জানা যায়, কুমিলার কিশোর গ্যাংয়ের উৎপাতে নগরবাসীর পাশাপাশি উদ্বিগ্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। গত দুই বছরে গ্যাং কালচার চরম আকার ধারণ করেছে। জেলা গোয়েন্দা শাখা ও কোতোয়ালি মডেল থানা পুলিশের নিষ্ক্রিয়তায় গ্যাং গ্র“পগুলো বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। নগরীর প্রতিটি অলিগলিতে নতুন নতুন গ্যাং সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে। পাড়া-মহলা ও ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে নিজেদের আধিপত্য, চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধ কর্মকাণ্ড পরিচালনার লক্ষ্যে এসব কিশোর গ্যাংকে পৃষ্ঠপোশকতা করছে বড় ভাই খ্যাত বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রভাবশালী নেতারা। ফলে একসময়ের শান্তির কুমিলায় এখন প্রতিটি অলিগলিতে কিশোর গ্যাং আতঙ্ক বিরাজ করছে।সূত্র জানায়, গত দুই বছরে কিশোর গ্যাং সদস্যদের হাতে খুন হন নগরীর মোগলটুলী এলাকার শিক্ষার্থী আজনাইন আদিল, মডার্ন স্কুলের ছাত্র মুমতাহিন হাসান মিরণ, অটোরিকশাচালক শাহজাহান, নগরীর দিশাবন্দ এলাকার শিক্ষার্থী সাজ্জাতুল ইসলাম অনিক, কুমিলা অজিতগুহ কলেজের ছাত্র অন্তু, ব্রিটানিয়া ইউনিভার্সিটির বিবিএ প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী শাহজাদা ইসলামসহ বেশ কয়েকজন। আলোচিত এসব হত্যা মামলার আসামিরা জামিনে বেরিয়ে এসে ফের তৎপরতা চালাচ্ছে। তাদেরকে এলাকার মানুষ আরও বেশি ভয় পাচ্ছে। বিশেষ করে বড় ভাইদের কাছে তাদের কদর বেড়েছে। এতে হত্যার মতো কর্মকাণ্ডে উৎসাহ বাড়ছে গ্যাং সদস্যদের।
পুলিশের বিশেষ একটি সূত্র জানায়, নগরীর এসব গ্যাং দমনে বিশেষ পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। কিশোর গ্যাং সদস্য ও মদদদাতাদের শনাক্তে গোয়েন্দা সংস্থা এনএসআই মাঠে কাজ করছে। নবাগত পুলিশ সুপার আব্দুল মান্নান যোগদানের পূর্বমুহূর্তে রতন গ্যাংয়ের হাতে খুন হন ঈগল সদস্য কিশোর শাহাদাত। তাই পুলিশ সুপার প্রথম কার্যদিবস থেকেই গ্যাং দমনের পরিকল্পনা নিয়েছেন। তিনি অভিযান পরিচালনার আগে গ্যাংগুলোর কর্মকাণ্ড এবং তাদের শিকড় যাচাই করছেন।
সূত্র জানায়, কুমিলার কিশোর গ্যাংয়ের তৎপরতায় উদ্বিগ্ন খোদ পুলিশ সদর দপ্তর। ইতোমধ্যেই এসব গ্যাং দমনে কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তাদের অবস্থান শনাক্ত করে নেপথ্যের প্রভাবশালীদের নামের তালিকাসহ পুলিশ সদর দপ্তরে পাঠানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে জেলা গোয়েন্দা শাখার একজন পরিদর্শক জানান, পুলিশ সদর দপ্তর কুমিল্লার কিশোর গ্যাং এবং তাদের নেপথ্যের প্রভাবশালীদের তালিকা চেয়েছে। আমরা পাড়া-মহলায় ঘুরে ঘুরে গ্যাংগুলোর তালিকা তৈরি করছি।
কুমিলা জেলা গোয়েন্দা শাখার ওসি আবুল কায়েস আকন্দ বলেন, কিশোর গ্যাং নির্মূলে আমরা নানামুখী পদক্ষেপ হাতে নিয়েছি। এজন্য নতুন পুলিশ সুপার মহোদয় আমাদের সার্বিক নির্দেশনা দিচ্ছেন। গ্যাং দমনে কঠোর অভিযান পরিচালনা করা হবে। আশা করি শিগগিরই কুমিলা থেকে এসব গ্যাং নির্মূল হবে।