উদ্বেগ উৎকন্ঠা ও বিরোধী দলের বর্জনের মধ্যেই ভোট উৎসব আজ

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন
সুফিয়ান রাসেল ।।
প্রকাশ: ৪ মাস আগে

চরম উদ্বেগ ,উৎকন্ঠা, বিরোধী দলের ভোট বর্জন কর্মসূচির হরতালের মধ্যেই সারা দেশের মতো কুমিল্লার ১১টি সংসদীয় আসনেও শুরু হচ্ছে আজ রোববার ভোট উৎসব। কাগজে কলমে সামান্য প্রতিদ্বন্দ্বি থাকায় কুমিল্লার দুই মন্ত্রীর আসনসহ চারটি আসনে ভোটের খুব একটা উত্তেজনা না থাকলেও অপর ৮টি আসনে রয়েছে আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী প্রার্থী। ফলে এই ৮টি আসনে উদ্বেগ ,উৎকন্ঠার সাথে জমে উঠবে ভোট উৎসরও। আজ সকাল ৮টা থেকে কোন রকম বিরতী ছাড়া বিকাল ৪টা পর্যন্ত একটানা চলবে এ ভোট।
জানা যায়, কুমিল্লার ১১টি সংসদীয় আসনের ৯৩ জন প্রার্থী ভোটের মাঠে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
সূত্রে জানা গেছে, কুমিল্লার ১১ আসনে ভোটার সংখ্যা ৪৬ লাখ ৬ হাজার ১৯৬। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ২৩ লাখ ৬৪ হাজার ২৬৪ জন, নারী ভোটার ২২ লাখ ৩৯ হাজার ৯০৬ জন, তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার ২৪ জন।
এসব কেন্দ্রের নিরাপত্তায় ৩২ প্লাটুনে ৬৮২ জন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। র‌্যাব ১৮০ জন ও অতিরিক্ত ৫০ জন মোতায়েন করা হবে। রেললাইনসহ মোট ১৭ হাজার ৫৪০ জন আনসার ব্যাটালিয়ন সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। এছাড়াও চার হাজারের বেশি পুলিশ মাঠে কাজ করছে। ১০৫ টি পেট্রোলিং টিম জেলার গুরুত্বপূর্ণ এলাকা গুলিতে টহলে আছে। এদিকে গত ৩ ডিসেম্বর থেকে সারাদেশের ন্যায় কুমিল্লাতেও সেনাবাহিনীর ৩৩ পদাতিক বাহিনীকে মোতায়েন করা হয়েছে। ২৮ জন এক্সিকিউটিভ ও অতিরিক্ত ২৭ জন এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ করা হয়েছে। জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ দেয়া হয়েছে ২৫ জন।

কুমিল্লা-১ দাউদকান্দি-তিতাস আসনে নৌকার প্রার্থী দলের কেন্দ্রীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক প্রকৌশলী মো. আব্দুস সবুর। এখানে স্বতন্ত্র প্রার্থী ঈগল প্রতীক নিয়ে আছেন কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামলীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার নাঈম হাসান। এখানে রয়েছে জাপা প্রার্থী সাবেক এমপি আমীর হোসেনসহ আরো কয়েকজন। তবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে নৌকা বনাম ঈগলের সাথে।

কুমিল্লা-২ হোমনা-মেঘনা আসনে নৌকার প্রার্থী বর্তমান এমপি সেলিমা আহম্মেদ মেরী। এখানে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে হেভিওয়েট স্বতন্ত্র প্রার্থী হোমনা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অধ্যক্ষ আবদুল মজিদ ও মেঘনা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শফিকুল আলমের সাথে।
কুমিল্লা-৩ মুরাদনগর আসনে নৌকার প্রার্থী বর্তমান এমপি ইউসুফ আবদুল্লাহ হারুন। ইগল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম সরকারের সাথে তার প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে।
কুমিল্লা-৪ দেবিদ্বার আসনে নৌকার প্রার্থী বর্তমান এমপি রাজী মোহাম্মদ ফখরুল। এখানে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে স্বতন্ত্র প্রার্থী (ইগল প্রতীক) সদ্য পদত্যাগী উপজেলা চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদের সাথে।
কুমিল্লা-৫ বুড়িচং-ব্রাহ্মণপাড়া আসনে নৌকার প্রার্থী বর্তমান এমপি আবুল হাশেম খান। এখানে বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত শওকত মাহমুদ, আওয়ামীলীগ থেকে স্বতন্ত্র নির্বাচন করছেন দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন স্বপন, ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা চেয়ারম্যানের পদ থেকে পদত্যাগ করা এম এ জাহেরের সাথে চতুর্থমুখি প্রতিদ্বন্দ্বিতা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
কুমিল্লা-৬ সদর আসনে নৌকার প্রার্থী বর্তমান এমপি মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার। স্বতন্ত্র প্রার্থী ও সংরক্ষিত সাংসদ আঞ্জুম সুলতানা সীমার ঈগলের সাথে এখানে লড়াই হবে।
কুমিল্লা-৭ চান্দিনা আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বর্তমান এমপি প্রাণ গোপাল দত্ত। এখানে স্বতন্ত্র প্রার্থী চান্দিনা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুনতাকিম আশরাফ টিটুর সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে।
কুমিল্লা ৮ বরুড়া আসনে জেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি শফিউদ্দিন শামীম, কুমিল্লা ৯ লাকসাম মনোহরগঞ্জ আসনে স্থানীয় সরকার মন্ত্রী তাজুল ইসলাম ও কুমিল্লা ১০ সদর দক্ষিণ, লালমাই ও নাঙ্গলকোট আসনে অর্থমন্ত্রী লোটাস কামাল রয়েছেন নির্ভার। এখানে কোন শক্তিশালি প্রার্থী না থাকায় তাদের এমপি হওয়া এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র।
অপর দিকে, কুমিল্লা ১১ চৌদ্দগ্রাম আসনে নৌকার ও কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মুজিবুল হক মুজিব এমপির বিজয়ের ব্যাপারে কোন উৎকন্ঠা না থাকলেও দলের বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছে। চৌদ্দগ্রাম পৌরসভার সাবেক মেয়র মিজানুর রহমান এখানে ঈগল প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন।
কুমিল্লা জেলা পুলিশ সুপার আব্দুল মান্নান বলেন, পুলিশ নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে ফেলেছে কুমিল্লাকে। আমাদের সাধারণ পুলিশের পাশাপাশি গোয়েন্দা টিমও থাকবে। মোবাইল ডিউটি, কেন্দ্রভিত্তিক ডিউটি, ডিবি-ডিএসবির ৩০০ এর বেশি গোয়েন্দা, পেট্রোল টিম, স্ট্যান্ডবাই ডিউটিতে পুলিশ নিয়োজিত আছে।
কুমিল্লা জেলা প্রশাসক ও জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা খন্দকার মু. মুশফিকুর রহমান বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচনে বাধা দেওয়ার সুযোগ কারও নেই। মাঠে পর্যাপ্ত ম্যাজিস্ট্রেট, সেনাবাহিনী, র‌্যাব, পুলিশ ও নির্বাচন পর্যবেক্ষক সংস্থা কাজ করছে।