কুমিল্লায় চাহিদার শীর্ষে নোয়াখালীর ডাব

সুজন মজুমদার ।।
প্রকাশ: ১ বছর আগে

কুমিল্লায় সাধারণ ক্রেতাদের ক্রয় সীমার নাগালের বাহিরে চলে গেছে ডাব। গরমকালে স্বাভাবিক ভাবেই ডাবের চাহিদা বেশি থাকে। এবার গরমকালের সাথে যোগ হয়েছে রোজা। অনেক রোজাদার ব্যক্তিই ইফতারির সময় ডাব খেতে চান। তাই এক দিকে যেমন বর্তমানে কুমিল্লায় ডাবের চাহিদা বাড়ছে অপর দিকে কমছে না দামও। ৭০ টাকার নিচে নগরীতে পাওয়া যাচ্ছে না কোন ডাব। তাই এত বেশি দাম দিয়ে খেতে পারছে না সাধারণ মানুষ।
তবে কুমিল্লায় বিক্রি হওয়া অধিকাংশ ডাবই নোয়াখালীর। কুমিল্লার ডাব দেখতে ছোট পানি কম। অপরদিকে নোয়াখালীর ডাব দেখতে বড় ও পানিও বেশি। তাই এই ডাবের চাহিদাও বেশি নগর কুমিল্লায়, জানিয়েছেন নগরীর একাধিক ডাব বিক্রেতা।
মেহেদী হাসান, বয়স ১৬ কিংবা ১৭ বছর। একজন খুচরা ব্যবসায়ী। অল্প বয়সে সংসারের হাল ধরেছেন। পড়াশোনা বেশি করেন নাই। এই সময় স্কুলে থাকার কথা কিন্তু সংসারের ব্যায় মিটানোর জন্য ভ্যানে করে প্রতিদিন টমছম ব্রীজ থেকে মেডিকেল কলেজ এরিয়া যখন যেখানে জায়গা পায় সেখানে খুচরা ডাব বিক্রি করেন।
মেহেদী বাবা-মার সাথে ছোটবেলা চান্দিনা উপজেলা থেকে কুমিল্লা চলে আসেন। পরিবারে মা-বাবা ও ছোট ভাই-বোন সহ মোট পাঁচ সদস্য। মেহেদীর বাবাও খুচরা ডাব বিক্রেতা।
মেহেদী সাথে কথা বলে জানাযায়, প্রতিদিন গড়ে ৩০-৪০ পিচ ডাব বিক্রি করেন। ডাবগুলো নোয়াখালী কিংবা নিমসার থেকে আনা হয়। প্রতিটি ডাব পাইকারি হিসাবে ৫০-৬৫ টাকা হারে ক্রয় করে থাকে। খুচরা বিক্রি করেন ৭০-৯০ টাকা। গরমকাল ও রোজা হওয়াতে ডাবের চাহিদা বাড়ছে, মানুষ তৃষ্ণায় মিটানোর জন্য ডাব খাচ্ছে। এখন যেহেতু রমজান, দিনের বেলা ডাব বিক্রি একটু কম। মেহেদী সহজ সরল ভাষা বলে, ডাবের দাম বেশি, অনেকে দাম বেশি শোনলে চলে যায়।
কুমিল্লা মেডিকেল কলেজের সামনে মোহাম্মদ আলী খুচরা ডাব বিক্রি করেন। প্রতিদিন ৫০টির বেশি ডাব বিক্রি করেন। ডাক্তারা রোগীদের বেশি সময় ডাবের পানি খেতে বলেন। প্রতিটি ডাব ৭০ টাকা থেকে শুরু করে ১০০টাকা পর্যন্ত বিক্রি করেন। তিনি নোয়াখালী ডাব বিক্রি করেন। কুমিল্লার ডাব কেন বিক্রি করেন না? এমন প্রশ্নের জবাবে ডাব বিক্রেতা মোহাম্মদ আলী বলেন, কুমিল্লার ডাব পাওয়া যায় কম, কুমিল্লা ডাব আকারে ছোট ও পানি কম হয়। নোয়াখালী ডাব ভালো পড়ে। হসপিটালের সামনে ডাব একটু বেশি বিক্রি হয়, ক্রেতারা রোগীর জন্য ডাব কিনে এবং নিজস্ব তৃষ্ণা মেটানোর জন্য ডাব কিনে। রমজানে ক্রয় বিক্রয় একটু কম হলেও ইফতারি করার জন্য ডাব বেশি বিক্রি হয়।
নাফিস হোসেন, বাড়ি চাঁদপুর। এক আত্বীয় কুমিল্লা সরকারি মেডিকেল হসপিটালে ভর্তি। রোগীর জন্য ডাব কিনতে এসে বলেন, ডাবের দাম বেশি। একটি ডাবের দাম যদি ৮০/১০০ টাকা হয়, এটি বেশি হয়।
কুমিল্লাতে খুচরা ডাব বিক্রতেরা মিজানুর রহমান বলেন, আমরা নোয়াখালী থেকে প্রতিদিন পাইকারি হিসাবে কিনে এনে খুচরা বিক্রি করি। বেশিসময় নোয়াখালী ডাব আনা হয়। নোয়াখালী ডাব দেখতে ভালো এবং বেশি পাওয়া যায়। কুমিল্লা ডাব সাইজ দেখতে ভালো নয়, পাওয়া যায় না কিন্তু খেতে খুবই টেস্ট।
কুমিল্লা শহরে কান্দিরপাড়, রাজগঞ্জ, রাণীর বাজার, চকবাজার, শাসনগাছা ও টমছম ব্রীজসহ কুমিল্লা নামকরা প্রায় সকল হসপিটালের সামনে খুচরা ডাব বিক্রি হয়।
কুমিল্লার পাইকারি বিক্রেতা শিব নারায়ণ শাহ বলেন, নোয়াখালীতে থেকে সপ্তাহে ২/৩ বার ডাব এনে আমরা কুমিল্লায় খুচরা বিক্রেতার কাছ থেকে বিক্রি করি। আমরা ডাব শ (একশত) হিসাবে ৫০-৬০ টাকা কিনে খুচরা বিক্রেতার কাছে ৬০-৭০ টাকা বিক্রি করি। তারপর খুচরা বিক্রেতারা ৬০-১০০টাকা বিক্রি করে। ডাবের উপকারিতা সম্পর্কে কুমিল্লা আদর্শ হসপিটালের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডাঃ জামাল হোসেন ফরহাদ বলেন, ডাবের উপকারিতা ও অপকারিতা দুইটি আছে। তবে উপকারিতা বেশি। দেহে পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, পানি ও খনিজ পদার্থের ঘাটতি দেখা দিলে ডাবের পানি পান করা উত্তম। এই ছাড়া বিভিন্ন রোগের প্রধান ঔষুধ হিসাবে কাজ করে ডাবের পানি। যেমন- ডায়রিয়া বা কলেরা রোগীদের ঘনঘন পাতলা পায়খানা ও বমি হলে ডাবের পানি খুবই কার্যক্রর ভূমিকা পালন করে। অন্যদিকে কিডনি রোগীদের ডাবের পানি পান করলে পটাসিয়াম বেড়ে যায়, তাই ডাবের পানি পান না করাই ভালো।