কুমিল্লায় ওএমএস’র ট্রাকের লাইনে মানুষের সারি দীর্ঘ হচ্ছে, এনআইডি কার্ড ছাড়া পন্য দিতে নারাজ ডিলাররা, কর্তৃপক্ষ বলছে এরকম নির্দেশনা নেই

স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশ: ১ বছর আগে

দেশে যখন নিত্যপন্যের দাম দফায় দফায় লাগামহীনভাবে বেড়ে চলেছে । ঠিক তখনই জীবন সংগ্রামে বেঁচে থাকার তাগিদে অনেকে বাধ্য হয়ে দাঁড়াচ্ছেন ওএমএস’র লাইনে । তাইতো প্রতিনিয়ত কুমিল্লা নগরীর অলিগলিতে সারি সারি ওএমএস এর ট্রাকের সামনে লম্বা লাইনে দাড়িয়ে থাকতে দেখা যায়।দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়ে কিনছেন সাশ্রয়ী মূল্যের পণ্য ।

কিন্তু সেখানেও মনে হয় আরেক যুদ্ধ।লাইনের কোনো শৃঙ্খলা না থাকায় দীর্ঘ সময় অপেক্ষার পর খালি হাতে ফিরছেন অনেকে।অনেককে দেখা যায় দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে পায়ের হাটুতে ব্যাথা হয়ে যাওয়াই মাটিতে বসে পড়ে।একটু পর লাইনে গেলে তাকে বলা হয় পিছনের লাইনে দাঁড়ান ।

কুমিল্লা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের মতে, নগরীর মগবাড়ী চৌমুহনী, বিষ্ণুপুর মুন্সেফ কোয়ার্টার, কালিয়াজুড়ি, কাপ্তান বাজার, মোগলটুলি, গর্জনখোলা, মদিনা মসজিদ রোড, বাগিচাগাঁও, তালপুকুরপাড়, সোনালী জামে মসজিদ রোড, রাধারাণী রোড, মনোহরপুর, ২য় মুরাদপুর, সার্কুলার রোড, হাউজিং বখশী গলি রোড, কাঁটাবিল, ঢুলিপাড়া, নোয়াগাঁও চৌমুহনী, পদুয়ার বাজার, চাঙ্গিনী দক্ষিণ, সালমানপুর, ছোট ধর্মপুর, চৌয়ারাবাজারে ২৩ জন ডিলারের মাধ্যমে ৪৬০০ জনকে আটা ও ৯৭০০ জনকে চাল বিতরণ করা হয় । এছাড়াও প্রতিটি উপজেলায়ও এর কার্যক্রম চলছে ।

সরেজমিনে দেখা যায়,অনেকেই ওএমএস’র চাল ও আটা বিক্রি শুরু হওয়ার কয়েক ঘণ্টা আগেই নির্ধারিত স্থানে লাইনে দাঁড়াচ্ছেন। ডিলার অথবা ট্রাকসেল সবখানেই এখন দীর্ঘ লাইন দিয়ে বিক্রি হচ্ছে পণ্য। অনেক জায়গায় পণ্য নিতে হুড়োহুড়ি করছে মানুষ।এরপরও চাল কিনতে পারলে খুশি তারা।

এদিকে অনেক ডিলাররা ওএমএস’র পণ্য কিনতে ক্রেতার জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি (এনআইডি) নিচ্ছেন।অন্যথায় তাদের পণ্য দেয়া হচ্ছে না।

গর্জন খোলার ডিলার জুয়েল আহাম্মদ বলেন, এনআইডি কার্ড নিয়ে পণ্য দেয়া হচ্ছে। এনআইডি কার্ড নিচ্ছি লাইন ঠিক করার জন্য। ভোটার ছাড়া যারা তাদের আমরা দেই না। দেয়া নিষেধ। ভোটার ছাড়া কেন পণ্য দেয়া হয় না জানতে চাইলে তিনি বলেন, অনেক সময় লাইনে একই পরিবারের অনেকেই দাঁড়ায়। বাবা-মায়ের সঙ্গে তার সন্তানও লাইনে দাঁড়ায়। তখন এক পরিবারে ৩ জন পণ্য নেয়। তাই একটা পরিবার থেকে যাতে ১ জন পণ্য নিতে পারে সেজন্য আমরা এনআইডি নিচ্ছি।

তালপুকুর পাড় ওএমএস’র ট্রাক ডিলার রাজন কুমার বলেন, ওপরের নির্দেশ মোতাবেক আমরা এনআইডি কার্ড নিচ্ছি। অফিস থেকে নির্ধারণ করে দিচ্ছে আমাদের। আমাদের থেকে পণ্যটা যে নিলো সেটার প্রমাণ। এটা অফিসে জমা থাকে।

