কুমিল্লায় শেখ মুজিবের ম্যুরাল গুঁড়িয়ে দিয়েছে ছাত্র-জনতা

বাহারের বাড়ি ও আওয়ামী লীগ অফিস ভাঙচুর
শামছুল আলম রাজন।।
প্রকাশ: ১ মাস আগে

কুমিল্লা আদালত ও সিটি পার্কে স্থাপিত শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল ভেঙে গুড়িয়ে দিয়েছে ছাত্র-জনতা। শেখ হাসিনার ভাষণের প্রতিবাদে সারাদেশে বুলডোজার কর্মসূচি পালনের অংশ হিসেবে ম্যুরালগুলো ভেঙে দেওয়া হয়।

বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে কুমিল্লা জেলা ও দায়রা জজ আদালতে বুলডোজার সহ মিছিল নিয়ে প্রবেশ করেন ছাত্র-জনতা। এসময় বুলডোজার দিয়ে আদালতের সাইনবোর্ড লাগোয়া শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। ম্যুরাল ভাঙার সময় ছাত্র-জনতা বিভিন্ন স্লোগানের উল্লাসে মেতে ওঠেন। ম্যুরাল ভাঙার দৃশ্য আদালতে আইনজীবীসহ উৎসুক জনতা মোবাইল ফোনে দৃশ্য ধারণ করতে দেখা গেছে।

ম্যুরাল গুঁড়িয়ে দেওয়ার পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কুমিল্লা মহানগরের আহ্বায়ক আবু রায়হান সাংবাদিকদের বলেন, আমরা স্পষ্ট বলে দিতে চাই, এই কুমিল্লা থেকে স্বৈরাচার হাসিনা ও তার বাবা শেখ মুজিবের চিহ্ন মুছে ফেলা হবে। ভারতে বসে পতিত স্বৈরাচার দেশ নিয়ে ষড়যন্ত্রে মেতেছে। আমরা ছাত্রসমাজ সবসময় প্রস্তুত আছি। আমরা শুনতে পেয়েছি- এই কোর্টে অনেক আইনজীবী আওয়ামী লীগের জন্য লড়তে আসা শুরু করেছেন। তাদের স্পষ্ট বলে দিতে চাই – এই দুঃসাহস করবেন না। আপনাদের পিঠের চামড়া থাকবে না।

আদালতে ম্যুরাল ভাঙার পর বুলডোজার নিয়ে যাওয়া হয় কুমিল্লা সিটি পার্কে। পার্কের পূর্ব দক্ষিণ কোনায় স্থাপিত শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। এসময় শত শত ছাত্র-জনতা  স্লোগানে ও উল্লাসে মেতে ওঠে।

এরআগে বৃহস্পতিবার সকালে কুমিল্লা মহানগর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক আবু রায়হান তার ফেসবুক পোস্টে আদালত চত্বরের ম্যুরাল ভাঙার ঘোষণা দেন।

এদিকে বুধবার রাত ৯টা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত কুমিল্লা নগরীতে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা রাস্তায় ছিলেন। শেখ হাসিনার ভাষণের প্রতিবাদ কর্মসূচির শুরুতে তারা নগরীর কান্দিরপাড় এলাকায় বিক্ষোভ সমাবেশ করে। পরে তারা মহানগর আওয়ামী লীগের অফিসের সামনে সমবেত হয়ে অফিসে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। সেখানে সাবেক এমপি বাহারের নামে থাকা একটি ভিত্তি প্রস্তর ভেঙ্গে ফেলা হয়।

একটি ভিডিওতে দেখা যায়, গভীর রাতে নগরীর মুন্সেফবাড়ি এলাকায় অবস্থিত বাহারের বাড়ির সামনে তার ব্যক্তিগত অফিসে গেট ও জানালার গ্রিল ভাঙার চেষ্টা করেন বিক্ষুব্ধ ছাত্র জনতা। এ সময় অনেকে বাড়িতে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন। একপর্যায়ে বাড়িটিতে বাহির থেকে ভাঙচুর চালান। পরে বাহারের বাড়ির সামনে ব্যক্তিগত অফিসের সামনে আগুন জ্বলতে দেখা যায়। এছাড়াও রাত ১০টার দিকে মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও আদর্শ সদর উপজেলা সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান আহমেদ নিয়াজ পাভেলের শাসনগাছা এলাকার ব্যক্তিগত অফিস, দোকান ও লেবার শেডে হামলা হয়েছে। এ সময় রাস্তায় আগুন দেওয়া হয়।

বৃহস্পতিবার সকালে অজ্ঞাত স্থান থেকে পাভেল হোয়াটসঅ্যাপে জানান, তার প্রতিষ্ঠানগুলোতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরা হামলা করেনি। যারা হামলা করেছে সকলে এলাকায় বিএনপি ও ছাত্রদলের নেতাকর্মী হিসেবে পরিচিত।

স্থানীয়রা বলেন, গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের দিন মহানগর আওয়ামী লীগের অফিস ও বাহারের বাড়িতে হামলা ভাংচুর, আগুন ও লুটের ঘটনা ঘটে। ওই দিন লুট হওয়া বাহারের লাইসেন্স করা অস্ত্র এখনও উদ্ধার হয়নি।

বর্তমানে সাবেক এমপি বাহার ও তার মেয়ে কুমিল্লা সিটির মেয়র ডা. তাহসিন বাহার সূচনা ভারতে অবস্থান করছেন। তাদের বিরুদ্ধে কুমিল্লার কোতয়ালী, সদর দক্ষিণ, ডিএমপি ও সিএমপির বিভিন্ন থানায় দায়ের হয়েছে ডজনখানেক মামলা।

কোতয়ালী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মহিনুল ইসলাম বৃহস্পতিবার বলেন, খবর পেয়ে রাতেই পুলিশ ঘটনাস্থলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। আওয়ামী লীগ অফিস ও সাবেক এমপি বাহাউদ্দিনের বাড়িতে বাহির থেকে হামলা ইটপাটকেল নিক্ষেপ করা হলেও ভেতরে কেউ প্রবেশ করেনি।