সূত্রমতে, গত ২৮ সেপ্টেম্বর থেকে জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে যৌথ কর্মিসভা শুরু করেছে বিএনপির তিন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন। চট্টগ্রাম, সিলেট ও বরিশালে দশ দিন করে সভা করে যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদল। পর্যায়ক্রমে অন্য জেলা ও বিভাগে এই কার্যক্রম চালাবে সংগঠনগুলো। যৌথ কর্মিসভার পাশাপাশি জেলা ও বিভাগের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যাচ্ছেন ছাত্রদলের শীর্ষ ও কেন্দ্রীয় নেতারা। ছাত্র রাজনীতি ও শিক্ষার্থীদের অধিকার নিয়ে কথা বলছেন তারা। চান শিক্ষার্থীদের মতামতের ভিত্তিতে ক্যাম্পাসে সুস্থ ধারার ছাত্র রাজনীতির প্রসার। এছাড়া একুশ শতকের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ছাত্র রাজনীতির গুণগত পরিবর্তনের লক্ষ্যে ‘মডেল ছাত্র রাজনীতি’তে মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের অংশীদারত্ব রাখার কথাও বলছে সংগঠনটি। এজন্য মাদ্রাসা পর্যায়ে ছাত্রদলের রাজনীতি নিয়ে ভাবছেন সংগঠনের শীর্ষ নেতারা। বর্তমানে সারা দেশের ৩টি মাদ্রাসায় ছাত্র রাজনীতি চলমান রয়েছে। একই সঙ্গে স্কুল পর্যায়ে ছাত্র রাজনীতি না থাকলেও ছাত্রদের অধিকার নিয়ে কাজ করবেন নেতারা।
জানা যায়, ভবিষ্যৎ রাজনীতি ও নেতৃত্ব তৈরি করতে ১৯৭৯ সালে ছাত্রদল প্রতিষ্ঠা করেন সাবেক রাষ্ট্রপতি ও বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান। তখনকার সময়ে জিয়াউর রহমানের জনপ্রিয়তায় তরুণ সমাজ অনুপ্রাণিত হয়ে ছাত্রদলে যোগ দেন। শিক্ষা, ঐক্য, প্রগতি এই স্লোগানে দ্রুত সময়ে সারা দেশে ছাত্রদলের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড ছড়িয়ে পড়ে। বর্তমানে যারা সুনাম ও দক্ষতার সঙ্গে বিএনপির রাজনীতিতে যুক্ত আছেন, তাদের অনেকেই ছাত্রদলের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তবে বিভিন্ন সময়ে সরকারে পালাবদল ও পরিবর্তিত পরিস্থিতির কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্র রাজনীতি সাংগঠনিক সক্ষমতা হ্রাস পায়। এতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের অনেকেই রাজনীতিবিমুখ হয়ে পড়েন। এমন পরিস্থিতিতে ছাত্র রাজনীতিতে শিক্ষার্থীদের আস্থা ফেরাতে মাঠে নেমেছে ছাত্রদল।
ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় নেতারা বলেন, ‘বেকারত্ব’ ছাত্রদের জন্য সবচেয়ে বড় সমস্যা। বেকারত্ব দূর করতে উদ্যোগ নিতে আমরা সরকারের ওপর চাপ প্রয়োগ করব। যেখানে কর্মমুখী শিক্ষাপদ্ধতি প্রণয়ন বিষয়ে পলিসি ডিসকাশন থাকবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা-কার্যক্রম কীভাবে আরও উন্নত এবং আন্তর্জাতিক মানে হতে পারে তার জন্য ছাত্রদল বিভিন্ন বিশেষজ্ঞদের নিয়ে আলোচনা করে সুপারিশ তুলে ধরবে। ইতোমধ্যে এসব বিষয় নিয়ে কাজ করতে একটি রিসার্চ সেল গঠন করছে ছাত্রদল। প্রাথমিক প্রস্তুতি হিসাবে কাজ করছেন তারা। এছাড়া বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে সিরিজ বৈঠক করবে কেন্দ্রীয় নেতারা।
ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব যুগান্তরকে বলেন, ছাত্র রাজনীতির সংস্কার শুরু হয়েছে। সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিয়ে আমরা এই সংস্কার কাজ করব। ছাত্রলীগ আগে দেশের সব শিক্ষাঙ্গনে সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম ও ছাত্র রাজনীতিকে কলঙ্কিত করেছে। র্যাগিং ও হল দখলের নামে সাধারণ শিক্ষার্থীদের পিটিয়ে মেরেছে, নির্যাতন করেছে। আমরা সেই রাজনীতি আর চাই না। গতানুগতিক রাজনীতি থেকে বের হয়ে নতুন ধারার রাজনীতি চালু করতে চাচ্ছি। শিক্ষাঙ্গনে সুস্থধারার ছাত্র রাজনীতি আমাদের লক্ষ্য। হল দখল কিংবা র্যাগিং বন্ধে ছাত্রদল সচেতনতা তৈরি করতে সারা দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যাচ্ছে। ক্যাম্পাসে নিরাপদ পরিবেশ বজায় রাখতে সাধারণ ছাত্রদের মতামতকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। এখনো তারা ছাত্র সংগঠনের মাঝে বিভেদ সৃষ্টি করে আমাদের মাঝে অবিশ্বাস সৃষ্টি করার পাঁয়তারা করছে। শান্তিকামী ছাত্র সংগঠনগুলোর মাঝে ছাত্রলীগের এজেন্ট ঢুকিয়ে শিক্ষাঙ্গনকে অস্থির করতে চাচ্ছে। ছাত্রদল তা হতে দেবে না। এখন যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের যৌথ কর্মিসভা চলমান রয়েছে। এটা শেষ হলে শিগগিরই ‘নতুন ধারার’ ছাত্র রাজনীতির রোডম্যাপ নিয়ে কাজ শুরু করব।
ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছির যুগান্তরকে বলেন, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে দখলদারিত্বভিত্তিক গতানুগতিক ছাত্র রাজনীতির অবসান হয়েছে। শিক্ষার্থীদের স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে একুশ শতকের উপযোগী একটি মেধাভিত্তিক ছাত্র রাজনীতি বিনির্মাণ করার জন্য আমরা দেশের সাধারণ শিক্ষার্থীদের ছাত্রদলের রাজনীতির অংশীদার করতে চাই। যাতে নতুন প্রজন্মের শিক্ষার্থীরা পড়াশোনার পাশাপাশি সুষ্ঠু রাজনীতিচর্চার মধ্য দিয়ে আগামী দিনে পূর্ণাঙ্গ নাগরিকে পরিণত হতে পারেন, দেশপ্রেমিক হয়ে উঠতে পারেন। আমাদের বিশ্বাস, এর ফলে সমৃদ্ধ ভবিষ্যতের দিকে বাংলাদেশের যাত্রা বেগবান হবে।
তিনি বলেন, ক্যাম্পাসে কোনো দখলদারিত্ব, শোডাউন হচ্ছে না। ছাত্রদলের কর্মী হওয়ার কারণে শিক্ষার্থীরা হলে সিট পাচ্ছে না। কিন্তু ছাত্রলীগের নেতারা হলে থাকছে, আমরা পুরো বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বিবেচনার ওপর ছেড়ে দিয়েছি। শৃঙ্খলাভঙ্গের ব্যাপারে ছাত্রদলের পক্ষ থেকে জিরো টলারেন্স পলিসির কঠোর বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। ক্যাম্পাসে একাডেমিক পরিবেশ বজায় রাখতে প্রশাসন ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের সহযোগিতা করছে ছাত্রদল। যারা ছাত্রলীগের হাতে নির্যাতিত হয়েছে তাদের আইনি সহায়তা দেওয়ার জন্য পৃথক সেল গঠন করা হয়েছে। যুগান্তর