বাগিচাগাঁও বড় মসজিদ রোডের ওএমএস’র ট্রাক ডিলার ইকরাম উল্লাহ চৌধুরী বলেন,সে রোহিঙ্গার লোক কিনা তা যাচাই-বাছাই করার জন্য আমরা এনআইডি কার্ড নেই।সে প্রকৃত লোক হলে তাকে পণ্য দিতে আমরা না করিনা।সকাল ৯টা থেকে নামাজের আগ পর্যন্ত সবাইরে দিছি।

৪ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা শাহআলম পণ্য কিনতে এসে বলেন, ডিলাররা ভোটার আইডি নিচ্ছে। ওএসএস’র পণ্য নেয়ার জন্য ভোটার আইডি নেয়ার তো কোনো প্রয়োজন নেই। নিয়মিত ক্রেতা হিসেবে কার্ড করার জন্য এনআইডি নিতে পারে। কিন্তু প্রতিদিন পণ্য কেনার জন্য এনআইডি কার্ড নেয়া তো ঠিক না।

শরীফ নামের এক লোক বলেন, ট্রাকের লাইনে দাঁড়িয়ে আছি। লজ্জা করছে। কিন্তু তাও বাধ্য হয়ে কিনতে হচ্ছে।প্রাইভেট কোম্পানিতে যে টাকা পাই তা দিয়ে সংসার চলতে কষ্ট হয়ে যায়।এখান থেকে কিনে যদি একটু খরচ বাঁচানো যাই তাই আমার উপকারে আসবে।

কান্দিরপাড় সোনালী ব্যাংকের সাথে ওমএসএস’র চাল-আটা দেয়া হচ্ছে। লম্বা লাইনে কোনো কাগজপত্র ছাড়াই পণ্য মিলছে। তবে দীর্ঘ লাইন হওয়ায় ধাক্কাধাক্কি করছে অনেকে। লক্ষ্য করা গেছে নারীদের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনাও ঘটেছে। বৃদ্ধদের ধাক্কা মেরে লাইন থেকে বের করে দেয়া হচ্ছে। ডিলাররা নানা চেষ্টায়ও লাইন ঠিক করতে পারছেন না।

রাজগঞ্জ দুধ বাজারের পাশেই কুলসুমের আক্তারের বাড়ি সে আটা কিনতে এসে জানান, আমি সকালে আসছি। কয়েকবার লাইনে দাঁড়িয়ে নিতে পারিনি। ধাক্কা খেয়ে ফেরত আসছি। তিনি বলেন, অনেকে প্রতিদিন এসে আটা নেয়। আর আমরা একদিন এসেই পাই না। খালি হাতে ফিরে যাই। আসলে এরা মুখ চিনে চিনে আটা দেয়। কেউ কেউ একদিনে দু’বার করেও নিতেছে। কিন্তু আমি সেই সকাল থেকে এসে বসে আছি, এখনো নিতে পারিনি।

বৃদ্ধা এক বয়স্ক নারী বলেন, এখান থেকে চাল কিনতে পারলে ১০০ টাকা কম দাম পড়ে,আটায় ৬০ টাকা। আমরা গরিব মানুষ। এটা আমাদের জন্য অনেক কিছু।

একাধিক নারী-পুরুষ জানান,নির্ধারিত স্থানে ডিলাররা ট্রাক দেরিতে আনে।লাইনে দাঁড়ালেও সবার ভাগ্যে চাল-আটা জোটে না। কেউ কেউ চাল পেলেও অনেকে আটা পাননি। প্রতিদিনই অনেককে খালি হাতে ফিরতে হয়। তবে বিক্রয়কর্মীদের কিছু বাড়তি টাকা দিলেই বেশি পণ্য দেয়া হয় বলে অভিযোগও রয়েছে। এ ছাড়া পরিচিত লোকদের কাছে কৌশলে পণ্য বিক্রি করে দেন ডিলারের কর্মীরা এমন তথ্য দিয়েছেন ক্রেতারা।

কুমিল্লা জেলা খাদ্যনিয়ন্ত্রক এসএম কায়ছার আলী জানান,একই ব্যক্তি যাতে ২ বার চাল অথবা আটা নিতে না পারে তার জন্য প্রয়োজনে ভোটার আইডিকার্ড নিয়ে রাখার নির্দেশন আছে।তার মানি এই নয় ভোটার আইডিকার্ড ছাড়া তাকে পণ্য দেওয়া যাবেনা।যে সকল ডিলাররা এসকল কাজ করে থাকে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।