‘আধুনিক পদ্ধতিতে সমলয় চাষাবাদে কমবে খরচ, বাড়বে ফলন’

স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশ: ১ বছর আগে

কুমিল্লার তিন উপজেলার প্রায় ৪০০ একর জমিতে এবার ট্রান্সপ্লান্ট রাইস মেশিনের সাহায্যে আধুনিক পদ্ধতিতে সমলয় চাষাবাদে বোরো ধান রোপণ করা হচ্ছে। বুধবার কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলায় এই পদ্ধতিতে ধান চাষের উদ্বোধন করা হয়। উপজেলার রামপুর গ্রামের কৃষক ওমর ফারুকের জমিতে আধুনিক পদ্ধতিতে মেশিনের মাধ্যমে ধান চাষের উদ্বোধন করা হয়।
এসময় গ্রামের শত শত কৃষক ও উৎসুক জনতা রোপণ পদ্ধতি দেখতে ভিড় করেন। চলতি বোরো মৌসুমে বুড়িচং উপজেলাতে ১৫০ বিঘা জমিতে এ পদ্ধতিতে চাষাবাদ করা হবে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ পদ্ধতিতে চাষাবাদে খরচ কমবে। সাথে ফলন বাড়বে। এছাড়া পরিপক্ব ধান পেতে সময়ও কমে আসবে।
রামপুর গ্রামের কৃষক শাহ আলম ভূঁইয়া জানান, আমি এবার দুই বিঘা জমি আধুনিক পদ্ধতিতে চাষাবাদ করব। দুই বিঘা জমি রোপণে আমার ন্যূনতম আট হাজার টাকা খরচ হতো। এছাড়া কৃষি শ্রমিক পেতে খুব কষ্ট হতো। এ মৌসুমে বিনামূল্যে ধান রোপণ করছি। পরবর্তী মৌসুম থেকে আমার মাত্র দুই হাজার ৪০০ টাকা খরচ হবে। কৃষি শ্রমিক খোঁজার হয়রানিও কমে যাবে।
পাশের এতবারপুর গ্রামের কৃষক ওহিদ মিয়া বলেন, আধুনিক পদ্ধতিতে ধান চাষাবাদ নিয়ে আমাদের মধ্যে ভুল ধারণা ছিল। কিন্তু এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি অফিস থেকে আমাদের প্রশিক্ষণ করানো হয়। প্রশিক্ষণ গ্রহণ করার পর আমাদের ভুল ভেঙে যায়। আমরা সবাই এখন উচ্ছ্বসিত।
রামপুর গ্রামের কৃষক ওমর ফারুক বলেন, আগে ধান রোপণে অনেক পরিশ্রম করতে হতো। আজ দশ মিনিটেই আমার ১৫ শতাংশ জমির ধান রোপণ হয়ে গেছে।
মোহাম্মদ এগ্রিকালচারাল মেশিনারিজের স্বত্বাধিকারী ইমরান হোসেন জানান, প্রতি একর জমিতে ধান রোপণে আমাদের মাত্র আড়াই লিটার ডিজেল খরচ হয়। একর প্রতি আমরা মাত্র সাড়ে তিন হাজার টাকার খরচ নিই। যদি একসাথে বেশি জমিতে রোপণ করি, তাহলে খরচ নিই তিন হাজার টাকা।
বুড়িচং উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা বানিন রায় বলেন, প্রথম চ্যালেঞ্জ ছিল এ এলাকার কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা। আমরা তাদের বোঝাতে সক্ষম হয়েছি। এখন তারা এ পদ্ধতিতে ধান চাষে আগ্রহী। আমরা এই মৌসুমে সবাইকে সুযোগ দিতে পারছি না। এবার প্রণোদনার আওতায় থাকা ১০৯ জন কৃষক এই সুবিধা পাচ্ছেন।
তিনি জানান, জমির মালিকানা হিসাবে কৃষক প্রতি শতাংশ জমির জন্য ৯০০ গ্রাম ইউরিয়া, ৬০০ গ্রাম ডিএপি ও ৫০০ গ্রাম হারে এমওপি সার পাবেন। ইতোমধ্যে ৩০০০ কেজি ডিএপি ও ২৫০০ কেজি এমওপি সার কৃষকদের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে। ৪৫০০ কেজি ইউরিয়া সার প্রথম উপরি প্রয়োগের পূর্বেই আগামী ১০ দিনের মধ্যে বিতরণ করা হবে। রাইস ট্রান্সপ্লান্টারের সাহায্যে ৫০ একর জমি রোপণের উদ্দেশ্যে চার হাজার ৫০০ ট্রেতে চারা উৎপাদন করা হয়েছে। সকল জমি কর্মসূচির অর্থায়নে রোপণ করে দেয়া হবে। মৌসুম শেষে সকল জমি কম্বাইন হারভেস্টারের মাধ্যমে কর্তনের ব্যবস্থা করা হবে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কুমিল্লার উপপরিচালক মিজানুর রহমান বলেন, গত দুই বছর ধরে কুমিল্লার একাধিক উপজেলায় আমরা আধুনিক পদ্ধতিতে ধান চাষাবাদ করছি। এবার কুমিল্লার বুড়িচং, লাকসাম ও সদর দক্ষিণ উপজেলার প্রায় ৪০০ একর জমিতে ট্রান্সপ্লান্ট রাইস মেশিনের মাধ্যমে চাষাবাদ করা হচ্ছে। এ কর্মসূচিটা আমরা ব্যক্তি উদ্যোগে গ্রহণ করি। আধুনিক পদ্ধতিতে ধান চাষের কারণে সময় কমে আসবে। জমিতে তিন ফসলের পরিবর্তে চার ফসল হবে।
এর আগে বুধবার সকালে রামপুর-শোভারামপুর মাঠে ২০২২-২০২৩ রবি মৌসুমে কৃষি প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় বোরো ধানের সমলয়ে চাষাবাদের ব্লক প্রদর্শনীর উদ্বোধন ও কৃষক সমাবেশ উপলক্ষে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন বুড়িচং উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা শাহিদা আক্তার। বিশেষ অতিথি ছিলেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কুমিল্লার উপপরিচালক মিজানুর রহমান ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আখলাক হায়দার। স্বাগত বক্তব্য রাখেন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) বানিন রায়।
বক্তারা বলেন, রাইস ট্রান্সপ্লান্টারের সাহায্যে মাত্র ২৫-৩০ দিনের সঠিক বয়সের চারা রোপণ সম্ভব হয়। ফলে ধানের জীবনকাল ১০-১৫ দিন কমে আসে। তাছাড়া, মেশিনের সাহায্যে রোপণে সঠিক গভীরতায় চারা রোপণ সম্ভব হয়। যার কারণে প্রতি গুছিতে কুশির সংখ্যা বেশি হয়। সর্বোপরি ফলন ১০-১৫ শতাংশ বৃদ্ধি পায়।