কুমিল্লার নদী খনন করে বালু বিক্রি, হুমকির মুখে তীরবর্তী ফসলী জমি সংক্ষুব্ধ জনতার ড্রেজারে হামলা

স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশ: ১ বছর আগে

কুমিল্লার তিতাসে, তিতাস নদী খননের অজুহাতে লক্ষ লক্ষ টাকার বালু বিক্রির অভিযোগ উঠেছে একটি সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে।
নদী অতিরিক্ত গভীর করে বালু উত্তোলনের কারনে তিতাস নদীর দুই পাড়ে ভাঙন দেখা দিলে, উপজেলা মজিদপুর, বন্দরামপুর ও একলারামপুর তিন গ্রামের সংক্ষুব্ধ হাজারো জনতা একত্রিত হয়ে একটি বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে ড্রেজার মেশিন, লোহার পাইপ ও ড্রামে ইটপাটকেল ছুঁড়ে মারতে দেখা যায়।
এ সময় ড্রেজার শ্রমিকদের সংক্ষুব্ধ জনতার রোষানলে ড্রেজারের লোহার পাইপ খোলতে দেখা গেছে।
নদীর বালু-মাটি দিয়ে দুইপাশের সুরক্ষা বাঁধসহ পানির লেভেল গভীর করার বিধান থাকলেও তা না মেনে প্রায় ১৮-২২ ফুট গভীর করে চুক্তিভিত্তিক টাকার বিনিময়ে জমি ভরাটের অভিযোগ উঠেছে ।
অপরিকল্পতি বালু-মাটি উত্তোলনের ফলে নদীর তীরবর্তী ফসলি জমির ভাঙনের সৃষ্টি হয়েছে। তাছারা পাশ্ববর্তী কড়িকান্দি-মজিদপুর রাস্তাও ভাঙনের কবলে পড়তে পারে বলেও স্থানীয়দের অভিযোগ।
নির্দেশনা অনুযায়ি নদী খননের মাটি ও বালু দিয়ে দুই পাড়ে শক্ত ও সুরক্ষা বাঁধ ও পানির লেভেল থেকে কোথাও ৮ কোথাও ১০ ফুট গভীর করার নির্দেশনা রয়েছে।
উপজেলা ভূমি অফিসের কর্মকর্তা কিংবা সার্ভেয়ারদের নির্ধারিত সীমানা ও সিডিউল অনুযায়ী নদী খনন করার কথা আছে কিন্তু তিতাস নদীর বন্দরামপুর ও কড়িকান্দি মৌজার একলারামপুর নামক স্থানে ড্রেজার বসানো হলেও নদী খননের কোন নিয়মনীতির তোয়াক্কা করা হচ্ছে না।
জমির মালিক নিজাম,নাছির উদ্দিন, বাচ্ছু মিয়া,জাহাঙ্গীর মুন্সী, হক সাহেব’সহ অনেকেই অভিযোগ করে বলেন, নদীর পানির লেভেল থেকে ১০ ফুটের যায়গায় প্রায় ১৮-২২ ফুট গভীর করে খননের ফলে আমাদের পৈত্রিক সম্পত্তি নদীগর্ভে বিলিন হবার পথে। অথচ আমাদের স্বার্থ জলাঞ্জলী দিয়ে নদী খননের নামে কোটি টাকার মাটি ও বালু বাণিজ্যের কাজ শুরু করেছে জেলা যুবলীগের সাবেক সদস্য নজরুল ইসলামসহ কিছু লোকজন।
টাকার বিনিময়ে বালু উত্তোলন করে রাস্তার পাশে একলারামপুর গ্রামের শাহাজুদ্দিনের জমি ভরট করে পাহাড়সম করছেন নজরুল ।
এখন নিষেধ করলে তারা সরকারি কাজের দোহাই দিচ্ছে। তিতাস নদী সংলগ্ন একলারামপুর এলাকায় ড্রেজার চালককে পাওয়া গেলেও তারা বিস্তারিত কিছুই জানাতে পারেনি। তারা বলেন আমরা হুকুমের গোলাম মাত্র। যা হুকুম আসে আমরা তাই করতে বাধ্য।
অভিযোগ সম্পর্কে কথা বলার জন্য অভিযুক্ত আলী:গ নেতা নজরুল ইসলামকে পাওয়া গেলে সে বলেন, ঠিকাদারের লোকজনকে আমরা বলেছি সঠিক মাপে সঠিক কাজ করার জন্য, তারা তা মানেনি । এর জবাব তারাই ভালো দিতে পারবে। আমি এর জন্য কোন দায়ভার নিতে রাজি নই। তাছাড়া বালু উত্তোলনে যে অংশ ভেংগে গেছে সে অংশ তাদের নয়,এটি নদীর যায়গা।
এ বিষয়ে তিতাস উপজেলা ইউএনও এটিএম মোর্শেদ বলেন, এ বিষয়ে আমি বিস্তারিত পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাথে কথা বলে সমস্যার সমাধান করার ব্যবস্থা গ্রহন করবো।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী খান মোহাম্মদ ওয়ালী উল্লাহ বলেন,নদীপথ সচল করতে ২০২০- অর্থবছরে তিতাস উপজেলার প্রায় ৪৫ কিলোমিটার তিতাস নদীসহ, খাল খনন ও ব্রিজের গোড়ায় ব্লক বিছানোর জন্য অনুমোদন দেয় পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। এ জন্য বরাদ্ধ দেওয়া হয়েছে প্রায় ৭৬ কোটি টাকা । গতবছর তিতাস নদী খননের কাজ শেষ হওয়া এবার খননের পেয়েছে রহমান ইঞ্জিনিয়ারিং ও নিয়াজ ট্রেডার্স ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এ কাজটির দায় দায়িত্ব তিতাস উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার। এ বালু ঠিকাদার বিক্রি করতে পারবে। এ জন্য আমরা সরকারি কোষাগারে ৪৯ লক্ষ টাকা জমা দিয়েছি। অতিরিক্ত গভীর প্রসংগে তিনি বলেন কাটার ড্রেজারে ১২ ফুটের নীচে বালু কাটার ক্ষমতা নেই, এটা জমি ওয়ালারা বাড়িয়ে বলছে।