কুমিল্লা জেলার ঐতিহ্যবাহী গরুর হাট গুলোর অন্যতম হচ্ছে চৌয়ারা বাজারের গরুর হাট। সারাদেশেই এই গরু হাটের নাম ডাক রয়েছে। দূরদূরান্ত থেকে মানুষ এখানে গরু-ছাগল কিনতে আসেন । এই হাটটি কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের ইজারাকৃত গরুর হাট। গতকাল শনিবার(২ নভেম্বর) এই গরুর হাটে ক্রেতা বিক্রেতারা এসে বিপাকে পড়েছেন। স্থানীয় প্রভাবশালী মনির নামের এক ব্যক্তি এই গরুর বাজারটি দখলের অপচেষ্টা করলে হাটে আসা ক্রেতা বিক্রেতারা ভয়ে পালিয়ে যান। হাটের ইজারাদার রফিক এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করলেও অভিযুক্ত মনির তা অস্বীকার করেছেন।
হাটের ইজারাদার ও স্থানীয় একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, গতকাল শনিবার সকাল ১১ টায় গলিয়ারা ইউনিয়নের মৃত ইউনুস মিয়ার ছেলে মনির নামের স্থানীয় এক প্রভাবশালীর নেতৃত্বে কিছু লোক এসে হাটটি দখলের উদ্দেশ্যে ক্রেতা ও বিক্রেতাদের হাট থেকে চলে যাওয়ার আল্টিমেটাম দেয়। ফলে হাটে ক্রেতা বিক্রেতাদের মাঝে এক ভীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় এবং এক পর্যায়ে তারা চলে যেতে বাধ্য হয়।
চৌয়ারার এ গরুর বাজারটি কুমিল্লা সিটিকর্পোরেশন থেকে ইজারা আনেন নগরীর উলুরচর এলাকার মৃত আনু মিয়ার ছেলে ও কুমিল্লা নগরীর ২৭ নং ওয়ার্ড বিএনপির সাবেক সভাপতি রফিকুল ইসলাম। তিনি জানান, ইজারায় আনার পর থেকে এ গরুর হাট দখলের ঁপায়তারা করে মনির। সে আমাদের নেতা মনিরুল হক চৌধুরীর নাম ব্যবহার করে এলাকায় নানা অপকর্ম করে আসছে। ৫ আগস্টের পর থেকেই আমাদের কাছে চাঁদা চেয়ে আসছে। চাঁদা না দেওয়াতে আজ(শনিবার) গরু বাজার দখল করতে এসেছে।অথচ, আমরা সারা জীবন বিএনপি করলাম। আজ মনির বিএনপি ও মনিরুল হক চৌধুরী ভাইয়ের নাম বিক্রি করে এই দখলের কাজ করছে।
সজেমিনে গেলে গতকাল শনিবার চট্টগ্রাম থেকে আসা এক ক্রেতা ও ব্যবসায়ী সাইফুল বলেন, ঐতিহ্যবাহী এই বাজার থেকে পশু কেনার জন্য চট্টগ্রাম ও চট্টগ্রামের বাইরে থেকে আমার মত অনেকে আসেন। আজ আমি গাড়ি ও লেবারসহ কয়েকজন আসছিলাম গরু কিনতে কিন্তু কতগুলো লোক এসে বলে গরু কেনা বেচা হবে না। এখান থেকে চলে যাও। না গেলে সব গরু নিয়ে যাওয়া হবে। ভয়ে আমি গরু আর কিনিনি। আজ আমার এত টাকা লস হইছে। কে দিবে এ টাকা?
ফেনী থেকে আসা আরেক ক্রেতা বলেন, এখানে ভালো মানের গরু পাওয়া যায়। তাই অনেক কষ্ট করে গাড়িসহ লোক নিয়ে আসছি। আসার পর এখন যে পরিস্থিতি সব গরু নিয়ে সবাই চলে গেছে।
বিক্রেতা হালিম মিয়া বলেন, গরু নিয়া আসার পর যেভাবে সবাই লাঠিসোটা ও অস্ত্র নিয়ে বাজারে মহরা দিচ্ছে তাতে আমরা সবাই ভয়ে আছি। তারা গরু নিয়ে চলে যেতে বলছে। তাই আমরা গরু নিয়ে বাড়িতে চলে যাচ্ছি। আমার খুব কষ্ট লাগতেছে। গরুটি বিক্রি করতে পারলে আমার উপাকার হতো আজ।
এ বিষয়ে হাটের ইজারাদার রফিকুল ইসলাম আরো বলেন, এত কোটি টাকা দিয়ে সিটি কর্পোরেশন থেকে হাট ইজারা নিলাম। আর এ হাট দখল করতে গলিয়ারার সন্ত্রাসী মনিরের নেতৃত্বে পোলাপান গরুর হাটে এসে আমার টাকার ক্যাস ভেঙে সব টাকা নিয়ে যায়। সিসি ক্যামেরার সকল মেশিন নিয়ে যায়। সকল গরু ক্রেতা ও বিক্রেতাদের হুমকি দিয়ে বলে গেছে চলে যেতে । এরপর সবাই গরু নিয়ে চলে গেছে। এ হাটে আর কোন গরু নাই।
আমি কুসিকের প্রশাসক, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, সেনাবাহিনীসহ সকলের কাছে এ ঘটনার সাথে জড়িত মনিরসহ সকলের গ্রেফতার করে বিচারের দাবি জানাচ্ছি।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত মনির বলেন, আমি কাউকে হামলা করিনি এবং গরুর হাট দখল করিনি। আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা কথা বলা হচ্ছে। আপনারা (সাংবাদিকরা) সরেজমিনে এসে দেখে যান।
কুমিল্লা সদর দক্ষিণ মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ রফিকুল ইসলাম বলেন, আমরা ঘটনার কথা শুনে সাথে সাথে ফোর্স পাঠিয়েছি। ঘটনাস্থলে কাউকে পাওয়া যায়নি। অভিযোগের প্রেক্ষিতে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।