ঈদের আগে লাম্পি স্কিন রোগের সংক্রমণ, দিশেহারা কৃষক

স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশ: ১০ মাস আগে

সিরাজগঞ্জে গবাদি পশুর শরীরে দেখা দিয়েছে ‘লাম্পি স্কিন’ (এলএসডি) রোগ। রোগটির সুনির্দিষ্ট কোনো প্রতিষেধক না থাকায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন কৃষক ও গৃহস্থরা। কোরবানির ঈদের আগে এমন ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ায় খামারিদের কপালে পড়েছে দুশ্চিন্তায় ভাঁজ।

খামারিদের অভিযোগ, রোগটি ব্যাপক আকার ধারণ করলেও মাঠে দেখা যাচ্ছে না প্রাণিসম্পদ বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের। ফলে গ্রামের কিছু হাতুড়ে পশু ডাক্তার দিয়ে চলছে চিকিৎসা সেবা। এতে গরু সুস্থ না হয়ে আরও অসুস্থ হয়ে পড়ছে।

স্থানীয় চিকিৎসকরা বলছেন, বিরূপ আবহাওয়ার কারণে এ বছর বর্ষা মৌসুমের আগেই লাম্পি স্কিনের সংক্রমণ দেখা দিয়েছে। তবে তা বিক্ষিপ্তভাবে ছড়াচ্ছে।

মঙ্গলবার (২০ জুন) দুপুরে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তাড়াশ ও রায়গঞ্জ উপজেলায় প্রায় এক হাজারেরও বেশি গরু এ রোগে আক্রান্ত হয়েছে। যদিও এ রোগ ছড়ানোর খবর জানে না প্রাণিসম্পদ বিভাগ। সরকারিভাবে এ বিভাগ থেকে আক্রান্ত গরুকে ভ্যাকসিন ও পরামর্শ দেওয়ার কথা থাকলেও তারা কেউ মাঠে আসেননি বলে দাবি কৃষক ও গৃহস্থদের।

এদিকে এ দুই উপজেলার অনেক খামারি ও কৃষক ‘লাম্পি স্কিন’ রোগে আক্রান্ত গরু বাধ্য হয়ে খুবই কম দামে স্থানীয় কসাইদের কাছে বিক্রি করছেন। প্রতিনিয়ত এ সংক্রমণ বেড়েই চলেছে।
তাড়াশ উপজেলার তালম ও বারুহাস ইউনিয়নের অধিকাংশ বাড়িতেই এ রোগ দেখা দিয়েছে। ছড়িয়ে পড়ছে গ্রামের পর গ্রাম। গরু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বগতির এ পরিস্থিতিতে আক্রান্ত গরুর চিকিৎসা চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন মালিকরা।

তালম পদ্মাপাড়া গ্রামের কৃষক জয়নাল শেখ জানান, তার চারটা গরুর মধ্যে একটি বড় গরুর গলার নিচে ফুলে সারা গায়ে ফোসকা বের হয়েছে। গরুটির অবস্থা খুবই খারাপ। শরীর পচে গর্ত হয়ে যাচ্ছে। সাড়ে ৫ হাজার টাকা খরচ করেও সুস্থ হয়নি গরুটি।

তাড়াশ উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর ও ভেটেরিনারি হাসপাতালে গেলে দেখা হয় তালম পদ্মাপাড়া গ্রামের সামাদ আলীর সঙ্গে।

তিনি বলেন, পশু হাসপাতালে এসেও ঘুরে যাচ্ছি ডাক্তার পাচ্ছি না বলে। এই হাসপাতালে এসে কখনো কাউকে পাওয়া যায় না। এখানে নাকি কোনো ডাক্তার নেই। এ অবস্থায় গরু নিয়ে বিপাকে পড়েছি।

তিনি আরও বলেন, তালমশাহী পাড়ায় দুই দিনে প্রায় প্রতি বাড়ির গরু ‘লাম্পি স্কিন’ রোগে আক্রান্ত হয়েছে।

রায়গঞ্জ উপজেলার চকনূর গ্রামের জামাত আলী, আবু সাইদ ও মংলা শেখ জানান, তাদের প্রত্যেকের একটি করে গরু এ রোগে আক্রান্ত হয়েছে। এছাড়া এ গ্রামের সিংহভাগ বাড়িতে এ ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়েছে।

শুধু তাড়াশ ও রায়গঞ্জ নয়, জেলার প্রত্যেক উপজেলায় দেখা দিয়েছে ‘লাম্পি স্কিন’ রোগ। খামারিদের অভিযোগ, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের লোকজনকে খবর দিয়েও পাওয়া যায় না। বাধ্য হয়ে গ্রামের হাতুড়ে চিকিৎসকের কাছে যেতে হচ্ছে।

তাড়াশ উপজেলার পল্লী চিকিৎসক আব্দুল মান্নান বলেন, গত এক সপ্তাহ যাবত লাম্পি স্কিন রোগের সংক্রমণ দেখা দিয়েছে। প্রতিদিনই কয়েকটি করে এমন রোগে আক্রান্ত গরু দেখছি। তবে এর সুনির্দিষ্ট কোনো চিকিৎসা নেই। লক্ষণ দেখে আক্রান্ত পশুকে পেনিসিলিন, এন্টি হিস্টামিন এবং জ্বর হলে প্যারাসিটামল দিলে কিছুটা উপকার পাওয়া যায়।

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. গৌরাঙ্গ কুমার তালুকদার বলেন, এ পর্যন্ত লাম্পি স্কিন রোগে কোনো গরু আক্রান্ত হয়েছে কিনা জানা নেই। তবে ওইসব এলাকায় খোঁজ নেওয়া হবে। আর এ রোগে আক্রান্ত হলে প্রথমেই অসুস্থ গরুটিকে আলাদা করতে হবে। মশারি টাঙিয়ে রাখতে হবে, যাতে মশা বা মাছি গরুর শরীরে না বসে। কেননা মশা বা মাছি অসুস্থ গরুটিকে কামড় দিয়ে যদি সুস্থ কোনো গরুকে কামড়ায় তাহলে সেটিও অসুস্থ হয়ে পড়বে। এ রোগের ফলে মূলত গরু খুবই অসুস্থ হয়ে পড়ে। গায়ে গুটি গুটি ফোড়ার মতো হয়ে পেকে পুঁজ বের হয়। একটি গরু সুস্থ হতে প্রায় দুই মাস সময় লাগে।

এ ভাইরাস নিয়ন্ত্রণে প্রত্যেক উপজেলায় ভ্যাকসিনেশন কার্যক্রম চলমান আছে বলে দাবি করেন এ কর্মকর্তা।