক দিয়েছে। এখন সে খুব বাড়াবাড়ি করছে। আমি দুই একদিনে মধ্যে তার বিরুদ্ধে মামলা করবো।
সাউদ বাংলা এগ্রিকালচার ব্যাংকের ম্যানজার ফারুক আহমেদ বলেন, ঐ সময় আমি ছিলাম না। তবে ব্যাংক থেকে তাকে অবশ্যই ফোন করা হয়েছে। চেকটা যদি সরাসরি আমাদের কাছে আসতো তাহলে এমন হতো না। চেকটা এম আই সি আর চেক এটা আসছে পূবালী ব্যাংকের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংক হয়ে। আমরা চেক দেখে রিপোর্ট দিয়েছি ব্যালেন্স নাই।