কুমেক হাসপাতালের জরুরি বিভাগ. ক্লিনিক ও প্যাথলজি দালালদের দখলে

সোহাইবুল ইসলাম সোহাগ ।।
প্রকাশ: ২ মাস আগে

#মৃত লাশকেও ছাড় দেয়া হয়না -রোগীদের দাবি
#জরুরি বিভাগকে যারা কলঙ্কিত করতে চায় তাদের বিরুদ্ধে
ব্যবস্থা নেয়া হবে-পরিচালক

কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে বিভিন্ন ক্লিনিক-প্যাথলজির দালালদের অত্যাচারে রোগীরা অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন। কর্তব্যরত চিকিৎসকদের বিশেষ সুবিধা দিয়ে প্রতিদিন দালালরা হাসপাতালের বিভিন্ন শাখায় ঘুরে বেড়াচ্ছে। হাসপাতালের ডাক্তাররা রোগীদের পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরামর্শ দিলে অপেক্ষমাণ দালালরা তাদের নিজের ক্লিনিক, প্যাথলজিতে নিয়ে যাওয়ার জন্য টানাটানি শুরু করে দেয়।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, বৃহত্তর কুমিল্লায় দুর্ঘটনাকবলিত রোগী ও উপজেলা এলাকার প্রায় ৮ লাখ মানুষের একমাত্র ভরসা কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। এর মধ্যে চৌদ্দগ্রাম, বুড়িচং, বরুড়া, বি-পাড়া, সদর দক্ষিণ, লালমাইসহ উপজেলার প্রায় দু’লক্ষাধিক রোগী এখানে স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে থাকে। এই কুমেক হাসপাতালটিকে ঘিরে গত কয়েক বছরে মেডিকেলের সামনে ও আশপাশে ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে উঠেছে প্রায় দুই ডজন ক্লিনিক-প্যাথলজি। যার বেশির ভাগ ক্লিনিক-প্যাথলজির সঠিক কোনো বৈধ কাগজপত্র নেই। সাধারণ রোগীদের দেয়া পরীক্ষা-নিরীক্ষা প্রতিবেদনে বিভিন্ন চিকিৎসকের ভুয়া নাম ব্যবহার করা হচ্ছে। যেসব চিকিৎসকের স্বাক্ষর ব্যবহার করা হচ্ছে। সেসব চিকিৎসক ক্লিনিক-প্যাথলজিতে আসেন না।
সরেজমিনে দেখা গেছে, হাসপাতালের গেইট থেকে জরুরি বিভাগ পর্যন্ত কয়েকটি স্তরে বিভিন্ন ক্লিনিক-প্যাথলজির নিয়োগকৃত ৪০-৪৫ জন দালাল অবস্থান করছে। জরুরি বিভাগের মধ্যে রয়েছে আরও ১২-১৫ জন। জরুরি বিভাগে সিনিয়র স্টাফ নার্স দুলাল চন্দ্র সুত্রধরের সাথে এসব দালালদের সক্ষতা রয়েছে বলে জানান একাধিক দালাল। তিনি পুলিশ ক্লিয়ারেন্স নথিপত্র পরিচালকের অনুমতি ছাড়াই ওনার কাছে রেখে এসবের বিনিময়ে লাখ লাখ টাকা অবৈধ পন্থায় আয় করে যাচ্ছে। তিনি হাউজিং এস্টেট এলাকায় গড়ে তুলেছেন বিলাশবহুল বাড়ি। আর জরুরি বিভাগের পাশাপাশি বহির্বিভাগের চিকিৎসকের প্রতিটি কক্ষের ভেতরে একজন, কক্ষের সামনে একজন করে দাঁড়িয়ে থাকে। ক্লিনিক-প্যাথলজির মালিকদের আদেশক্রমে দালালরা চিকিৎসকদের খাবার পর্যন্ত সরবরাহ করে থাকে। জরুরি বিভাগে ইসিজি, আরবিএস, এক্স-রে, ইউএসজি, ইলেকট্রোলাইট, এফবিএসসহ প্রয়োজনীয় ল্যাব সুবিধা থাকার নিয়ম। যদিও সেবাপ্রত্যাশীদের অভিযোগ, জরুরি মুহূর্তে চিকিৎসা নিতে গেলে কর্তব্যরতরা বিভিন্ন সংকটের কথা জানান। জরুরি ভিত্তিতে ছোট কোনো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতেও ছোটাছুটি করতে হয় বেসরকারি হাসপাতাল কিংবা ক্লিনিকে।
অবশ্যই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, সকল পরীক্ষা-নিরীক্ষা কুমেক হাসপাতালে আছে। বাহিরে রোগীরা যাবে কেন।
রোগীদের দাবি, দালালরা পরীক্ষা- নিরীক্ষা করে দেয়ার কথা বলে মোটা অংকের টাকা চেয়ে বসে। আর ভালো চিকিৎসার কথা বলে বাহিরে নিয়ে আরেক হাসপাতালে ভর্তি করে বিপদে ফেলে দেয়। তারা মৃত লাশকেও ছাড় দেয়না।
জরুরি বিভাগে সিনিয়র স্টাফ নার্স দুলাল চন্দ্র সূত্রধর বলেন, পরিচালকের নির্দেশক্রমে আমি পুলিশ ক্লিয়ারেন্সের কাজগুলো করছি। দালালদের সাথে আমার সম্পর্ক নেই। আমার জায়গা-বাড়ি গুলো ব্যাংক লোনের মাধ্যমে করেছি।
কুমেক হাসপাতালের পরিচালক ডা. শেখ ফজলে রাব্বি বলেন, জরুরি বিভাগের জন্য আলাদা এক্স-রে, ইউএসজি, ল্যাব সুবিধা নেই। হাসপাতালে এককভাবে এ সুবিধা রয়েছে। যেগুলোয় সাধারণত সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত সেবা যুক্ত করা হয়। বিদ্যমান সুবিধা দিয়ে সর্বোচ্চ সেবা দেয়ার চেষ্টা করছি। হাসপাতালগুলোর কর্তৃপক্ষের এ নিয়ে ইচ্ছার ঘাটতি নেই। আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে জরুরি বিভাগের সেবার চিত্র এখন পাল্টেছে। আর দালাল রীতিমতো ধরা পড়ছে। কয়েকজনকে সাজা দিয়ে জেলে পাঠিয়েছে মেজিস্ট্রেট। যারা জরুরি বিভাগকে কলঙ্কিত করতে চায় তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।