উদ্যোক্তা হতে হলে, ধৈর্য্য, একাগ্রতা ও সততা থাকতে হবে

টক শো ২৩
স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশ: ১১ মাস আগে

 

জাহিদ হাসান নাইম।

“নারী উদ্যোক্তাদের গল্প” বিষয়ক টক শো অনুষ্ঠিত হয়েছে। সোমবার (২২ মে) রাতে দৈনিক আমাদের কুমিল্লা ও জনপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল কুমিল্লার জমিনের যৌথ উদ্যোগে এ টক শো অনুষ্ঠিত হয়। দৈনিক আমাদের কুমিল্লার ব্যবস্থাপনা সম্পাদক শাহাজাদা এমরানের সঞ্চালনায় টক শো তে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন তিনজন নারী উদ্যোক্তা ফৌজিয়া ইয়াসমিন, শামীমা আকতার, আফরোজা সুলতানা।

এসময় টকশো তে তারা নানান প্রতিবন্ধকতা অতিক্রম করে কিভাবে একজন উদ্যোক্তা হয়ে উঠেছেন, সে বিষয়টি উঠে এসেছে।

নারী উদ্যোক্তা ফৌজিয়া ইয়াসমিন বলেন, আমি সর্বপ্রথম কাজ শুরু করি নকশী কাঁথা ও বেডশিট নিয়ে। এক্ষেত্রে আমার স্বামীর অবদান ছিলো অনেক। অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ফেসবুকে একটি পেইজ খুলে আমি সর্বপ্রথম সাড়ে ৫ হাজার টাকা পুঁজি নিয়ে আমি বিজনেস শুরু করি। এখন আমি আলহামদুলিল্লাহ কুমিল্লার স্বনামধন্য একটি মার্কেটে একটা শো রুম পরিচালনা করছি। আমি মনে করি, বিজনেস শুরু করতে অনলাইন বা অফলাইন কোনো ফ্যাক্ট না, মূল হচ্ছে তাকে ধৈর্য্যশীল হতে হবে, ইচ্ছাশক্তি থাকতে হবে। এছাড়াও, পরিবারকেও এগিয়ে আসতে হবে। আর একজন উদ্যোক্তার ধৈর্য্যের পাশাপাশি সততাও থাকতে হবে। নয়তো উদ্যোক্তা হতে পারবে না। ব্যবসার ক্ষেত্রে সবসময় ক্রেতার আস্থা অর্জন করতে হবে। কুমিল্লাতেও গত কয়েকবছর ধরে প্রচুর নারী উদ্যোক্তা বেড়েছে। সবাই খুবই এক্টিভ। এভাবে চলতে থাকলে, কুমিল্লায় নারী উদ্যোক্তারা এগিয়ে যাবে।

নারী উদ্যোক্তা শামীমা আকতার বলেন, আমার স্বপ্ন ছিলো ডাক্তার হওয়া। কিন্তু বিভিন্ন কারণে আর তা হওয়া উঠে নি। পরবর্তীতে আমার হস্তশিল্পে আগ্রহ থাকার কারণে, ২০১২ সালে আমি সর্বপ্রথম ক্রিস্টাল শো-পিচ নিয়ে একটা অনলাইন বিজনেস শুরু করি। কিন্তু, আমার ফ্যামিলি থেকে বিভিন্ন বাঁধা আসলেও আমার মায়ের অনুপ্রেরণায় আমি এগিয়ে যাই। মাঝখানে থেমে গেলেও পরবর্তীতে ২০১৯ সাল থেকে আবারো শুরু করি। প্রথমে এলাকাভিত্তিক থাকলেও এখন আমার পণ্য সারাদেশব্যাপী ছড়িয়ে যাচ্ছে। আমি এখন ব্লক বাটিক ও কেক নিয়েও কাজ করছি। আমার ফ্যামিলিও এখন আমাকে সহযোগীতা করছে। আমার ভাই বোনেরা এখন আমার পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। তবে, একজন উদ্যোক্তা হতে হলে, ধৈর্য্য ও একাগ্রতা থাকতে হবে। নিজেকে দক্ষ করে, সেই দক্ষতাকে ধৈর্য্যের সাথে কাজে লাগিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। আমার এগিয়ে যাওয়ার জন্য, আমি টিকে থাকার জন্য আমি বিজনেস রিলেটেড প্রশিক্ষণগুলো বারবার করেছি। মার্কেটিং সম্পর্কে জানতে হলে অবশ্যই প্রশিক্ষণ খুবই জরুরী। আমাদের দেশে নারীরা আত্মনির্ভরশীল হতে চায়, পরিবারের পাশে দাঁড়াতে চায়। তাই ধীরে ধীরে নারী উদ্যোক্তা বাড়ছে। সরকারী বিভিন্ন প্রশিক্ষণ ও ঋণ নেওয়ার সুবিধাও আমাদের এগিয়ে যাওয়ার পথ অনেক সহজ করে দিয়েছে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে পুরুষরা বাঁধা দিলেও, নারীরাও নারীদের এগিয়ে যাওয়ার পথে বিভিন্ন বাঁধার সৃষ্টি করে। আমি মনে করি, এই পথে আমরা একে অপরের প্রতিবন্ধকতা না হয়ে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। নিজের আত্মবিশ্বাসকে সাথে নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে।

নারী উদ্যোক্তা আফরোজা সুলতানা বলেন, বিভিন্ন পারিবারিক প্রতিবন্ধকতা দূর করতে আমি অনলাইনে বিজনেস সম্পর্কিত বিভিন্ন কোর্স করি। পরবর্তীতে আমি আমার স্বামী ও সন্তানের অনুপ্রেরণায় আজ আমি এত দূর আসতে পেরেছি। আমি সর্বপ্রথম কাজ শুরু করি বিভিন্ন ব্লকের কাজ নিয়ে, সেই থেকে শুরু করে আমি এখন বাসায় ছোট করে একটি দোকানের মতো করে সাজিয়েছি। ধীরে ধীরে বিজনেস বাড়ানোর চেষ্টা করছি। আমার অধীনে এখন ৫/৬ জন লোক কাজ করে। নারী উদ্যোক্তা হতে হলে সবচেয়ে বেশী প্রয়োজন পরিবারের সাপোর্ট। আমার পরিবার আমাকে সাপোর্ট দিয়েছে বলেই, আমি এতদূর আসতে পেরেছি, নয়তো পারতাম না। আমার ভবিষ্যৎ স্বপ্ন হচ্ছে একটি শো-রুম দেওয়া। আমাকে এগিয়ে যেতে আমার ননদ আমাকে সাহায্য করেছে। আমি মনে করি এভাবেই সবার এগিয়ে আসা উচিৎ।